logo
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৯:৩০
অনলাইনে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক

অনলাইনে বাড়তি দামে
বিক্রি হচ্ছে ইলিশ

দেশে অন্য মাছের তুলনায় ইলিশের চাহিদা সবসময়ই বেশি। এ মাছ পছন্দ করেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বিশ্বের বেশির ভাগ ইলিশ উৎপাদন হয় বাংলাদেশেই। গত এক যুগে মাছটির উৎপাদন বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তারপরও দিন দিন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে মাছটি। ইলিশের ভরা মৌসুম জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস। এমন সময়েও সাধারণ মানুষের পাতে উঠছে না মাছটি। ক্রমেই ইলিশের ওপর একচেটিয়া অধিকার তৈরি হয়েছে ধনীদের। ভোজনরসিক বাঙালির অনেকেই টাটকা ইলিশ কিনতে ভোর বেলায় যান মাছের ঘাট বা বাজারে। কিন্তু ব্যস্ততার এই যুগে সময় স্বল্পতায় অনেকের পক্ষেই সেটি সম্ভব হয় না। তারা চেষ্টা করেন প্রযুক্তিনির্ভর অনলাইন মার্কেট প্লেস থেকে ইলিশ মাছ কিনতে। ক্রেতাদের এই চাহিদার কথা ভেবে সুপার শপগুলো অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি অনলাইনে ইলিশ মাছ বিক্রি শুরু করেছে। আবার উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পেজ খুলেও বিক্রি শুরু করেছেন ইলিশ মাছ। তবে বাজারের তুলনায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ইলিশ মাছের দাম বেশি। যদিও অনলাইন থেকে দামি এ মাছটি কেনার ক্ষেত্রে রয়েছে ঠকে যাওয়ার ভয়। বিশেষ করে কিছু ফেসবুক পেজের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ ক্রেতাদের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষায় সতর্ক করেছে চাঁদপুর জেলা পুলিশ। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে মাছটি কেনার পরামর্শ দিয়েছে তারা।

রোববার বেশকিছু জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস ও ফেসবুকের কয়েকটি পেজ ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নিয়মিত ইলিশ মাছের আপডেট জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। একেক মার্কেটপ্লেসে মাছের সাইজ ও ওজন বেধে দামের ভিন্নতা দেখা গেছে। সুপার শপ আগোরার অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দেখা গেছে, ৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতি পিস ইলিশ মাছের দাম ৭৭০ টাকা, ৭০০ গ্রামের বেশি ওজনের প্রতি পিস ইলিশের দাম ১২৮০ টাকা, ১০০০ থেকে ১০৯৯ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশের দাম ১৮৫০ টাকা, ১২০০ গ্রামের বেশি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশের দাম ২২০০ টাকা এবং ১৪০০ গ্রামের বেশি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশের দাম ২৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মিনা বাজারের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দেখা গেছে, ৭০০ গ্রামের বেশি ওজনের প্রতি পিস ১৩০০ টাকা, ৯০১ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের প্রতি পিস ইলিশের দাম ১৬৮৮ টাকা এবং ১ কেজি থেকে ১২০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশের দাম ২১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সুপার শপ স্বপ্নের অনলাইন প্ল্যাটফর্মে দেখা গেছে, ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতি পিস ইলিশের দাম ৫১৫ টাকা, ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের প্রতি পিসের দাম ৭৯৫ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের দাম ১৩৫০ টাকা এবং এক কেজি থেকে ১২০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশের দাম ১৭৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইউনিমার্টের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের প্রতি পিস চট্টগ্রামের ইলিশ মাছের দাম ৫৯৯ টাকা ও পদ্মার ইলিশের দাম ৬৯৯ টাকা; ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের পদ্মার ইলিশের প্রতি পিস ১২৮৫ টাকা; ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের প্রতি পিস চাঁদপুরের ইলিশের দাম ১৪৯৫ টাকা ও পদ্মার ইলিশের দাম ১৫৪৫ টাকা; চাঁদপুরের ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ওজনের প্রতি পিস ইলিশের দাম ১৭৪৯ টাকা ও পদ্মার ইলিশের দাম ১৭৯৯ টাকা; এক কেজি থেকে ১২০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি চাঁদপুরের ইলিশের দাম ১৯৪৫ টাকা ও পদ্মার ইলিশের দাম হাজার ১৯৯৫ টাকা; ১২০০ থেকে ১৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি পদ্মার ইলিশের দাম ২২৯৫ টাকা; ১৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি পদ্মা ইলিশের দাম ২৭৪৫ টাকা এবং ১৮০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি চাঁদপুরে ইলিশের দাম ৩৫৪৫ টাকা ও পদ্মার ইলিশের দাম ৩৫৯৫ টাকা। অনলাইন ফিস বাজার বিডি নামে একটি ফেসবুক পেজে দেখা গেছে, ১২৫০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ইলিশের দাম ১৮৫০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। এছাড়া ‘টুকরি’ নামে একটি পেজে ২ কেজি (+-) ওজনের দুইটি ছবি দিয়ে ইলিশ মাছের কথা জানানো হয়েছে। তবে সেখানে কোনো দাম উল্লেখ করা হয়নি। মন্তব্যের ঘরে ক্রেতার দাম জানতে চেয়েছেন।

রোববার সকালে কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আসা ইলিশ চারটি ভাগে বিভক্ত। প্রথম ক্যাটাগরিতে রয়েছে সবচেয়ে বড় সাইজের মাছ। এসব মাছের ওজন এক কেজি কিংবা এর কিছুটা বেশি। যার পাইকারি দাম ধরা হচ্ছে ১৫০০-১৬০০ টাকা। এসব মাছই পরবর্তীতে একই বাজারে ১৮০০ টাকা কেজি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এরপর রয়েছে মাঝারি আকৃতির ইলিশ। যার ওজন ৭০০-৮০০ গ্রাম। এসব মাছের পাইকারি দাম ধরা হচ্ছে ৯০০-১১০০ টাকা। যা পরবর্তীতে খুচরা বাজারে ১৩০০-১৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তৃতীয় ক্যাটাগরিতে ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ পাইকারি দাম ৬০০-৭০০ এবং খুচরায় ৯০০-১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর জাটকা বা ছোট সাইজের (দেখতে কিছুটা পুরাতন) ইলিশ পাইকারি ৫০০ টাকা কেজি এবং খুচরা ৬০০-৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে এসবের মধ্যেও ইলিশের রং, আকার-আকৃতি, তরতাজাভাব বিবেচনায় দামের তারতম্য রয়েছে।

সুপার শপের অনলাইন প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি বিশ্বস্ত কিছু প্ল্যাটফর্ম ছাড়া ফেসবুকের যেকোনো পেজ থেকে ইলিশ মাছ কিনতে ব্যাপক সতর্ক থাকতে হবে ক্রেতাদের। কারণ, মাছের সিজনে হরহামেশাই প্রতারণার ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। প্রতারকচক্র নানাভাবে ক্রেতাদের প্রলোভন দেখিয়ে অনলাইন মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর তাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ রাখে না। ফলে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্রেতারা। সম্প্রতি চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সঙ্গে সমন্বয় করে চাঁদপুর জেলা পুলিশ প্রতারকচক্রের বিরুদ্ধে কাজ করছে। জেলা পুলিশ জানিয়েছে, বিভিন্ন লোভনীয় অফার দিয়ে ইলিশ মাছ ও ইলিশের ডিম বিক্রির নামে কয়েকটি চক্র সাধারণ ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে, এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার পরই মাঠে নামে পুলিশ।

তদন্তে দেখা গেছে, প্রতারকরা ফেসবুক পেজে ইলিশের বাজারদর নিয়ে বিভিন্ন সময় মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করত। পাশাপাশি তারা ফেসবুকে তাজা মাছের ছবি দিয়ে ক্রেতাদের কাছে খারাপ মাছ সরবরাহ করত। এছাড়া অনেক ক্রেতার কাছ থেকে মাছের অগ্রিম টাকা নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিত। তদন্তে বেরিয়ে আসে, এসব পেজ কোনোটাই চাঁদপুর থেকে পরিচালিত হতো না। তাই সাধারণ ক্রেতাদের প্রতারণার হাত থেকে রক্ষায় প্রচারণা শুরু করে পুলিশ। প্রচারণায় তারা বলেছে, অনলাইনে ইলিশ ক্রয়ে প্রতারক হতে সাবধান! অনলাইনে ইলিশ মাছ কেনার সময় সতর্ক থাকুন। ক্যাশ অন ডেলিভারি (সিওডি) পদ্ধতি ব্যবহার করুন, অর্থাৎ মাছ হাতে পাওয়ার পর টাকা পরিশোধ করুন। ইলিশ মাছের লোভনীয় অফার দেখে প্রতারণার ফাঁদে পা দেবেন না এবং কোনোভাবেই পণ্য পাওয়ার আগে টাকা পাঠাবেন না। সতর্ক থাকুন এবং নিরাপদে অনলাইনে কেনাকাটা করুন।

 

ভোরের আকাশ/মি