logo
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১১:০৫
এখন সহনশীল ও বিচক্ষণ হওয়ার সময়
গাজীউল হাসান খান

এখন সহনশীল ও বিচক্ষণ হওয়ার সময়

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একদিকে বিজয়ী ছাত্র-জনতা, অন্যদিকে সেনাবাহিনী এবং সর্বোপরি দেশের বৃহত্তম দল হিসেবে বিএনপির সরব উপস্থিতি, বারবারই একটি কথা মনে হচ্ছিল রাষ্ট্রক্ষমতা এখন কার হাতে যাবে? যদিও আওয়ামী লীগ প্রধান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর সৃষ্ট রাজনৈতিক শূন্যতায় ছাত্র-জনতা অতি দ্রুতই নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্র্বতী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়েছিল। তবু প্রথম দিকে সীমাহীন গুজব এবং রাজনৈতিক বিতর্কের অবসান হয়নি। প্রশ্ন উঠেছিল, তাহলে কি অন্তর্র্বতী সরকারের পেছন থেকে প্রকৃত অর্থে দেশ চালাবে সেনাবাহিনী? দেশ সামরিক ও বেসামরিক শক্তির একটি ‘প্যারালাল স্টেট’ বা সমান্তরাল শাসনের কবলে পড়বে? মহান স্রষ্টাকে অসংখ্য ধন্যবাদ যে আমাদের তেমন একটি পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি। সামরিক বাহিনীকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূলশক্তি ছাত্র-জনতার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যেতে হয়নি।

এবং বর্তমানে দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি কিংবা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সদ্যোমুক্ত হওয়া সংগঠন জামায়াতে ইসলামী গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার বৃহত্তর স্বার্থে সে সিদ্ধান্ত সহজভাবেই মেনে নিয়েছিল। দেশব্যাপী সাধারণ মানুষ তাতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। কিন্তু তার পরও গুজব আমাদের পিছু ছাড়েনি। যারা বর্তমান সিদ্ধান্তকে মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি, সংখ্যায় যা-ই হোক, তারা এমন গুজবও রটাচ্ছিল যে প্রকৃত অর্থে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কে? ছাত্র-নেতারা, নাকি অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টারা? এখানে একটি প্যারালাল স্টেটের মতো অবস্থা বিরাজ করছে বলে তাদের ধারণা ছিল।


কিন্তু ৮ আগস্ট অন্তর্র্বতী সরকার গঠনের পর বিগত কয়েক সপ্তাহে তেমন ধারণাও অনেকটা ফিকে হয়ে এসেছে। এতে প্যারালাল স্টেটের মতো দুষ্টগ্রহের প্রভাব কিংবা আশঙ্কা আপাতত কমেছে। তবে শেষ হয়ে যায়নি।বর্ণিত গুজব সৃষ্টিকারীরা কিংবা আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ভাষায় ‘পরাজিত শক্তি’ শেষ পর্যন্ত এখন বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে বিভিন্ন জাতীয় ইস্যু নিয়ে একটি রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বা সংঘাত সৃষ্টি করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে।

গুজব সৃষ্টিকারী মহল বলতে চায়, রাষ্ট্র মেরামত কিংবা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামী অন্তর্র্বতী সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় ও সুযোগ দিতে চায়। কিন্তু বিভেদ সৃষ্টিকারীদের মতে, বিএনপি সংস্কারের প্রশ্নে সরকারকে অনির্দিষ্টকাল ধরে সময় দিতে আগ্রহী নয়। তাদের ভাষায়, তারেক রহমান তাঁর গণতন্ত্র দিবস পালন উপলক্ষে আয়োজিত সাম্প্রতিক সভায় বলেছেন, অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের সব সংস্কার কার্যক্রমের প্রথম টার্গেট হওয়া উচিত একটি সংসদ নির্বাচন দেওয়া এবং পরবর্তী সময়ে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা। এর অর্থ এই নয় যে অতি আবশ্যকীয় সংস্কারকে বাদ দিয়েই একটি নির্বাচন দিয়ে দিতে হবে। সংগ্রামী ছাত্রদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ১৬ বছরের একদলীয় স্বৈরাচারী শাসনকালে দেশের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে।

সর্বস্তরে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচার, অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশে একটি ‘এক ব্যক্তির শাসন’ চালু করেছে। সে সময়ের মধ্যে যত্রতত্র সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে সেটিকে পদে পদে সাংঘর্ষিক ও অচল করে ফেলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন, জাতীয় সংসদ, বিচার বিভাগ, প্রশাসনযন্ত্রসহ সব কিছু ধ্বংস করেছে। তা ছাড়া অর্থনৈতিক কিংবা ব্যাংকিং খাতে জরুরি সংস্কার ছাড়া বিদেশ থেকে এই বিপর্যস্ত অবস্থায় ঋণ কিংবা অর্থ সাহায্য পাওয়াও দুঃসাধ্য হয়ে পড়তে পারে। সে যৌক্তিক কারণেই অন্তর্র্বতী সরকার প্রধান এবং সংগ্রামী ছাত্র-জনতা বলেছে, আগে অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার হতে হবে, তারপর নির্বাচন। নতুবা কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠান কিংবা সরকার প্রতিষ্ঠাই অর্থবহ হবে না। সব কিছুই আবার রাজনৈতিক দলাদলি, অনৈক্য ও সংঘাতের ফলে আগের মতো হয়ে যাবে। সে কারণেই এবারের রাষ্ট্র মেরামত কিংবা জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়গুলো তাদের কাছে এক ভিন্ন কৌশল ও তাৎপর্য নিয়ে উপস্থিত হয়েছে।সাধ্যমতো একটি সহনশীল সময়ের মধ্যে রাষ্ট্র মেরামত এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার সাধনের জরুরি কাজগুলো সম্পন্ন করে প্রয়োজন হলে জনগণের মতামতের জন্য একটি গণভোটে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। তা ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী সংস্কার কাজের ব্যাপারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পরামর্শ করারও প্রস্তাব দিয়েছেন অনেকে। এ কথা ঠিক যে জনগণকে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনীতিকরা জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত কোনো বিশেষজ্ঞ নন। সে বিশেষজ্ঞের কাজগুলো করার জন্যই বিভিন্ন ক্ষেত্রে কমিশন গঠন করা হয়েছে। কিন্তু সে গুরুত্বপূর্ণ কর্মপদ্ধতি বা প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে যেনতেনভাবে একটি নির্বাচন দিয়ে দিলেই এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে না এবং তাতে মূল সমস্যারও কোনো যুক্তিগ্রাহ্য সমাধান হবে না। বর্তমান রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক সংকট মূলত একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়। সুতরাং সে সংকটকে ঐক্যবদ্ধ এবং জাতীয়ভাবেই সমাধান করতে হবে। এটি কোনো নির্দিষ্ট দলের ত্বরিত ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয় নয়। স্বাধীনতার পর থেকে এভাবে তো বিগত ৫৩টি বছর কেউ না কেউ ক্ষমতায় গিয়েছে, যথারীতি দুর্নীতি, লুটপাট, অনিয়ম ও অপশাসন-শোষণ চলেছে, তাতে সার্বিক পরিস্থিতি দিন দিনই আরো খারাপের দিকে গিয়েছে। সুতরাং এই অচল রাষ্ট্রব্যবস্থাকে সচল করতে হলে জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় মেরামত বা সংস্কারগুলো করতে হবে। এ সরকার অতীতের আর বাকি অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের মতো নয়। এ সরকার উঠে এসেছে ছাত্র-জনতার এক মহান অভ্যুত্থান থেকে। এতে হাজারো মানুষের প্রাণ গেছে। এখনো হাসপাতালের শয্যায় পড়ে রয়েছে অজস্র আহত নারী-পুরুষ-শিশু। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান বলেছেন, একটি অপশক্তি প্রশাসনের অভ্যন্তরে থেকে কিংবা রাজনীতির ছদ্মাবরণে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ সরকারের কোনো কোনো কার্যক্রম সবার কাছে হয়তো সুফল হিসেবে বিবেচিত না-ও হতে পারে। কিন্তু এ সরকারের ব্যর্থতা হবে আমাদের সবার ব্যর্থতা, গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা। সুতরাং এ সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। তারেক রহমান আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে ‘এ সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের পথ ধরেই নির্বাচনী রোডম্যাপে উঠবে দেশ।’

তরুণ রাজনীতিক তারেক রহমানের উপরোক্ত প্রাজ্ঞ-বিজ্ঞ অভিব্যক্তির পরও অনেক রাজনীতিবিদ রাজনৈতিক ক্ষমতা হারানোর অহেতুক আশঙ্কায় সকাল-বিকাল বিভিন্ন পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে থাকেন। সেগুলো তাঁদের রাজনৈতিক পরিপক্বতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় না। মনে হয়, তাঁরা যেন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে উঠেছেন। এ ক্ষেত্রে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দেওয়া অতি প্রয়োজনীয় সময়টা যেন হাতের নাগালে পেয়েও তাঁদের ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগটি হাতছাড়া করে দিতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি তা নয়; একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান কিংবা তার আগে নির্বাচন কমিশন সংস্কারের জন্যও তো কিছুটা সময় প্রয়োজন। বাংলাদেশে এখন ব্যাংক কিংবা অর্থনীতিতে চলছে চরম দুরবস্থা। দেশ চালানোর মতো প্রয়োজনীয় রিজার্ভ কিংবা অর্থনীতিও শঙ্কামুক্ত নয়। এ অবস্থায় ক্ষমতায় গিয়ে রাতারাতি আলাদিনের কোন জাদুর চেরাগের স্পর্শে সব কিছু বদলে দেবেন তাঁরা? নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের কারণে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক এবং এমনকি যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন সমৃদ্ধ দেশ আমাদের দিকে ক্রমে ক্রমে সাহায্যের হাত বাড়াতে শুরু করেছে। কালকেই নির্বাচন দিয়ে দিন, আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই—এমন মনোভাব একটি বিরাজমান বিপর্যয়ের সময় কোনো কাজে আসবে বলে মনে হয় না। সুতরাং ধৈর্য ধারণ করা ও সহনশীল হওয়ার এটি একটি উল্লেখযোগ্য সময়। এ সময়ে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সাংগঠনিক দিক থেকে সব রাজনৈতিক দলেরই প্রয়োজন নিজেদের সংগঠিত করা। বন্যাপীড়িত মানুষের কাছে সাহায্য ও পুনর্বাসনের সামগ্রী নিয়ে যাওয়া। নিজেদের দলের মধ্যে থাকা চাঁদাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও লুটেরাদের বহিষ্কার করে সৎ, কর্মঠ ও মেধাবী তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করা। নতুবা সব কিছু আবার আগের মতোই হয়ে যাবে। দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও অর্থনীতি আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের প্রক্রিয়া আবার জোরদার হবে। তখন বিভিন্ন অপশক্তি দুর্বল সরকারকে পদে পদে চ্যালেঞ্জ জানাতে থাকবে এবং নিজেদের প্রকৃত অর্থেই ক্ষমতার বিকল্প হিসেবে ভাবতে শুরু করবে। তারা ‘প্যারালাল স্টেট’ বা সমান্তরাল শক্তি হিসেবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের শক্তিমত্তা জাহির করার প্রয়াস পাবে। তুরস্কের মতো রাষ্ট্রে ১০ বছর ধরে তাদের বিচক্ষণ রাষ্ট্রপ্রধান রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান সে অপশক্তির বিরুদ্ধে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রিত তথাকথিত সংস্কারবাদী তুর্কি নেতা ফেতুল্লা গুলেন এই সেদিন পর্যন্ত এই অপকর্মটি চালিয়ে গেছেন। এরদোয়ানের বলিষ্ঠ দাবির মুখেও তারা (যুক্তরাষ্ট্র) গুলেনকে তুরস্কে ফেরত পাঠায়নি। এই বিষয়টি নিয়ে আংকারায় বসবাসকারী বাংলাদেশি স্কলার সরোয়ার আলম ইউটিউবে একটি জনপ্রিয় তথ্যচিত্র তুলে ধরেছেন।

বাংলাদেশের জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও বিভিন্ন বৈশ্বিক পরাশক্তিগত বিভাজনের কারণে একদিকে যেমন সীমাহীন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তাবিষয়ক কৌশলগত অবস্থান জোরদার করার নামে এবং বিশেষ করে চীনের অগ্রযাত্রা ঠেকানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ভারতকে নিয়ে ‘কোয়াড’ নামে যে কূটনৈতিক অংশীদারি গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে পরিবর্তিত অবস্থায় বাংলাদেশকে আরো সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ উপকূলে অবস্থিত বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে কোয়াডের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে চীন বাংলাদেশের কৌশলগত উন্নয়ন সহযোগী। চীনের সঙ্গে আমাদের বিশাল অঙ্কের বাণিজ্য ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহযোগিতা রয়েছে। বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি চীনের কারণে এত দিন ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক। কিন্তু বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখন সে নীতি কোন দিকে ধাবিত হবে, তা অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে দেখার অবকাশ রয়েছে। তা ছাড়া আমাদের মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, পায়রা ও মোংলা বন্দরকে কেন্দ্র করেও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য রুটের অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। এ কথা ঠিক যে এখন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি। এর বেশির ভাগই বঙ্গোপসাগরে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ব্যয় করা হচ্ছে। তবে উল্লিখিত বিভিন্ন কারণে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়া সমীচীন হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে চীন উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের কৌশলগত সহযোগী এবং পরীক্ষিত বন্ধু। তার সঙ্গে আমাদের বিশাল বাণিজ্যও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কিভাবে সব কুল রক্ষা করা যায়, তা বিচক্ষণ অর্থনীতিবিদ ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূসকে ভেবে দেখতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা যেন সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার আশায় সাম্রাজ্যবাদী কূটকৌশলে আটকে না পড়ি।

লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক

 

ভোরের আকাশ/মি