logo
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১২:৫৫
আলোচনায় ছাত্ররাজনীতি
নিখিল মানখিন

আলোচনায় ছাত্ররাজনীতি

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একেকটি সহিংসতা, একেকটি মৃত্যুর ঘটনার পরপরই আলোচনায় আসে ছাত্ররাজনীতি। কেউ ছাত্ররাজনীতির পক্ষে আবার কেউ ছাত্ররাজনীতি রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ হয়ে ওঠে এ চর্চা। অন্য বড় কোনো ইস্যু এলেই আবার হারিয়ে যায় ছাত্ররাজনীতি থাকা না থাকার আলোচনা। সবকিছু চলে স্বাভাবিক নিয়মে। তেমনি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে রাজনীতি বন্ধের দাবি ওঠে। নানা পরিস্থিতির কারণে তাও চলে যায় আলোচনার বাইরে। সর্বশেষ ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে দুইজন নিহত হওয়ার পর আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সেই ছাত্ররাজনীতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরপরই বিষয়টি নিয়ে সর্বত্রই পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

তবে এ সিদ্ধান্তে সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতা, রাজনীতিবিদ এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে কেউ কেউ মত দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ ছাত্ররাজনীতি বন্ধ না করে সাধারণ শিক্ষার্থী ও সৃজনশীল নেতৃত্ববান্ধব করে গড়ে তোলার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরছেন।

ছাত্ররাজনীতি রাখার পক্ষে থাকাদের যুক্তি, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণ-অভ্যুত্থান, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ, ৯০’রন গণ-অভ্যুত্থান এমনকি সর্বশেষ গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অনন্য, অসাধারণ। এসব গৌরবান্বিত ইতিহাস মনে রাখলে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার চিন্তা কেউ করবে না। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করলে ভবিষ্যতে নেতৃত্ব সংকটে পড়বে দেশ।

দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। আর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করাকে অযৌক্তিক বলছে ছাত্র সংগঠনগুলো। রাজনীতি বন্ধ হলে ফ্যাসিবাদের উত্থানের আশঙ্কা ছাত্রদলের।

ছাত্ররাজনীতি বন্ধে দাবির পেছনের যুক্তি তুলে ধরে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশাজীবীর নেতারা বলছেন, দেশে ছাত্ররাজনীতির কেন্দ্র বিবেচনা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। দলীয় সরকারের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, সে দলের ছাত্রসংগঠনের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তার চালায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কে হলে থাকবেন আর কে থাকতে পারবেন না, তা নির্ধারণ করেন ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতারা। এখানে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো ভূমিকা থাকে না। আওয়ামী লীগের সময় ছাত্রলীগ আর বিএনপির সময় ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের হলগুলো নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন পরিস্থিতির তীব্রতা কম হলেও কলেজগুলোতে আধিপত্য বিস্তার করেন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। নানা কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা হয়ে যায় তাদের প্রতিপক্ষ। কারণ, দলীয় সরকারের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের দলীয় ছাত্রসংগঠনের মিছিল-মিটিংয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে ওঠে। না গেলে নির্যাতনের মুখে পড়তে হতো। শারীরিক ও মানসিক হয়রানির শিকার হয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতারা টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছেন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসব অভিজ্ঞতায় বিভিন্ন সময় ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি উঠেছে অসংখ্যবার। কিন্তু সারাদেশে তা বন্ধ হয়নি। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীর ক্ষোভ বিভিন্ন সময় সামনে এসেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১৬ জুলাই দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রায় সব হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট প্রাধ্যক্ষের কাছ থেকে ‘হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ’ এ রকম লিখিত অঙ্গীকার নেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অন্তত ১১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৬টি মেডিকেল কলেজ ও দুটি সরকারি কলেজে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং সম্প্রতি দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে দুজনের নিহত হওয়ার ঘটনায় বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা যা বললেন

ছাত্ররাজনীতি বন্ধে শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। তাদের অনেকে বলছেন, ছাত্ররাজনীতির নামে দখলদারি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি বিরাজনীতিকীকরণের চেষ্টা। ছাত্ররাজনীতিকে যারা কলঙ্কিত করেছে তাদের খুঁজে দেখা দরকার। শিক্ষার্থীদের রাজনীতি সচেতন হিসেবে গড়ে তুলতে অবশ্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতি প্রয়োজন।

শিক্ষার্থীদেও কেউ কেউ বলছেন, দেশে ছাত্ররাজনীতির অভিজ্ঞতা কখনই সুখকর নয়। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময় জাতির ক্রান্তিকালে ছাত্র সমাজের অবদান রয়েছে। কিন্তু দলীয় সরকারের ছাত্ররাজনীতির পূর্ব অভিজ্ঞতা খুবই ভীতিকর। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষমতাকেন্দ্রিক নেতা দেখতে চায় না। শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াবে, তাদের সমস্যার সমাধান করবে, সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবে-এমন ছাত্ররাজনীতি দেখতে চায় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু দেশে এমন ছাত্ররাজনীতি গড়ে উঠা সম্ভাব না। দলীয়কেন্দ্রিক ছাত্র রাজনীতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠে বলে অভিযোগ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকে।

এদিকে, শিক্ষার্থীরা রাজনীতি চান কি না, এমন জরিপ চালিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ। সেই জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের প্রায় ৮৪ শতাংশ দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধে দাবি জানান।

রাজনীতিবিদরা যা বললেন

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে পিটিয়ে, নৃশংসভাবে একজনকে হত্যা করা হয়েছে; এর প্রতিবাদের ভাষা নেই। এ পরিস্থিতিতে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি সাময়িক বন্ধ রাখা যেতে পারে। সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে এটি দোষের নয়। তবে দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকা উচিত হবে না। শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ এবং ছাত্রদের অধিকার বজায় রাখতে নিয়মিত ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন দরকার বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতি বন্ধ খুবই ভুল সিদ্ধান্ত এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি। আইয়ুব খান তা বন্ধ করেছিল। দেশে যখনই স্বৈরাচারের শাসন থাকে, তারা বলে রাজনীতি অনিষ্টের মূল। রাজনীতি বেশি হচ্ছে বলে সমস্যা নয়; কম হচ্ছে বলেই সমস্যা। ছাত্ররা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যা করল, সেটিই আসল রাজনীতি। সাধারণ ছাত্রদের সুযোগ দেওয়া হলে অপশাসন, লুটেরা ও স্বৈরশাসক স্থান পেতে পারে না।’

বর্তমান ছাত্রনেতারা যা বলেন,

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির বলেছেন, ‘ঢাবির সিন্ডিকেটের অধিকাংশ সদস্য আগের ফ্যাসিবাদী শক্তির দোসর। ছাত্র রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। এতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংস হবে এবং গোপন সংগঠনগুলোর তৎপরতা বাড়বে। সব সংগঠন ও শিক্ষার্থীকে নিয়ে সংলাপ করতে চাই। ছাত্র রাজনীতির সংস্কার নিয়ে কথা হতে পারে, তবে বন্ধ নয়।’

ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা বলেন, কারও রাজনৈতিক অধিকার হরণ করা সংবিধানের লঙ্ঘন। আমরা সব সময়ই বলেছি ছাত্ররাজনীতির নামে প্রচলিত চর্চা সংস্কার করতে হবে। ছাত্ররাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত ছাত্রদের রাজনৈতিক অধিকার হরণ করার শামিল। এটিও ফ্যাসিস্ট আচরণ বলেই আমরা মনে করি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ বলেন, ‘যে রাজনীতি বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ করেছে, তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস-দখলদারিত্বের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। ফলে ছাত্রদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে, তারা সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব কেই ছাত্ররাজনীতি মনে করছে। কিন্তু সন্ত্রাস-দখলদারিত্বের দায় ছাত্ররাজনীতির নয়। আমরা সবাইকে ভেবে দেখতে বলব ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করলেই দখলদারিত্বের অবসান হবে কি? সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসন, মতপ্রকাশের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ এবং প্রতিবাদের ভাষাকে স্তব্ধ করতেই ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পাঁয়তারা চলছে।’

ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা গত ১৫ বছরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের কারণে ছাত্র রাজনীতির সোনালি দিন দেখেনি। তাই রাজনীতি বন্ধের কথা বলা হচ্ছে। বন্ধ নয়; ছাত্র রাজনীতির সংস্কার প্রয়োজন। ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, তাতে ছাত্র সংগঠনগুলোর ভূমিকা রয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা যা বললেন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফার অন্যতম একটি দফা ছিল ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর ৬ আগস্ট খোলা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এরপরই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান। এ দাবিতে তারা বিভিন্ন সভা ও মানববন্ধনও করেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আবদুল কাদের বলেন, রাজনীতি করা-না করা সাংবিধানিক অধিকার। সাংবিধানিক অধিকার নিষিদ্ধ হলে কালকে হাইকোর্টের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা যাবে। ক্যাম্পাসে সীমিত আকারে রাজনীতি থাকতে পারে অভিমত দিয়ে আবদুল কাদের বলেন, আবাসিক হলে কোনো কমিটি থাকবে না, রাজনীতি থাকবে না, ‘ভাই কালচার’ থাকবে না। ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক সমন্বয়ে কমিশন গঠন করে নতুন ছাত্র রাজনীতির রূপরেখা আনা হবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ তৈরিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দরকার। ছাত্র সংসদ থাকলে সংকট থাকবে না।

আরেক সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন ‘আমরা ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কথা বলছি না, দলীয় লেজুরভিত্তিক ছাত্র রাজনিতির বন্ধের কথা বলছি। কেউ যদি রাজনীতি করতে চায়, তাহলে পার্টি অফিসে গিয়ে করবে। ক্যাম্পাসের ভিতরে চলবে না। ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদভিত্তিক রাজনীতি থাকবে।’

শিক্ষাবিদরা যা বললেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেছেন, ‘ছাত্র রাজনীতি এতটা পচে গেছে যে, তা সাময়িক বন্ধ রাখা উচিত। দুই-তিন বছর পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হলে ছাত্র রাজনীতিও উন্মুক্ত হতে পারে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ বলেন, ছাত্ররাজনীতি বাংলাদেশের অস্তিত্বের অংশ। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলো সন্ত্রাস করেছে। কিন্তু এসব দখলদারী ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধেও অনেক ছাত্র সংগঠন লড়াই করেছে। অনেক ছাত্র সংগঠন ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তারা ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে লড়াই করেছে। কিন্তু তারাই যদি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, তাহলে সক্রিয় হবে কারা? যারা এখন সন্ত্রাস করছে, গ্যাং কিলিং করছে তাদের বিরুদ্ধে কে প্রতিরোধ তৈরি করবে? বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সন্ত্রাস ও দখলদারত্ব নিষিদ্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে ছাত্র রাজনীতি সক্রিয় রাখতে হবে।

অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, এভাবে কখনও ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা যায় না। সমস্যা ছাত্র রাজনীতিতে না। আমাদের এখানের ছাত্র সংগঠনগুলো বহু বছর ধরে একসঙ্গে থেকেছে। ক্যাম্পাসে রাজনীতি করেছে, অসুবিধা হয়নি। সমস্যা তখনই হয়েছে, যখন জাতীয় রাজনীতি নষ্ট হয়ে গেছে। কারণ মূল পলিটিক্যাল পার্টিগুলো ঠিক ছিল না। তারা ছাত্র সংগঠনগুলোকে ব্যবহার না করলে তো কোনো ক্ষতি ছিল না, তাদের সমস্যা তো রাজনৈতিক দলে। ছাত্র সংগঠনে না। পার্থক্য হলো অন্য দেশে সেই ব্যবহারটা করে না, আমাদের দেশে সেটা করে।

ভোরের আকাশ/ সু