logo
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১০:২৩
আজ জন্মদিন
সুফী মোতাহার হোসেন ছিলেন সনেট কবি
নিজস্ব প্রতিবেদক

সুফী মোতাহার হোসেন ছিলেন সনেট কবি

কবি সুফী মোতাহার হোসেনের আজ জন্মদিন। ১৯০৭ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর জেলার ভবানন্দপুর গ্রামে তার জন্ম। পিতা মোহাম্মদ হাশেম পুলিশ বিভাগে চাকরি করতেন। মায়ের নাম তৈয়বতননেছা খাতুন। মোতাহার হোসেনের আরও একভাই এবং ছোট একটি বোন ছিল। বোনের নাম ছিল সুফিয়া আখতার বানু। একমাত্র ছোট বোনটি মাত্র ১০ বছর বয়সে মারা যায়।

বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলা সাহিত্য জগতে কবি সূফী মোতাহার হোসেন এক জ্যোতিষ্কের মতো আবির্ভূত হন। রবীন্দ্র-নজরুল যুগের হলেও তাঁদের প্রভাব বলয় থেকে বেরিয়ে তিনি নিজস্ব রচনাশৈলী ও স্বাতন্ত্র্যবোধ তৈরি করেছিলেন। পিতার কর্মস্থলের সুবাধে বিভিন্ন জেলার স্কুলে পড়াশুনা করেছেন। সে সূত্রে কুমিল্লা জিলা স্কুলে তিনি নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। এরপর ফরিদপুর জিলা স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯২০ সালে ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পাস করে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে এফ এ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩১ সালে বিএ পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কালে ছান্দসিক কবি আব্দুল কাদির, সাহিত্যিক আবুল ফজল প্রমুখ কবির সহপাঠি ছিলেন। এই সময়ে কবি কিছু ছোট গল্প ঢাকার বাংলার বানী, কলকাতার আত্মশক্তি, মোয়াজ্জিন, সওগাত প্রভৃতি পত্রিকায় ছাপা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন ১৯২৮ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্ত্রীর নাম সৈয়দা আছিয়া খানম। সংসার জীবনে প্রবেশ করার কয়েক মাস পরেই তার পিতা পরলোকগমন করেন। সূফী মোতাহার হোসেনের চার সন্তান। তারা হলেন গুলফাম শাহানা, সূফী আবদুল্লাহ আল মামুন, সূফী ওবায়দুল্লাহ আল মোস্তানছির এবং নীলুফার বানু। এই সময়ে তিনি পূর্ব বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমাজের পুরোধা কাজী আব্দুল ওদুদ, কাজী আবুল হোসেন, ড. কাজী মোতাহার হোসেন প্রমুখ সাহিত্যিকদের সংস্পর্শে আসেন। স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর ফরিদপুর জজকোর্টে চাকুরী জীবন শুরু করেন। দুই বছর চাকুরী করার পর নিউরেস্থিনিয়া ও ডিসপেপশিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ ১২ বছর শয্যাশায়ী ছিলেন। রোগমুক্তির পর প্রথমে স্থানীয় ময়েজউদ্দিন হাই স্কুলে ও পরে ঈশান স্কুলে শিক্ষকতায় যুক্ত হন। ১৯২৭ খ্রীষ্টাব্দে ঢাকার পূর্ববঙ্গীয় সাহিত্য সমাজের বার্ষিক সম্মেলনে কাজী নজরুলের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পান। ইতিমধ্যেই তিনি কিছু কবিতা লেখা শুরু করেন। পরের বছর কাজী নজরুল ইসলাম ফরিদপুর এলে তাকে একটি কবিতা দেখান। নজরুল ইসলাম এই কবিতার একটি শব্দ পরিবর্তন করে দেন এবং পত্রিকায় পাঠিয়ে দিতে বলেন। কবিতাটি ঢাকার শান্তি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এটাই কবির প্রথম প্রকাশিত কবিতা ।

১৯৪০ সালে বিচিত্রা পত্রিকায় প্রকাশিত সনেট দিনান্তে বিশ্বভারতী থেকে প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলা কাব্য পরিচয়ে সংকলিত হয়। ১৯৬০ সাল থেকে আর্থিক সমস্যার কারণে কবিকে পাঁচ মাইল দূরবর্তী গ্রামের বাড়ী থেকে স্কুলে শিক্ষকতা করতে হয়। ফলে অত্যাধিক পরিশ্রম ও মানসিক উদ্বিগ্নতার জন্য কবির লেখা বন্ধ থাকে। সনেটকার সূফী মোতাহার হোসেনের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন আমাদের মানসিক দৈন্যেরই পরিচয়। অনেক সময়ে কবিকে বলতে শোনা যেত ‘যদি শহরে একটা ঘরের ব্যবস্থা করিতে পারিতাম তবে আবারলিখিতে পারতাম। প্রভাতে বাতি ধরাইয়া বাসি ভাত খাইয়া স্কুলের দিকে ছুট দেই, যখন ফিরি তখন সন্ধ্যা পার হইয়া হইয়াছে। তারপর বাজারের ব্যাগ তো আছেই-কবিতা থাকে কোথায় । অথচ কারো বিরুদ্ধে নালিশ নেই, অভিযোগ নেই । আপন ভোলা সরল প্রকৃতির অনাড়ম্বর মানুষটি আর্থিক সমস্যার কারণে সময় মত প্রকাশ পায়নি। অবশেষে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ সূফী মোতাহার হোসেন সনেট প্রকাশনা সংসদ কর্তৃক সাদামাটা ভাবে কবির প্রচুর সনেটের মাত্র একশতটি সনেট চয়ণ করে ’সনেট সংকলন’ প্রথম প্রকাশ করা হয়। এটিই ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত শ্রেষ্ট কবিতা সংকলন হিসেব স্বীকৃতি পায় এবং কবিকে এই সংকলনের জন্য আদমজী পুরস্কার দেওয়া হয় ।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর সম্পাদিত 'বাংলা কাব্য পরিচয়' বইয়ে মোতাহার হোসেনের 'দিগন্ত' সনেটটি অন্তর্ভুক্ত করেন।তাঁর প্রথম কাব্য-সনেট সংকলন (১৯৬৫), পরে সনেট সঞ্চয়ন (১৯৬৬) ও সনেটমালা (১৯৭০) প্রকাশিত হয়। প্রেম ও প্রকৃতি তাঁর সনেটের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। তিনি ১৯৬৫ সালে 'আদমজী পুরস্কার', ১৯৭০ সালে 'প্রেসিডেন্ট পুরস্কার' এবং ১৯৭৪ সালে 'বাংলা একাডেমি পুরস্কার' লাভ করেন। [সূত্রঃ ফরিদপুরের কবি সাহিত্যিক-আ.ন.ম আবদুস সোবহান, সূফী মোতাহার হোসেন জীবন ও কাব্য-ড. মোহাম্মদ আলী খান ।

কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয় ও যোগাযোগসূত্রে মোতাহার হোসেন সাহিত্যচর্চায় উদ্বুদ্ধ হন এবং পাশ্চাত্য আদর্শে সনেট রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। বাংলা কাব্য পরিচয় পাঠ্যপুস্তকে তাঁর ‘দিগন্ত’ নামক সনেট স্থান পায়। সনেট সংকলন (১৯৬৫) তাঁর প্রথম কাব্য; পরে সনেট সঞ্চয়ন (১৯৬৬) ও সনেটমালা (১৯৭০) প্রকাশিত হয়। প্রেম ও প্রকৃতি তাঁর সনেটের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। তিনি ১৯৬৫ সালে ‘আদমজী পুরস্কার’, ১৯৭০ সালে ‘প্রেসিডেন্ট পুরস্কার’ এবং ১৯৭৪ সালে ‘বাংলা একাডেমী পুরস্কার’ লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ৭ আগস্ট ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।

ভোরের আকাশ ডেক্স

 

ভোরের আকাশ/মি