ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের জিরিবাম ও বিষ্ণুপুর জেলায় দফায় দফায় ড্রোন ও রকেট হামলার ঘটনায় ভয়াবহ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই দুই জেলায় ড্রোন ও রকেট হামলার পাশাপাশি গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ছয়জন নিহত ও আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। আকাশে একের পর এক ড্রোন উড়তে দেখে আতঙ্কিত বাসিন্দারা তাদের বাড়িঘরে ভীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, শুক্রবার রাতে মণিপুরের বিষ্ণুপুর ও ইম্ফল পূর্ব জেলার আকাশে বহু ড্রোন দেখতে পান বাসিন্দারা। এ সময় তাদের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে এই দুই জেলার বাসিন্দারা ঘটনার সময় তাদের বাড়িঘরের লাইট বন্ধ দেন। ভয়ে কেউই বাড়ির বাইরে বের হতে পারেননি রাতে।
ইম্ফল পশ্চিম জেলার আশপাশের দুটি স্থানে ড্রোন থেকে বোমা ফেলেছেন সেখানকার বিদ্রোহীরা। এই ঘটনার পর বিষ্ণুপুর ও ইম্ফল পূর্ব জেলার আকাশে অনেক ড্রোন উড়তে দেখেছেন বাসিন্দারা।
মণিপুরের সরকারি এক কর্মকর্তা বলেছেন, নতুন করে দেখা দেওয়া সংঘাতপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। তারা বেশিসংখ্যক মানুষের একসাথে চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপের পাশাপাশি পর্যবেক্ষণ করছেন।
বিষ্ণুপুর জেলার একাধিক এলাকায় আকাশে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়েছে। গুলির এই ঘটনা জনসাধারণের মাঝে চরম আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। তবে নিরাপত্তা বাহিনী নাকি অন্যরা গুলি চালিয়েছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে, শুক্রবার মণিপুরের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী মাইরেম্বাম কোইরেংয়ের বাসভবনে রকেট হামলা চালায় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। এতে একজন নিহত ও ছয়জন আহত হন। এদিকে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পার্শ্ববর্তী চুরাচাঁদপুর জেলায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যবহৃত তিনটি বাঙ্কার ধ্বংস করেছে।
মণিপুর পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিষ্ণুপুর জেলার দুটি স্থানে বেসামরিকদের লক্ষ্য করে দূর-পাল্লার রকেট নিক্ষেপ করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। এতে বয়স্ক এক নাগরিক নিহত ও ছয়জন আহত হয়েছেন। পুলিশ বলছে, রাজ্যের চলমান সংঘাতে সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে টহল দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় উচ্চ-পর্যায়ের জরুরি নিরাপত্তা বৈঠক ডেকেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
তবে মণিপুরে প্রথম ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে গত ১ সেপ্টেম্বর। ওই দিন ইম্ফল পশ্চিম জেলার কৌত্রুক গ্রামের কাছে ড্রোন থেকে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। সেদিন ড্রোন থেকে বোমা হামলার পাশাপাশি গ্রামে বন্দুক হামলাও চালানো হয়। এতে অন্তত দু’জন নিহত ও ৯ জন আহত হন।
গত বছরের মে মাসে মণিপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতে সম্প্রদায় এবং কুকি-জো উপজাতিদের মধ্যে সহিংসতা শুরু হয়। ওই সহিংসতায় দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ও প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। এরপর রাজ্যজুড়ে থেমে থেমে সহিংসতা চললেও এই প্রথমবারের মতো চলমান জাতিগত সংঘাতে ড্রোন ও রকেট ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে।
শুক্রবার সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতে সম্প্রদায়ের লোকজন ইম্ফল উপত্যকার পাঁচটি জেলায় সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে। রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ এই প্রতিবাদ-সমাবেশে অংশ নেন। সেদিনই ড্রোন ও রকেট হামলার ঘটনা ঘটেছে। নতুন করে সংঘাত শুরু হওয়ায় মণিপুর সরকার রাজ্যের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি রাজ্যজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
ভোরের আকাশ/মি