logo
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:৪৯
সরেজমিন প্রতিবেদন
ঢাকার প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান
আশীষ কুমার দে

ঢাকার প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত
রিকশার বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান

রাজধানী ঢাকার প্রধান প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ থ্রি-হুইলারের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল সড়কে তিন চাকার অযান্ত্রিক যানবাহনের চলাচল ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ এই অভিযান শুরু করেছে।

প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লাগাতার কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে সংঘাত-সংঘর্ষ বেড়ে যায়। এতে সীমিত হয়ে পড়ে বাস চলাচল। সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ দলীয় বিভিন্ন সংগঠন দিয়ে ছাত্র আন্দোলন দমাতে ব্যর্থ হয়ে এক পর্যায়ে সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা ও কারফিউ জারি করলে রাজধানীতে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই সুযোগে যাত্রীদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ তিন চাকার এ জাতীয় ক্ষুদ্র বাহনগুলো রাজপথ দখল করে নেয়।

অন্যদিকে ছাত্র-জনতার ধারাবাহিক আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন এবং পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে তিন চাকার অযান্ত্রিক বাহনের উপস্থিতি অনেক বেড়ে যায়। ব্যাটারিচালিত দ্রুতগতির রিকশাগুলো সড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেই সঙ্গে সড়কে চলাচলে পথচারীদের নিরাপত্তা ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যায়। গত সোমবার ও মঙ্গলবার দুই দিনে শাহবাগ ও মিরপুর এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার ধাক্কায় তানিয়া খানম (৩৫) ও দেড় বছর বয়সী মীরা সরকার নিহত হয়েছেন। এছাড়াও আহত হয়েছেন আরও অনেকে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাফিক পুলিশ শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। পুলিশের এই পদক্ষেপে স্বস্তি প্রকাশ করেছে নিত্যদিন চলাচলকারী মহানগরবাসী। গতকাল বুধবার ঢাকার কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, বেগম রোকেয়া সরণি ও শহীদ মনসুর আলী সড়কসহ কয়েকটি প্রধান সড়ক পরিদর্শনকালে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে তাদের স্বস্তির কথা জানা গেছে। এ সময় তারা ব্যাটারিচালিত রিকশার নেতিবাচক বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এই প্রতিবেদকের কাছে।

রমনা, বাংলা মোটর, ধানমণ্ডিসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ট্রাফিক পুলিশকে ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক করতে দেখা গেছে। পুলিশ সদস্যরা রিকশার চাকা পাংচার করছেন, চালকদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখছেন অথবা ডাম্পিংয়ের জন্য রিকশা নিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকার বেশিরভাগ প্রধান সড়কে রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও ব্যাটারিচালিত এবং প্যাডেলচালিত উভয়- প্রকার রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ হলেও পুরো শহরেই দেড় মাস যাবৎ সব ধরনের রিকশা দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন থেকে ৮ আগস্ট সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথগ্রহণ পর্যন্ত এবং শপথ পরবর্তী আরো তিন-চার দিন পুলিশের অনুপস্থিতিতে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে রিকশাচালকরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সড়কে নেমে পড়েন।

যদিও ট্রাফিক পুলিশ ১২ আগস্ট থেকে রাস্তায় ফিরেছে, তারা মূলত ট্রাফিক পরিচালনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছেন। তারা কোনো বিধি নিষেধ আরোপ কিংবা আইন প্রয়োগ করছেন না। কিন্তু কয়েকদিন আগে, ট্রাফিক পুলিশ রিকশাচালক ও চালকদের সচেতন করতে শুরু করে যে, তারা প্রধান সড়কে এই বাহন চালাবেন না।

গতকাল বেলা সোয়া ১১টার দিকে বাংলা মোটর এলাকা থেকে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশাকে পালিয়ে যেতে দেখা যায়। ওই চালক এ প্রতিবেদককে বলেন, ট্রাফিক পুলিশ আগে থেকে কিছু না জানিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে এসেছেন।’ এখন ফিডার রোডে রিকশা চালাবেন বলে জানান তিনি। ওই এলাকায় কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, সকাল থেকে তারা বেশ কয়েকটি রিকশা আটক করে ডাম্পিংয়ের জন্য নিয়ে গেছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) রাকিব খান গণমাধ্যমকে বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ বিভিন্ন রিকশা রাস্তায় চলাচল করছে। তিনি বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশ এখন পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করেছে। মিরপুর ট্রাফিক বিভাগ গতকাল লাউড স্পিকারের মাধ্যমে প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা না চালানোর জন্য চালকদের অনুরোধ জানিয়েছে।

রাকিব খান বলেন, ‘আজকে (গতকাল মঙ্গলবার) আমরা সতর্কবার্তা দিচ্ছি, মাঝে মাঝে কয়েক ঘণ্টার জন্য রিকশা বন্ধ করে দিচ্ছি। আমরা রিকশাগুলোকে ফিডার রোডে ঘুরিয়ে দিচ্ছি। আমরা হার্ডলাইন নেওয়ার আগে আরও কয়েকদিন নরম পন্থা অবলম্বন করবো।’ এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, প্রথমে মিরপুর ১৪ থেকে মিরপুর ১ পর্যন্ত রাস্তা পরিষ্কার করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। বিভাগের বাকি প্রধান সড়কগুলোকে ধীরে ধীরে রিকশামুক্ত করা হবে।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস) পরিচালিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে, ঢাকায় ১১ লাখেরও বেশি প্যাডেল রিকশা রয়েছে। এছাড়াও নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ছিল ২ লাখেরও বেশি। তবে, তারপর থেকে শহরের প্রধান সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে।

 

ভোরের আকাশ/মি