logo
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৬:০৩
বাঁকখালী নদী পাড়ে ভয়াবহ ভাঙন
ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার

বাঁকখালী নদী পাড়ে ভয়াবহ ভাঙন

বাঁকখালী নদী তীরবর্তী এলাকায় ভয়াবহ ভাঙন

কক্সবাজারের রামু উপজেলার বাঁকখালী নদী তীরবর্তী এলাকায় অবস্থিত অসংখ্য স্থাপনা ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে। অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় নদী তীরে গড়ে উঠা হাজারো স্থাপনা, বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্টান, ধর্মীয় প্রতিষ্টান ও দোকানপাট হুমকির মুখে পড়েছে। গত আগষ্ট ও চলতি মাসের সেপ্টেম্বর দুদফা বন্যায় প্লাবিত হয়ে অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে যায় পুরো কক্সবাজার। বন্যায় জেলার নিম্নাঞ্চল ছাড়াও শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল।

জানা যায়, রামু উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নদী তীরবর্তী এলাকায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে আসছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে শতশত ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চলতি বছর দুদফা বন্যায় রামুর প্রায় ৩০০ ঘরবাড়ি ও স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁকখালী নদীর উৎপত্তি দোছড়ী নদী ভাঙনের ফলে শতশত স্থাপনা ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতিমধ্যে নদীর পাড় ভেঙে দোছড়ী বাজারে বেশকিছু দোকানপাট, রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ির একাংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের দোছড়ী নদী পাড় ভাঙন প্রতিরোধে অনেক বছর আগে বেড়িবাঁধ দেয়া হলেও, বর্তমানে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এই অঞ্চলের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন।

এদিকে, ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের পূর্ব পাড়া গ্রামের অসংখ্য বসতবাড়ি। রাজারকুল ইউনিয়নে শিকলঘাট-মনিরঝিল সড়কে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের তেমুহনী স্টেশনের পার্শ্ববর্তী জুলেখার পাড়ায় সিসি ব্লক সরে গিয়ে ঝুঁঁকিতে রয়েছে রামু-মরিচ্যা সড়কসহ আশপাশের অসংখ্য স্থাপনা।
এছাড়া হুমকিতে রয়েছে উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের ক্যাজরবিল, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ও চাকমারকুল।

কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের দোছড়ী এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর সেলিম জানান, প্রতি বছর বৃষ্টিতে বন্যা দেখা দিলে ভাঙনের মুখে পড়ে খালের দুই পাড়। গত ৫ বছর ধরে খালের পাড় ভেঙে চলাচলের রাস্তা, ঘরবাড়ি ও স্থাপনার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। এই নদী ভাঙনের কারণে এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকার যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে নদী গর্ভে হারিয়ে যাবে রাস্তাঘাট ও অসংখ্য স্থাপনা।

দোছড়ী বাজারের ব্যবসায়ী আবু তাহের বলেন, আমার দোকান নদীতে ভেসে গেলো। নদীর পানির স্রোত এতই বেশি ছিল যে, দোকান থেকে অধিকাংশ মালামাল বের করা সম্ভব হয়নি। বাজারের প্রায় ১০টি দোকান নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা আরাফাত সুজন, কাউয়ারখোপ পূর্বপাড়ায় বাকঁখালী নদীরপাড় প্রতিবছর বর্ষাকালে বন্যায় ভাঙনের দেখা দেয়। এতে নদী পাড়ের হাজারো বসতবাড়ী ও স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদী ভাঙন টেকাতে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর যুগ্ম আহবায়ক ফরিদুল আলম শাহীন বলেন, নদী থেকে যত্রতত্র বালি উত্তোলন ও পাড়ে গাছ কাটার কারণে নদীর এই অস্বাভাবিক আচরণ। নদী ভাঙন টেকাতে বালু উত্তোলন ও গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে।

কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু মোহাম্মদ নোমান জানান, রাস্তাঘাট ও স্থাপনা ভাঙনের কারণে হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসিফ আহমেদ ভোরের আকাশকে জানান, ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রজেক্টের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রজেক্ট পাশ হলে কাজ শুরু হবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রনালয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। আশা করছি আগামী শুষ্ক মৌসুমে ভাঙন এরিয়া মেরামতের কাজ শুরু হবে।

ভোরের আকাশ/ সু