শতবর্ষ আগে কারা ভিন্ন স্বাদের এই মিষ্টান্নটি গাইবান্ধায় তৈরি শুরু করেন তা সঠিকভাবে বলা মুশকিল। তবে ১৯৪৮ সালের ২৮জুন থেকে রমেশ ঘোষ নামে এক মিষ্টি ব্যবসায়ী রসমঞ্জরীকে অবয়ব, স্বাদ ও কলেবরে পাল্টে জনপ্রিয় করে তোলেন। রসমঞ্জরীর জয়যাত্রা নতুন করে তখন থেকেই শুরু। এখন জেলার সব মিষ্টির দোকানেই রসমঞ্জরী তৈরি হয়। রমেশ ঘোষ ঘরানার রেসিপিই মুলত অনুসরণ করেন তারা। শুধু জেলা শহরেই প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫মণ রসমঞ্জরী তৈরি হয়। দোকান সংলগ্ন কারখানায় চাহিদা অনুযায়ী তৈরি হতে থাকে মিষ্টান্নটি। পছন্দের দোকানে বসে রসমঞ্জরীর স্বাদ নেন স্থানীয় এবং বাইরে থেকে আসা মানুষ। প্যাকেটবন্দি হয়ে তা চলে যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি বিদেশেও। তাদের দাবি স্বাদে বৈচিত্রে রসমঞ্জরী একান্তই গাইবান্ধার সম্পদ। অন্য কোনো মিষ্টির সাথে যার তুলনা হয় না।
জেলার বিভিন্ন চর ও বিশেষ করে সাদুল্লাপুর উপজেলার দুধই পুরণ করছে গাইবান্ধার মিষ্টির দোকানগুলোর চাহিদা। অনেক আগে গাইবান্ধার হোটেল গুলোতে হাতে তৈরী হতো রসমঞ্জরীর গুটি (মঞ্জরী) তবে স্বাস্থ্যসম্মত করার জন্য এখন অনেক দোকানে মেশিনে গুটি তৈরী করা হয়। তারপর তা দুধে মেশানো হয়। স্থানীয় মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠান গুলো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করছে রসমঞ্জরী। অনেকে কুমিল্লার রসমালাইয়ের সাথে রসমঞ্জরীকে গুলিয়ে ফেলছেন দাবি স্থানীয়দের। অনন্য স্বাদের রসমঞ্জরীর জিআই স্বীকৃতি দাবি করছেন তারা।
মিষ্টি ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি বলেন, রসমঞ্জরীর বৈশিষ্ট্য অন্য এলাকার একই ধরনের মিষ্টির চাইতে আলাদা। তিনি বললেন দুগ্ধজাত পণ্য হওয়ায় প্যাকেট করে বাজারজাতকরণ সম্ভব হচ্ছে না। সরকারি সাহায্যে প্রযুক্তি পেলে এই মিষ্টান্নকে সারাদেশে কিংবা বিদেশে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব। তাতে রাজস্ব আয়ও বাড়বে।
রসমঞ্জরী তৈরিতে প্রয়োজন গরুর খাঁটি দুধ, চিনি,ময়দা, দুধের ছানা ও ছোট এলাচ। গরুর দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন ক্ষীর তৈরী করা হয়। তাতে মেশানো হয় পরিমাণমতো চিনি। ছানায় সামান্য ময়দা মিশিয়ে অনেক সময় ধরে মাখতে হয় । তৈরী ছোট ছোট গোলাকার গুটি (মঞ্জরী) চিনির সিরায় জ্বাল দিয়ে বাদামী রং হলে সেগুলো ক্ষীরে মেশানো হয়। গুটিগুলো ঘন ক্ষীরে মঞ্জুরিস্থ হয়ে দুটি ভিন্ন স্বাদের সমন্বয়ে সৃষ্টি করে তৃতীয় মাত্রার অপূর্ব স্বাদ। তাই এ মিষ্টির নাম রসমঞ্জরী।
ভোরের আকাশ/ সু