logo
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৩:৫৩
চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, উদাসীন চসিক
এনএস কাঞ্চন, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, উদাসীন চসিক

চট্টগ্রাম নগরীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো বাড়ছে ভিড়। এ নিয়ে নগরবাসীর মাঝে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। চলতি মাসে ১৭ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৩১১ জন। চলতি বছর মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৯০৯ জন। এখন পর্ন্ত মারা গেছেন ১২ জন। এর মধ্যে চলতি মাসেই মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। মারা যাওয়াদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি এবং আক্রান্তদের মধ্যে বেশি পুরুষ।

এদিকে ডেঙ্গু রোগী বাড়লেও বাড়েনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মশক নিধন কার্ক্রম। এ নিয়ে চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উদাসীন বলে অভিযোগ নগরবাসীর।

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রজনন মৌসুম। আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে থেমে থেমে হয়েছি বেশি। সেই কারণে এডিস মশার প্রজনন বাড়ায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অক্টোবর মাসেও ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকতে পারে। ডেঙ্গু রোধে মশক নিধন কর্সূচির জোরদার করার পাশাপাশি সচেতনতার বিকল্প নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গু ও মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ক্র্যাশ কর্মসূচি, ডেঙ্গু কার্ড খোলা এবং লিফলেট ও মাইকিং করাসহ ওষধু ও মশারি পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯০৯ জন। মারা গেছেন ১২ জন। এর মধ্যে গত ৮ মাসে (১ জানুয়ারি থেকে ৩১ আগস্ট) পর্ন্ত আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৮২ জন, মারা গিয়েছিলেন ৫ জন। তবে চলতি সেপ্টেম্বরের ১৬ দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন ৩১১ জন এবং মারা গেছেন ৭ জন। মোট আক্রান্তের মধ্যে নগরে ৫২৩ জন ও উপজেলায় ৩৮৬ জন। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ ৪৯৪ জন, নারী ২৩৭ জন ও শিশু রয়েছে ১৭৮ জন।

তথ্য বলছে, চট্টগ্রামে ২০২১ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৭১ জন, ২০২২ সালে ৫ হাজার ৪৪৫ জন এবং ২০২৩ সালে ১৪ হাজার ৮৭ জন। ২০২১ সালে মারা গিয়েছিল ৫ জন, ২০২২ সালে ৪১ জন এবং ২০২৩ সালে ১০৭ জন। সেই তুলনায় গত বছরের চেয়ে এবার আক্রান্তের হার তুলনামূলক কম।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের জেলা কীটতত্ত্ববিদ মোছাম্মৎ এনতেজার ফেরদাওছ ভোরের আকাশকে বলেন, আবহাওয়াজনিত কারণে এডিস মশার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কারণ আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে বেশি। এ কারণে ডেঙ্গু মশার বিস্তার বেড়েছে। ফলে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। তবে তাপমাত্রা কমে আসলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমবে। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।

৬ নম্বর পূর্ ষোলশহরের বাসিন্দা মো. আবদুল্লাহ বলেন, সন্ধ্যার পর এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। দরজা-জানালা বন্ধ রেখেও মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলছে না। চসিকের ওষুধ ছিটানোর দৃশ্য চোখে পড়ছে না।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ভোরের আকাশকে বলেন, চলতি মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। থেমে থেমে বৃষ্টিই ডেঙ্গু মশা বাড়ার কারণ। তবে আমরা সচেতনতার ওপর জোর দিয়ে লিফলেট বিতরণসহ মাইকিংকরছি। প্রতিটি ওয়ার্ মশক নিধন কার্ক্রম জোরদার করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাছে চিঠি দিয়েছি।

ডেঙ্গু ও মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ক্র্যাশ কর্মসূচি চলমান রয়েছে জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশা নিধন কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম বলেন, মশা নিধনে ছয় মাসের জন্য পূর্ণাঙ্গ মশা ও লার্ভা নিধনে পর্যাপ্ত ওষুধ সংগ্রহ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দলের সুপারিশে মসকুবান নামের ভেষজ ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। ওষুধ ছিটাতে ২৫০ জনের জায়গায় এখন ৪০০ জন কাজ করছেন। ডেঙ্গুর বিস্তার যাতে বাড়তে না পারে সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

ভোরের আকাশ/ সু