প্রায় এক মাস ধরে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য ছাড়াই চলছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। এতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে দেশের এই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নতুন উপাচার্য পেলেও এখনো চবিতে উপাচার্য ও উপাচার্য কাউকেই নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে শিক্ষাথীদের মাঝে সেশনজটের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা নিজে অথবা শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে পদত্যাগ করেন। এর মধ্যে গত রোববার (১১ আগস্ট) রাতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের রাষ্ট্রপতি বরাবর অব্যাহতিপত্র জমা দেন। এর আগে শনিবার (১০ আগস্ট) প্রক্টরিয়াল বডিসহ বিভিন্ন হলের প্রভোস্টেরা একযোগে পদত্যাগ করেন। এরপর সোমবার (১২ আগস্ট) দুই উপাচার্য (একাডেমিক ও প্রশাসন) পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর থেকে কাউকে নিয়োগ না দেওয়ায় অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে দেশের এই স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানটি।
চলতি বছরের ২০ মার্চ সাবেক উপাচার্য শিরিণ আখতারের পর অধ্যাপক আবু তাহের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর সাত মাসের মাথায় ছাত্রদের আন্দোলনের তোপের মুখে অব্যাহতি চান তিনি।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদ শূন্য থাকায় আটকে আছে বিভিন্ন প্রশাসনিক কার্যক্রম। ক্লাস-পরীক্ষা শুরু না হওয়ায় সেশনজটের আশঙ্কায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া উপাচার্য না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে সনদ উত্তোলন করতে পারছেন সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা। এসব নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, এক মাস ধরে অভিভাবকহীনভাবে চলছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। শুরু হয়নি ক্লাস পরীক্ষা। ফলে সেশনজটের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে চবিকে সচল করার দাবি জানাচ্ছি।
চবি সূত্র জানায়, উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়েছে বর্তমান ডিনস কমিটি। এতে আহ্বায়ক করা হয়েছে ব্যবসা প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন নিজামীকে। তিনি আওয়ামীপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। তাকে নিয়েও এখন তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
অন্যদিকে চবিতে দ্রুত উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারকে দুই দিনের আল্টিমেটাম দেন।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছে সরকার। অথচ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনো কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ক্লাস পরীক্ষা না হওয়ায় সেশনজটের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ দেওয়া হোক। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। শিক্ষার্থীবান্ধব উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানান তারা।
এদিকে শিক্ষার্থীরেদ আল্টিমেটামের পর মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস অনলাইনে চলমান রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় ডিনস কমিটি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চবির (ভারপ্রাপ্ত) রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ ভোরের আকাশকে বলেন, উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী কাজগুলো করা যাচ্ছে না। তবে রেজিস্ট্রারের আওতার যেসব কাজ রয়েছে সেগুলো করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিনের ছোটখাটো কাজগুলো ডিনস কমিটির মাধ্যমে করা হচ্ছে।
ভোরের আকাশ/মি