logo
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ২০:৩০
আ.লীগ নেতাসহ ৬জনকে কুপিয়ে-পিটিয়ে হত্যা
ভোরের আকাশ ডেস্ক

আ.লীগ নেতাসহ ৬জনকে
কুপিয়ে-পিটিয়ে হত্যা

হঠাৎ করেই দেশে খুন-খারাবি বেড়ে গেছে। আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৬ জন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তার স্ত্রীকে মারপিট ও ছেলেকে ধরে রাখা হয়। চট্টগ্রামে এক যুবকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। বগুড়ায় দুই যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে এক চরমপন্থি নেতাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া একটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জে তবারক খাওয়ার বিরোধে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার ও আগের দিন রোববার সন্ধ্যায় এসব ঘটনা ঘটে।

বগুড়া থেকে এনামুল হক রাঙ্গা জানান, বগুড়ার শাজাহানপুরে কুখ্যাত সন্ত্রাসী সাগর তালুকদার ওরফে টোকাই সাগরসহ দুইজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার সন্ধ্যা সোয়া ৭ টার দিকে উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়নের ছোট মন্ডলপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত সাগর আশেকপুর ইউনিয়নের হাটখোলা পাড়া গ্রামের গোলাম তালুকদারে ছেলে। স্বপন মিয়া একই গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে। সাগরের নামে হত্যাসহ ১৭টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বগুড়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার। সাগর তালুকদার ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে। ২৫/৩০জন সদস্য নিয়ে গঠন করে সন্ত্রাসী বাহিনী; যা সাগর বাহিনী নামে পরিচিত। সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে বের হন তিনি। স্থানীয়রা জানান, রোববার সন্ধ্যার পর সাগর, স্বপন ও মুক্তার একটি মোটরসাইকেলে গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যা সোয়া ৭ টার দিকে ছোট মন্ডলপাড়া গ্রামের রাস্তায় ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাদেরকে এলোপাতাড়ী কুপিয়ে ফেলে রেখে যায়।

নিহত সাগরের বাবা গোলাম মোস্তফা তালুকদার বলেন, বিকালে পুকুরে চাষের মাছ দেখার জন্য গিয়েছিল সাগর। ফেরার পথে কে বা কারা আমার ছেলেসহ দুইজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমার ছেলের সাথে কয়েকজনের শত্রুতা ছিল। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, নিহত সাগর এই এলাকায় পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার নামে ১৭টিরও অধিক মামলা ছিল।

চট্টগ্রাম থেকে এনএস কাঞ্চন জানান, গানের সঙ্গে নেচে-গেয়ে, আনন্দ-উল্লাস করে পিটিয়ে মারা হয়েছে এক যুবককে। বর্বর ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম নগরে। পেটানোর একটি ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। বর্বর ঘটনাটি ঘটে গত ১৪ আগস্ট । কিন্তু সেটি জানাজানি হয় শনিবার। তবে কারা কেন, কি উদ্দেশ্য এমন নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে, তা জানা যায়নি। তবে পুলিশ বলছে, তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

জানা গেছে, নিহত যুবকের নাম শাহাদাত হোসেন (২৪)। তিনি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি থানার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম মোহাম্মদ হারুন। ভিডিওতে দেখা যায়, লোহার খুঁটিতে দুপাশ থেকে বাঁধা এক যুবকের হাত। মাথা নিচু করে থাকা সেই যুবকের পরণে গেঞ্জি, প্যান্ট ও জুতা। এসময় ‘মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা’ গানের তালে নাচতে নাচতে একদল যুবক লাঠি হাতে বেঁধে রাখা যুবককে মারছেন। এসময় কয়েকজন শিস দিয়ে গানে তাল মিলাচ্ছেন। মারধরের একপর্যায়ে নেতিয়ে পড়েন সেই যুবক। জানা যায়, নিহত শাহাদাত নগরের বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে বসবাস করতেন এবং ফলমণ্ডির একটি দোকানে চাকরি করতেন। দুই বছর আগে শারমীন আক্তার নামে এক নারীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, গত ১৪ আগস্ট প্রবর্তক এলাকা থেকে শাহাদাত নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার চাচা বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। যারা মারধর করেছে তাদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

গোয়ালন্দ থেকে অমল সরকার জানান, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে সুশীল সরকার (৫৮) নামে এক চরমপন্থী নেতাকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের কাটাখালী বাজারে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

নিহত সুশীল উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের হাউলি কেউটিল গ্রামের মৃত মনিন্দ্রনাথ সরকারের ছেলে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুশীল সরকার রোববার সন্ধ্যা সোয়া ৬ টার দিকে কাটাখালি বাজারের একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন। এ সময় বেশ কয়েকজন সশস্ত্র ব্যক্তি সেখানে এসে তার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা তার গলায়, ঘাড়ে, পিঠে ও পেটে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে তার নাড়িভুড়ি বের হয়ে যায়। এ সময় সেখানে তিন রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়। একটি গুলি তার শরীরে বিদ্ধ হয়। ঘাতকরা চলে যাওয়ার পর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম জানান, নিহত সুশীলের বিরুদ্ধে থানায় দুইটি হত্যা ও তিনটি অস্ত্র মামলাসহ মোট পাঁচটি মামলা রয়েছে। তিনি চরমপন্থী দলের একজন নেতা ছিলেন বলে জানতে পেরেছি।

চরমপন্থিদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে প্রতিপক্ষরা তাকে হত্যা করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট টার্মিনাল এলাকা থেকে মনোয়ার হোসেন (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল লাশটি উদ্ধার করা হয়। সে রাজবাড়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মীকুল এলাকার মৃত নূর বক্সের ছেলে। জানা যায়, দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় তিনি দীর্ঘদিন যাবত ভিক্ষাবৃত্তি করতেন এবং ঘাটের বিভিন্ন এলাকায় রাত যাপন করতেন। অন্যান্য দিনের মতো রোববার দৌলতদিয়া টার্মিনাল এলাকার বিআইডব্লিউটিএ অফিসের পাশে ঘুমিয়ে পড়েন। সোমবার সকালে তিনি ঘুম থেকে উঠেননি। স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।

লক্ষ্মীপুর থেকে রিয়াজ মাহমুদ বিনু জানান, সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের পাঁচপাড়া গ্রামে রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নুর আলম নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ৬০ বছর বয়সী নুর চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার বাড়ি পাঁচপাড়া গ্রামে। তিনি বাড়ির পাশে একটি দোকানে পোশাক সেলাইয়ের কাজ করতেন।

ঘটনার বর্ণনায় নিহতের ছেলে আরিফ বলেন, সন্ধ্যার পর আমার বাবা ঘরে ছিলেন। এ সময় তার মোবাইল ফোনে কে বা কারা কল করে জানায়, লোকজন তাকে মারতে আসছে। তখন তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া মাত্রই বাড়ির পেছনে হামলাকারীরা তাকে আক্রমণ করে। তাকে লাঠিসোঁটা দিয়ে মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে তিনি পুকুরে পড়ে যান। সেখান থেকে তুলে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আমার বাবা তাদের বলেছিলেন, আমাকে মেরো না, তুলে নিয়ে যাও। তারপরও তারা মেরে ফেলল।

আরিফ বলেন, ঘটনার সময় আমি ঘর থেকে বেরিয়ে বাবাকে মারতে দেখি। ওই সময় হামলাকারী দুইজন আমাকেও ধরে রেখেছিল। আমি তাদের হাত থেকে ছুটে পুকুরের অন্য পাড়ে গিয়ে আশ্রয় নিই। আমার মা মমতাজ বেগম হামলাকারীদের পায়ে ধরে ছিলেন; যাতে বাবাকে না মারে। কিন্তু কেউ কোনো কথা শোনেননি। আমার মাকেও মারধর করা হয়েছে। আমার বাবা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও কারো ক্ষতি করেননি। হামলার পর প্রথমে তাকে চন্দ্রগঞ্জের একটি হাসপাতালে। পরে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আরিফ দাবি করেন, চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা খোকন নামের একজনকে তিনি চিনতে পেরেছেন; যিনি হামলার নেতৃত্বে ছিলেন। তার সঙ্গে আরও ১০-১২ জন ছিলেন। খোকন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জয়নাল আবেদিন বলেন, আমরা ভিকটিমকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ পাইনি। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

চন্দ্রগঞ্জ থানার ওসি এমদাদুল হক বলেছেন, একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার মরদেহ সদর হাসপাতালে আছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/মি