logo
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৭:৫৭
সরকারের নির্দেশ মানেন না ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

সরকারের নির্দেশ মানেন না ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম

সরকারের নির্দেশ মানেন না ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। ১২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন নিজেরাই রোগী। অনিয়মই যেখানে নিয়ম। মাসে গড়ে ৯০ কোটি টাকা খরচ হলেও স্বাস্থ্য সেবায় কোনো সুফল পাচ্ছেন না ৪৫ লাখের বেশি মানুষ। দুর্নীতিতে ভরপুর ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন অফিস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য খাত। নিয়ম অনুযায়ী এসি পান না এমন কর্মকর্তারাও ব্যবহার করেন। হিটারে রান্না হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুপুরের খাবার। প্রতি মাসে গচ্ছা যায় কমপক্ষে ১০ হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল। ১ যুগের বেশি দাপটের সঙ্গে ফুলপুরে কর্মরত এ্যাম্বুলেন্স চালক জাফর আহমেদ। ত্রুটিপূর্ণ জাতীয় পরিচয়পত্র ও অন্যান্য কাগজপত্র দিয়ে চাকরি করছেন সিভিল সার্জনের গাড়ি চালক মো. মাসুদ রানা।

ময়মনসিংহ নগরীসহ জেলার ৪ শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার থেকে মাসে ঘুষ আদায় করা হয় ১০ লাখের বেশি। সূত্র মতে, ৩ জনের সিন্ডিকেট সিভিল সার্জন অফিসের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। তবে সকল অভিযোগ অস্বাকীর করেছেন সিভিল সার্জন।

জানা যায়, ডা. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম পদোন্নতি পেয়ে ২০২১ সালের ৮ এপ্রিল ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ এই দপ্তরকে কুক্ষিগত স্টাইলে পরিচালনা করছেন। ৩ বছর ৪ মাস ১২ দিনে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য করে ১০ কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্র মতে, ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না এই অফিসে। ডা. নজরুল আগে নরসিংদীর বেলাবো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বে ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রভাব বিস্তারের কারণে অনিয়ম ও দুর্নীতির সকল অভিযোগ থেকে রক্ষা পান। ছিলেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের নেতা। ২৫ বিসিএসের এই কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ সরকার আমলে প্রভাব খাটিয়ে সিনিয়রদের ডিঙিয়ে বারবার প্রাইস পোস্টিং নেন। গড়েছেন নামে-বেনামে অঢেল সম্পদ। অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়া বানিয়ে রেখেছেন ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন অফিস।

সূত্র জানায়, নিয়ম বলতে কিছু নেই ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন অফিসে। পরিস্থিতি অনেকটাই হযবরল। চাকরিবিধি ও নীতিমালা লঙ্ঘন করছেন অনেকেই। যোগ্যতা না থাকার পরও অতিরিক্ত দায়িত্ব ও ডেপুটেশনে রয়েছেন কয়েকজন। যক্ষা নিয়ন্ত্রণ সহকারী আফরোজা চৌধুরীকে ডেপুটেশনে রাখা হয়েছে প্রোগ্রাম অর্গানাইজার হিসেবে। তিনি সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বাবুর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। আফরোজা ৩ বছর ৮ মাসের বেশি এই পদে রয়েছেন।

সূত্র মতে, সিনিয়র হেলথ এডুকেশন অফিসার সৈয়দ জাবেদ হোসেন, পিএ টু সিভিল সার্জন মো. সুলতান উদ্দিন ও অফিস এ্যাসিসটেন্ট কাম কম্পিউটার অপারেটর কামরুন লায়লা সিন্ডিকেট সদস্য। তাদের ছাড়া কোনো কাজ হয় না। সিভিল সার্জনের দোসর হিসেবে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য করে তারা বিপুল সম্পদের মালিক।

সরেজমিনে দেখা যায়, নীতিমালা লঙ্ঘন করে এসি চালাচ্ছেন যৌথভাবে এমও-সিএস ডা. শ্যারমীন ইসলাম ও এমও-ডিডিসি ডা. তুবাউল জান্নাত লিমাত এবং সিনিয়র হেলথ এডুকেশন অফিসার সৈয়দ জাবেদ হোসেন। তাদের কক্ষে মহাসমারোহে চলে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এসি। হিটারে দুপুরের খাবার রান্না হয় জাবেদের কক্ষে।

সূত্র মতে, ময়মনসিংহ নগরীসহ জেলার ৪ শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক থেকে সিভিল সার্জনের নামে একক আধিপত্যে ১০ লাখ টাকা মাসোহারা তুলেন পিএ টু সিভিল সার্জন মো. সুলতান উদ্দিন। প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়নের সময় ১০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেন এই সুলতান। জমা হওয়া সিংহভাগ টাকা চলে যায় সিভিল সার্জনের কাছে। এ টাকার ভাগ পান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কয়েক কর্মকর্তা। অন্যদিকে ময়মনসিংহ নগরীতে ব্যাঙয়ের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা অবৈধ প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা খোঁয়াচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ।

অভিযোগ রয়েছে, সিভিল সার্জনের গাড়ি চালক মো. মাসুদ রানা ২০১৯ সালে ত্রুটিপূর্ণ জাতীয় পরিচয়পত্র ও অন্যান্য কাগজপত্র দিয়ে চাকরি নিয়েছেন। জালিয়াতি ধরা পড়ায় ৩ বছর তার বেতন বন্ধ ছিলো। সিন্ডিকেটের তদবিরে কাগজপত্র ঘষামাজা ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করে বেতন চালু করেন। নিয়োগ জালিয়াতি ধরা পড়ার পরও বহাল তবিয়তে এই গাড়ি চালক। ফুলপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্স চালক জাফর আহমেদ ১ যুগের বেশি সময় কর্মরত আছেন। সাবেক দাপুটে প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের নাম ভাঙ্গিয়ে হাসপাতাল এলাকার পরিবেশ বিষিয়ে তুলেছিলেন। ময়মনসিংহ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ৭০০ টাকার স্থলে নেন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। প্রতিবাদ করলে রোগীর লোকজনের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও গড়িমসি করেন। এতে অনেক রোগীর অবস্থা মরণাপন্ন হয়। অনেকেই আবার পথেই মারা যান।

সূত্র মতে, জাফর নিজে এ্যাম্বুলেন্স চালান না। তার নিয়োগ করা চালক দিয়ে সরকারি এ্যাম্বুলেন্সে রোগী পরিবহন করেন। চালান ডায়াগনোস্টিক সেন্টার ও নিম্নমান কোম্পানির ওষুধ ব্যবসা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকরা তার সম্পর্কে খবর প্রকাশ করেন। বিষয় জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেননি সিভিল সার্জন। জাফরের অন্যান্য কারণসহ রোগীদের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে।

ভোরের আকাশ/ সু