স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসরদের ছাড় দেওয়া মানে শহীদদের রক্তের সঙ্গে প্রতারণা করা বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে একাধিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। তারা বলেন, শেখ হাসিনা ও তার দোসররা এখনো নানাভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করা চেষ্টা করছে। তাই দেশবাসীকে তারা সতর্ক থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতবার রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমাদের দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করায় যারা দায়ী, তার মধ্যে অন্যতম নির্বাচন কমিশন। সাংবিধানিক ব্যবস্থা লঙ্ঘন করার জন্য যারা দায়ী, তাদের আইনের মাধ্যমে বিচার দাবি করছি। এরা স্বৈরাচারের দোসর। এদের ছাড় দিলে শহীদরা কষ্ট পাবে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, এক ভয়াবহ দানবের পতন হয়েছে পৃথিবী কাঁপানো শিশু-কিশোরদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। এ আন্দোলন ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে আসছে বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও সমমনা জোটগুলো। ৫ আগস্টের একটি পটভূমির মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন হয়েছে।
রিজভী বলেন, আমাদের দল এমন একটি রাজনৈতিক দল, যার সঙ্গে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের গভীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে আমাদের।’ তিনি বলেন একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা অতীতে আঁতাত করা যাদের রেকর্ড আছে তারা ক্ষমার কথা বলছেন। গণহত্যাকারীদের কিসের ক্ষমা? গণহত্যাকারীদের ও গণহত্যায় জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ জড়িতদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। এখনো সকল অফিস আদালতে শেখ হাসিনার প্রেতাত্মা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর লোকদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে যা জনগণের নজরে এসেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালের সব গণমাধ্যম বন্ধ করেছিল, শুধুমাত্র চারটি পত্রিকা রেখে আওয়ামী লীগ বাকশাল কায়েম করেছিল। এবার ভিন্নরূপে বাকশাল কায়েম করেছিল আওয়ামী লীগ। পত্রিকা বন্ধ করেনি, (তবুও দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, আমার দেশ, দিনকাল বন্ধ করেছে) কিন্তু মালিকানা দিয়েছে আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠদের, তারা সারাক্ষণ আওয়ামী লীগের প্রচারমাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। গণমাধ্যমের মূল কাজ সত্য উদ্ঘাটন করে নিষ্ঠাবস্তু খবর পরিবেশন করা। এটাই গণতন্ত্র। এর বাহিরে গেলে সেটা গণমাধ্যম নয়, প্রচারমাধ্যম বা স্বৈরাচারের ডাণ্ডা।
এদিকে, দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরামের উদ্যোগে ‘অন্তর্বর্তী সরকার এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের ষড়যন্ত্র শীর্ষক’ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আবু সাঈদের রক্তের গন্ধ এখনো শুকায়নি এর মধ্যেই এই অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাদের অশান্তিতে রাখার আলামত আমরা দেখতে পাচ্ছি। ড. ইউনূস সরকারকে এখনো রাজনৈতিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার চক্রান্ত চলছে। এখনো শেখ হাসিনার বান্ধবীরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে বসে আছেন। বিএনপি অফিস ভাঙার নায়ক, হারুন বিপ্লবরা কোথায়? এই মহানগরে এখনো অনেক অসৎ পুলিশ কর্মকর্তা বহাল তবিয়তে। আমি বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ জানাবো এদের যদি আইনের আওতায় না নিয়ে আসেন মানুষ হতাশ হবে। মানুষ কষ্ট পাবে।
শেখ হাসিনার ক্ষমা নেই মন্তব্য করে ফারুক বলেন, খুনি হাসিনার ক্ষমা নেই। খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে এনে বিচার করতে হবে। বাংলাদেশে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা শেখ হাসিনার নির্দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুলি চালিয়েছে তাদের মধ্যে যারা এখনো বহাল তবিয়তে আছে কার কাছে আছে জানি না তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে ছাত্র সমাজের যারা আত্মহুতি দিয়েছে শান্তি পাবে না।
সংগঠনের সভাপতি সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপির সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরা, ওলামা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন, ইয়ুথ ফোরামের উপদেষ্টা এম নাজমুল হাসান, মৎস্যজীবী দলের ইসমাইল হোসেন সিরাজী, মাইনুউদ্দীন মজুমদার, আমির হোসেন বাদশা উপস্থিত ছিলেন।
ভোরের আকাশ/মি