রাজধানীর ওয়ারী থানার হাটখোলায় ফ্ল্যাট নিয়ে বিরোধের জেরে সহোদরসহ খুন হওয়া সাংবাদিক আল আমিন ভূঁইয়া হত্যায় জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার চায় তার পরিবার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা হলে তারা ভোরের আকাশকে এমন দাবির কথা তুলে ধরেন। পুলিশ বলছে, আসামিদের খুব শিগগির আইনের আওতার আনা যাবে।
জানা গেছে, গত ১৪ আগস্ট রাজধানীর ওয়ারীর হাটখোলা এলাকায় ফ্ল্যাট নিয়ে বিরোধের জেরে খুন হন বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সাংবাদিক আল আমিন ভূঁইয়া (৪০) ও তার সহোদর কাপড় ব্যবসায়ী নুরুল আমিন ভূঁইয়া (৩৫)। এই ঘটনায় নিহতদের বড় ভাই মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়া যে জমিতে ফ্ল্যাট নির্মাণ হওয়ার পর তারা কিনেছিলেন, তার মালিক আজগর আলী, আকবর আলী, ক্লাসিক ডেভেলপার কোম্পানির মালিক রিপনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ওয়ারী থানা পুলিশ ওই সময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন তারা ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। সেখান থেকে খুনিদের শনাক্ত করে শিগগির তারা আইনের আওতায় আনবেন।
হত্যার ঘটনার দুই সপ্তাহ পার হওয়ার পর মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়া বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভোরের আকাশকে বলেন, ওয়ারী থানা পুলিশ আমার দুই ভাই খুন হওয়ার পর আমাকে থানায় ডেকে সেইদিনের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়েছিল। সেখানে আমি স্পষ্ট দেখি প্রায় দেড় বছর আগে যেখানে আমরা ফ্ল্যাট কিনেছিলাম সেই জমির মালিক আকবর, আজগর আমার দুই ভাইকে সরাসরি ধাঁরালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কোপোচ্ছে। আজগরের ছেলে তার সাঙ্গপাঙ্গরা সরাসরি হত্যায় অংশ নেয়। আল আমিন ও নুরুল আমিনের মৃত্যু নিশ্চিত করার পর তারা থামে। পরে খবর পেয়ে আমরা আল আমিন ও নুরুল আমিনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।
রুহুল আমিন জানান, এক সময় তার ছোট ভাই আল আমিন ওয়ারী থানার ৪১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার কারো সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ ছিল না। আর মামলার আসামিরা স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, সরকার পতনের পর তারা এখন পলাতক আছেন বলে শুনেছি। তাছাড়া ওয়ারী থানার অবস্থাও তেমন ভালো না। তাই হয়তো পুলিশের আসামি ধরতে দেরি হচ্ছে। তবে আমাদের আস্থা আছে। আমরা বিশ^াস করি, পুলিশ আসামিদের আইনের আওতায় আনবে। তবে আমরা চাই, সেটা দ্রুততম সময়ের মধ্যেই হোক।
সাংবাদিক আলা আমিন ভূঁইয়া যেদিন খুন হন সেদিন তার স্ত্রী মুনমুন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, আমরা প্রায় দেড় বছর আগে রিপন নামে ডেভেলপার (ফ্ল্যাট) ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা দিয়ে পারিবারিকভাবে ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। ফ্ল্যাট রেডি হলেও তা বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছিল না। এসব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। সকালে আমার স্বামী হাটখোলা এলাকায় গিয়েছিলেন ওই ফ্ল্যাটের ওখানে। এসব নিয়ে বিরোধে রিপন তার লোকজন নিয়ে আমার স্বামী ও তার ভাইকে হত্যা করেছে।
বৃহস্পতিবার আল আমিন ভূঁইয়ার একমাত্র কন্যা মারজান আমিন (১৫) ভোরের আকাশকে বলেন, বাবা, চাচা দুইজন একসঙ্গে খুন হয়েছেন। আমরা মামলাও করেছি। তবে এখনো খুনিদের কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। আমরা এই খুনের বিচার চাই।
ওয়ারী থানার ওসি ফয়সাল আহমেদ ভোরের আকাশকে বলেন, দুই ভাই খুনের ঘটনায় যে মামলা হয়েছিল তার বাদী আমাদের থানায় এসেছিল। আমরা তার সঙ্গে কথা বলেছি। যারা খুনে জড়িত ছিল এরই মধ্যে পুলিশ তাদের শনাক্তও করেছে। খুব শিগগির তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে আশা করা যেতে পারে।
ভোরের আকাশ/ সু