আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল হওয়ায় জেএসসি-এসএসসির ফলাফলের সঙ্গে মিলিয়ে (ম্যাপিং) ফল প্রকাশের প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এই ফল প্রকাশের জন্য এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার নম্বরপত্র-প্রবেশপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্য জমা দিতে জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। গতকাল বুধবার ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আবুল বাশার স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ৩০ জুন। তবে বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হয় ৯ জুলাই। এরপর কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে ১৬ জুলাই রাতেই সারা দেশে স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিকসহ সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলে ১ আগস্ট পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিকের সব পরীক্ষা স্থগিত করে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ৪ অগাস্ট থেকে পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবার কথা ছিল। কিন্তু সেই পরীক্ষাগুলোও স্থগিত হয়ে যায়। বার বার স্থগিতের পর ১১ অগাস্ট থেকে নতুন সূচিতে পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু সরকার পতনের পর সহিংসতায় বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রশ্নপত্র পুড়ে গেলে পরীক্ষা ফের স্থগিত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্থগিত পরীক্ষাগুলো আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল, সে জন্য নতুন সূচিও প্রকাশ করেছিল কর্তৃপক্ষ; কিন্তু এর মধ্যে পরীক্ষা দিতে অনাগ্রহী শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। পরে অন্তর্বর্তী সরকার তা আরও আরো দুই সপ্তাহ পিছিয়ে অর্ধেক প্রশ্নে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ২০ আগস্ট পাঁচ শতাধিক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ঢুকে পরীক্ষা না দেওয়ার দাবি তোলে। পরে সেদিনই সরকার তাদের দাবি মেনে নেয়। এরপর শিক্ষা বোর্ডগুলোর কর্মকর্তারা বৈঠকে বসে দেড় মাসের মধ্যে ফল প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত নিলেও স্থগিত পরীক্ষার মূল্যায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে পারেননি। এর আগে কোভিড মহামারির সময় উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষা নিতে না পারায় আগের ফলাফলের ভিত্তিতে ‘অটোপাস’ দিয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। এবারের মূল্যায়ন ফল প্রকাশের জন্য ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার অ্যাকাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট, এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্রের সত্যায়িত ফটোকপিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব পরীক্ষাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও অধ্যক্ষদের বোর্ডে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আসা ছয় দফা নির্দেশনা : ১৯৯৬ সালের আগে এসএসসি পাস করা প্রাইভেট পরীক্ষার্থীদের এসএসসি পাসের নম্বরপত্রের ফটোকপি (সংশ্লিষ্ট বোর্ড যাচাইকৃত) এবং এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪-এর প্রবেশপত্রের ফটোকপি অধ্যক্ষের সত্যায়ন করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা-এর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শাখায় হাতে হাতে জমা দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষার্থীদের তালিকা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শাখা থেকে সংগ্রহ করতে হবে। এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪-এর সমতুল্য সনদধারী পরীক্ষার্থীদের জেএসসি-সমমান (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও এসএসসি-সমমান পরীক্ষার একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট-নম্বরপত্র (নম্বর/গ্রেড পদ্ধতির প্রমাণক কাগজ পত্রসহ), ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সমতুল্য সনদ এবং এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪-এর প্রবেশপত্রের ফটোকপি অধ্যক্ষের কাছ থেকে সত্যায়ন করে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শাখায় হাতে হাতে জমা দিতে হবে।
যেসব পরীক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেএসসি-সমমান ও এসএসসি-সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের জেএসসি-সমমান ও এসএসসি-সমমান পরীক্ষার একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট এবং এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪-এর প্রবেশপত্রের ফটোকপি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-অধ্যক্ষের কাছ থেকে সত্যায়ন করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা শাখায় হাতে হাতে জমা দিতে হবে।
সব পরীক্ষার্থীর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি, বিষয় কোড-২৭৫) বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বর (শ্রেণি কার্যক্রম চলাকালে প্রাপ্ত) অনলাইনে পাঠিয়ে এর প্রিন্ট কপি কেন্দ্রে সংরক্ষণ করতে হবে এবং মূল কপি (ঋরহধষ খরংঃ) ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শাখায় হাতে হাতে জমা দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই ব্যবহারিক পরীক্ষার অজুহাতে পরীক্ষার্থীদের কলেজে আনা যাবে না। অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক অনুপস্থিত ও বহিষ্কৃত পরীক্ষার্থীদের তালিকা ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শাখায় হাতে হাতে জমা দিতে হবে। অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক স্বাক্ষরলিপি এক কপি কেন্দ্রে সংরক্ষণ করে মূল কপি ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শাখায় হাতে হাতে জমা দিতে হবে।
ভোরের আকাশ/ সু