logo
আপডেট : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৬:০৮
পর্যাপ্ত জনবল সংকটে শ্রমিকদের কল্যাণে আসছে না শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রটি
রিফাতুন্নবী রিফাত, গাইবান্ধা

পর্যাপ্ত জনবল সংকটে শ্রমিকদের কল্যাণে আসছে না শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রটি

গাইবান্ধার শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রটি দীর্ঘ দিন থেকে জনবল সংকটের কারণে শ্রমিকের কল্যাণে আসছে না। ফলে দিন দিন শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। এ জেলায় মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধসহ অন‍্যান‍্য ধর্মেরসহ প্রায় ২৫ লক্ষাধিক নানান শ্রেণি পেশার মানুষের বসবাস।

এ জেলায় সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত শ্রমিকদের চিকিৎসা সেবা, প্রশিক্ষণ ও বিনোদনের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৯৫৮ প্রতিষ্ঠিত হয় শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রটি। গাইবান্ধা জেলা শহরের গোডাউন রোডে ২০২১ সালে ২ একর জায়গার উপর নতুন করে ৩ তলা আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়।

কিন্তু পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় শ্রমিকদের কোন কল্যাণে আসছে না এবং অকার্যকর-অব্যবহৃত রয়েছে এই শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রটি। অথচ প্রতিবছর এ কেন্দ্রের জন্য চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও বিনোদনের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই কেন্দ্রটি শ্রমিকদের কল্যাণে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গড়ে উঠলেও যাদের জন্য তৈরী করা হয়েছে তারাই সেখানে গরহাজির। শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জন্য চিকিৎসা সেবা, প্রশিক্ষণ নেওয়া, বিনোদনসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গাইবান্ধায় শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করা হলেও শ্রমিকরা এসব সেবার খবরই রাখেন না। শ্রমিকরা জানেন না এখানে কি হয়।

প্রচার-প্রচারণার অভাবে অনেক শ্রমিকেই জানেন না শ্রমকল্যাণ কেন্দ্রের খবর ও এখানকার প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলো। ফলে শ্রমিকদের কোনো কল্যাণে আসছে না গাইবান্ধা শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রটি। সরকারি শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের সেবা ও সুযোগ-সুবিধার ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে শ্রমিক অধিকার এবং সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রটিকে সচল রাখার দাবি জানিয়েছেন গাইবান্ধার সচেতনমহল।

গাইবান্ধায় নিবন্ধিত শ্রমিক ইউনিয়নের সংখ্যা প্রায় ১২৯টি। এছাড়াও প্রায় সব রাজনৈতিক দলেরই রয়েছে একটি করে শ্রমিক সংগঠন। জেলায় শ্রমিক ইউনিয়ন আর শ্রমিক সংগঠনের সংখ্যা দিন দিন ক্রমাগত বেড়েই চলছে। তবে এগুলোর বেশির ভাগই শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় প্রত্যাশা পূরণে পুরাই ব্যর্থ।

আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত জেলার শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রটিকে সক্রিয় করে এর সেবাসমূহ শ্রমিকদের কাছে পৌছে দেয়ার জন্য এ পযর্ন্ত কোনো শ্রমিক সংগঠন এগিয়ে আসেননি। শ্রমিক সংগঠন গুলো শুধু মে দিবসেই রেওয়াজ মেনে র‌্যালি-শোভাযাত্রা আর সভা-সমাবেশ করে থাকে।

গাইবান্ধা শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, এই কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা, শ্রম কল্যাণ সংগঠক, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক , ডিসপেন্সারি, ফার্মাসিস্ট, এ্যাটেনডেন্ট, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, অফিস সহায়ক, আয়া, নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ ১২টি পদ রয়েছে। এই ১২টি পদের মধ্যে এখানে কর্মরত রয়েছে ৭ টি। বাকি ৫ টি পদ শুন‍্য রয়েছে। কেন্দ্রের প্রধান দুটি পদ মেডিকেল অফিসার এবং জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তার ২টি পদ ২০২২ সাল থেকে শূন্য রয়েছে। এছাড়া শ্রম কল্যাণ সংগঠক, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক, ডিসপেন্সারি এ্যাটেনডেন্টসহ আরও ৩টি গুরুত্বপুর্ণ পদ শূন্য রয়েছে। এ কারণে বন্ধ রয়েছে কল্যাণ কেন্দ্রটির চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ বিতরণ কার্যক্রম।

সরেজমিনে গাইবান্ধা শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রটিতে গিয়ে দেখা যায়, অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে ৩ তলা ভবনটির নিচতলার একপাশে চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র অন্যপাশে পরিবার-পরিকল্পনা সেবা কেন্দ্র।

ভবনটির ২ তলায় রয়েছে প্রশিক্ষণ কক্ষ, বিনোদন কক্ষ, লাইব্রেরি, দর্শনার্থী কক্ষ, বিশ্রামাগার এবং তৃতীয় তলায় কনফারেন্স রুম আর অফিস কক্ষ। পুরো ভবন জুড়ে সুনশান নিরবতা। নেই কোন শ্রমিক অথবা শ্রমিক পরিবারের আনাগোনা। কেন্দ্রে যেসব সেবা কার্যক্রম গুলো চালু থাকার কথা জনবল সংকটের কারণে সেসব সেবা গুলো চালু না থাকায় এখানে শ্রমিকরা আসছেন না। ফলে কেন্দ্রটিতে কর্মরতরা অলস সময় পার করছেন।


সদর উপজেলার বল্লমঝাড় এলাকার রিকশা চালক চান্দু মিয়া (৬৫) বলেন, যখন আমার ১৩ বছর সেসময় থেকে রিকশা চালাই। আমাদের জন্য শ্রম কল্যাণ কেন্দ্র আছে সেটা আমার জানা নাই। তা ছাড়া কেউ আমাকে কোনো দিন বলেও নাই। এই শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের কাজ কি সেটাও জানি না। তবে ভোরের আকাশের প্রতিবেদক সকল সুযোগ সুবিধাগুলো বলার পরে তিনি বলেন, এ ধরনের সুযোগ সুবিধা পেলে আমাদের মত গরীব মানুষদের অনেক উপকার হতো।

গাইবান্ধা কুলি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রেজাউন্নবী রাজু বলেন, গাইবান্ধা শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রটিতে মাঝে মধ্যে কিছু শ্রমিককে নিয়ে সেমিনার করে যা লোক দেখানোর জন্য। অথচ সরকার প্রতি বছর এই কেন্দ্রের কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য খরচ মেটাতে ব্যয় হয় কোটি কোটি টাকা। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের সংগঠক মো. নাছির উদ্দিন ভোরের আকাশকে বলেন, আমাদের এই শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার না থাকায় শ্রমিকরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা শ্রম অধিদপ্তরে চাহিদা পাঠিয়েছি। তবে চিকিৎসা সেবা ছাড়া আমাদের এখানে প্রশিক্ষণ ও বিনোদন মূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

ভোরের আকাশ/ সু