logo
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১০:৫৪
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের দুর্নীতির প্রমাণ মিলল এপিএসের কম্পিউটারে
গোলাম মুজতবা ধ্রুব

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের দুর্নীতির প্রমাণ মিলল এপিএসের কম্পিউটারে

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সহকারী একান্ত সচিব মনির হোসেনের কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক জব্দ করে, সেখানে থাকা সাবেক মন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুপুরে দুদক কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোরের আকাশকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তারা বলেন, আমরা যেদিন মনির হোসেনের কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক জব্দ করেছিলাম- তার আগে থেকেই আমরা ধারনা করেছিলাম সেখানে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার পরিবারের সদস্যদের অনিয়ম, দুর্নীতির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রমাণ পাবো। আমাদের এই ধারনাটি সত্যি হয়েছে। জব্দ করার আগে ওই হার্ডডিস্কের সব তথ্য মুছে ফেলা হয়েছিল। পরে আমরা সেগুলো উদ্ধার করতে পারি এবং সেখান থেকে কোথায় কবে কোন দপ্তরে মন্ত্রীর সুপারিশে নিয়োগ হয়েছিল, কাকে কত টাকা দিতে হতো, কারা কারা এই অনিয়মে জড়িত ছিল তার সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গত মাসের শেষ সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবের অনুমতি নিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সহকারী একান্ত সচিব মনির হোসেনের কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক জব্দ করে দুদক। ওই সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সেদিন দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যায়। তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর তারা সাবেক মন্ত্রীর দপ্তরে যান। সেখান থেকে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মনির হোসেনের কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে যায়। এছাড়া তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাবেক একান্ত সচিব (পিএস) হারুন-উর-রশিদ সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেন। তারা হারুন-উর-রশদের গাড়িচালকের নম্বর নেন। এছাড়া সাবেক মন্ত্রীর দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তার গাড়িচালকদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করেন।

জানা গেছে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান টানা দীর্ঘদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর এ সুযোগে নিয়োগ ও পছন্দের জায়গায় বদলি করিয়ে কামিয়ে নিয়েছেন হাজার কোটি টাকা। আর এসবের পেছনে ছিলেন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব হারুন-উর-রশিদ, জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু, সহকারী একান্ত সচিব মনির হোসেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইব্রাহিম হোসেন। তার আগের সপ্তাহেই এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এরই অংশ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যায় দুদক দল।

ৎদুদক কর্মকর্তারা জানান, আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও তার পরিবারের নামে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পাশাপাশি অনুসন্ধানে আরও ২০০ কোটি টাকার বেশি মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটির অনুসন্ধান টিম। সব মিলিয়ে আপাতত ৩০০ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। আর ওই দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে আসাদুজ্জামান কামাল ছাড়াও তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, তার ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান, মেয়ে সোফিয়া তাসনিম খান ও সহকারী একান্ত সচিব মনির হোসেননের সম্পৃক্ত থাকার তথ্য প্রমাণ পাওয়ায় তাদেরকেও আসামি করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে বলেও জানান দুদক কর্মকর্তারা।

নাম না প্রকাশের শর্তে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, দুদকের অনুসন্ধানে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অকাট্য প্রমাণ মিলেছে। নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে নামে-বেনামে ১০০ কোটি টাকার বেশি স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ব্যাংকের অর্থ, ঢাকা ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে। অনুসন্ধানে তাদের ব্যাংক হিসাবেই শত কোটি টাকার বেশি অর্থের সন্ধান মিলেছে। এছাড়া তার এপিএস মনিরের বিরুদ্ধে প্রায় ২০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ মিলেছে। দুদক টিম ওই পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অন্তত ২০০ কোটি টাকার মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধের প্রমাণও পেয়েছে। আমাদের বিশ্বাস তদন্তে তাদের এর চেয়ে বহুগুন সম্পদ ও মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধের তথ্য পাওয়া যাবে।

সূত্র জানায়, এনজিওর ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা ‘এনওসি’ দিতে গিয়ে প্রতি সংস্থা থেকে ৮০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা দিতে হতো আসাদুজ্জামান খান সিন্ডিকেটকে। এরমধ্যে ২০১৮ সালে রাজধানীর উত্তরা এলাকার একটি উন্নয়ন সংস্থার এনওসি নিতে গেলে বিপত্তি শুরু হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এর আগে পুলিশের বিশেষ শাখা, জেলা প্রশাসক, এনএসআই ইতিবাচক প্রতিবেদন দাখিল করে। তারপরও অদৃশ্য কারণে ফাইলটি মাসের পর মাস আটকে রাখা হয় মন্ত্রণালয়ে। বাধ্য হয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগে মন্ত্রীকে ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। ফার্মগেট এলাকায় কামালের বাসার সামনে টাকার ব্যাগটি দেওয়া হয় তার পরিবারের এক সদস্যের কাছে।

 

ভোরের আকাশ/মি