logo
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৬:০৫
চট্টগ্রামে এ কেমন বর্বরতা
নেচে-গেয়ে উল্লাস করে পিটিয়ে মারা হলো যুববকে
এনএস কাঞ্চন,চট্টগ্রাম

নেচে-গেয়ে উল্লাস করে পিটিয়ে মারা হলো যুববকে

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার জনপ্রিয় একটি গান ‘মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা’। গানটি নিয়ে হাসির বিভিন্ন কনটেন্টও তৈরি হয়েছে। তবে এবার সেই গানের সঙ্গে নেচে-গেয়ে, আনন্দ- উল্লাস করে পিটিয়ে মারা হয়েছে যুবককে। বর্বর এই ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম নগরে। পেটানোর একটি ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

তবে ভিডিওর শুরুর দৃশ্য দেখে যে কারো মনে হতে পারে এটি কোনো আনন্দ উদযাপনের দৃশ্য। কিন্তু না, এই দৃশ্যের পেছনে লুকিয়ে ছিল ভয়ঙ্কর বর্বতা ও নৃশংসতা। সেই ঘটনা এখন চট্টগ্রাম নগরীতে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। নৃশংস এই ঘটনায় তৈরি হয়েছে ক্ষোভ।

বর্বর এ ঘটনাটি ঘটে গত ১৪ আগস্ট । কিন্তু সেটি জানাজানি হয় শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর)। তবে কারা কেন, কি উদ্দেশ্য এমন নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি জানা যায়নি। তবে পুলিশ বলছে, তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

জানা গেছে, নিহত যুবকের নাম শাহাদাত হোসেন (২৪)। তিনি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের বাসিন্দা। তার পিতা একই এলাকার মিয়া জান ভূঁইয়া বাড়ির মৃত মোহাম্মদ হারুন।

থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ আগস্ট নগরের দুনম্বর গেট এলাকায় নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের ঘটে ঘটে। হত্যার পর নিহতের লাশ ফেলে রাখা হয় প্রবর্তক মোড় এলাকার বদনা শাহ মাজার এলাকার রাস্তায়।

এ ঘটনার পরদিন (১৫ আগস্ট) চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানায় ভিকটিমের চাচা মো. হারুন অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। কিন্তু ওইসময় শাহাদাতকে মারধরের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়নি। গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।

ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে দেখা যায়, লোহার খুঁটিতে দুপাশ থেকে বাঁধা এক যুবকের হাত। মাথা নিচু করে থাকা সেই যুবকের পরণে গেঞ্জি, প্যান্ট ও জুতা। এসময় ‘মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা’ গানের তালে নাচতে নাচতে একদল যুবক লাঠি হাতে বেঁধে রাখা যুবককে মারছেন। এসময় কয়েকজন শিস দিয়ে গানে তাল মিলাচ্ছেন। মারধরের একপর্যায়ে নেতিয়ে পড়েন সেই যুবক।

জানা যায়, নিহত শাহাদাত নগরের বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে বসবাস করতেন এবং ফলমণ্ডির একটি দোকানে চাকরি করতেন।। দুই বছর আগে শারমীন আক্তার নামে এক নারীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন মো. শাহাদাত। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফোন করলে কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় চলে আসবেন বলে স্ত্রীকে জানান। পরে গভীর রাত হলেও স্বামী বাসায় ফিরে না আসায় খোঁজ শুরু করেন স্ত্রী শারমিন। এসময় শাহাদাতের ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

১৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফেসবুকে মো. হারুন দেখতে পান নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বদনাশাহ মিয়া (রহ.) মাজারের বিপরীতে সড়কের পাশে তার ভাতিজা শাহাদাতের মরদেহ পড়ে আছে।

এর আগে রাত ৯টার দিকে খবর পেয়ে নগরের পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শাহাদাতের মরদেহ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওইদিন রাতে চমেক হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে শাহাদাতের লাশ শনাক্ত করেন স্ত্রী শারমীন আক্তার এবং মামলার বাদী চাচা হারুন।

পুলিশ জানায়, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের লাশ ফরেনসিক মর্গে পাঠানো হয়। সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, শাহাদাত হোসেনের মাথা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, গত ১৪ আগস্ট প্রবর্তক এলাকা থেকে শাহাদাত নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার চাচা বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। যারা মারধর করেছে তাদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তাদের শিগগির আইনের আওতায় আনা হবে।

সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ রইছ উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি খুবই অমানবিক এবং বর্বর। এই হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।

এদিকে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে পিটিয়ে মারাসহ আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একইদিনে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম (এফ এইচ) হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে 'মানসিক ভারসাম্যহীন' এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেন একদল শিক্ষার্থী।

এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে কয়েক দফা মারধর করে হত্যা করা হয়।

গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভোর ৫টার দিকে খাগড়াছড়ি পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পানখাইয়া পাড়ায় মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মোহাম্মদ মামুন নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জেরে দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

ভোরের আকাশ/ সু