logo
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৬:১২
স্বাভাবিক প্রসবে আস্থা অর্জন করেছে বদলগাছী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
রানা হামিদ, বদলগাছী (নওগাঁ)

স্বাভাবিক প্রসবে আস্থা অর্জন করেছে বদলগাছী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

বদলগাছী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

‘‘মাতৃত্বের স্বাদ”- মাত্র দুটি শব্দ। কিন্তু এর গভীরতা ব্যাপক। এই স্বাদ গ্রহণের আগেই অনেক মাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। তাই মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণের জন্য নিরাপদ প্রসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এই নিরাপদ স্বাভাবিক প্রসবে মায়েদের আস্থা অর্জন করে চলেছে বদলগাছী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তবে কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও উল্লেখ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও মিডওয়াইফ সদস্যরা।

তথ্য সংগ্রহকালে জানা যায়, ২০২১ সালের পহেলা জুন থেকে বদলগাছী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারি বিভাগ চালু হয়। এরপর থেকেই প্রতিদিনই নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব হচ্ছে। বর্তমানে বদলগাছীতে মোট সাত জন মিডওয়াইফ রয়েছেন। এর মধ্যে চার জন বদলগাছী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং চাকরাইল, ভান্ডারপুর এবং জাবারীপুরে একজন করে মিডওয়াইফ রয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ২৭৫ জন মা নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছেন। প্রতি মাসেই ৩০ জন থেকে ৪০ জন মা নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করান বদলগাছী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বাচ্চা প্রসব করানোর পরে ১৫ দিনের ঔষধ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়।

বদলগাছী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মিডওয়াইফরা জানান, গর্ভবতী হওয়ার পরে সাধারণত চার, ছয়, সাত ও নয় মাসে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মিডওয়াইফদের সাথে পরামর্শ করতে হয়। ভ্রুণের হার্টরেট, পানি ও পজিশন এসময় পর্যবেক্ষণ করা হয়। ফ্রি হেপাটাইটিস বি, সি'সহ, আল্ট্রাসনোগ্রাম, হিমোগ্লোবিন টেস্ট, ইউরিন, ডাইবেটিস টেস্টের মাধ্যমে গর্ভবতী মা ও ভ্রুণের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।

তারা আরো জানান, সাধারণত গর্ভবতী মায়েদের প্রসব বেদনা শুরু হওয়ার সাথে সাথে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ব্যথা শুরু হওয়ার পর সন্তান প্রসব হতে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। জরায়ুর মুখ ছয় সে.মি. প্রশস্ত না হওয়া পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব হবে না। তবে ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব।

তারা সতর্ক করে বলেন, অনেকে আছেন যাদের ধৈর্য খুবই কম তারা দালালের খপ্পরে পরে ক্লিনিকের অনভিজ্ঞদের কাছে নিয়ে যান। সেক্ষেত্রে তারা অক্সিটোসিন ইনজেকশন দিয়ে দ্রুত বাচ্চা প্রসবের ব্যবস্থা করে, যাতে বাচ্চা মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তারা কিছু সীমাবদ্ধতার কথাও জানান, যার মধ্যে রয়েছে সিজারের ব্যবস্থা না থাকা ও গাইনী ডাক্তার না থাকা। গাইনী ডাক্তার থাকলে অনেক ক্ষেত্রে জরায়ুর মুখ ছিড়ে গেলে রিপেয়ার করা সহজ হয়। এছাড়াও ডপলার মেশিন যা দ্বারা বাচ্চার নড়াচড়া ও হার্টবিট চেক করা যায়, সেটার অভাব রয়েছে। বদলগাছী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মিডওয়াইফ অনিকা ইয়াসমিন বলেন, তিন বছর থেকে এখানে কর্মরত আছি। ২৫০টির বেশি নরমাল ডেলিভারি করিয়েছি। যদি গাইনী ডাক্তার এবং সিজারের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে আরো বেশি বাচ্চা প্রসব করানো সম্ভব হতো।

আরেকজন মিডওয়াইফ খালেদা খাতুন বলেন, এই হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি বিভাগ চালু হওয়ার পর থেকেই কর্মরত আছি। ২৫০ থেকে ৩০০ মায়ের স্বাভাবিক প্রসবে সহযোগিতা করেছি। তিনিও গাইনী ডাক্তারের সীমাবদ্ধতার কথা বলেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা সদর ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের পাঁচ মাসের গৃহবধু নিঝুম বলেন, আমি এখানে নিয়মিত চেক আপ করাতে এসেছি। আমি শুনেছি এখানে খুব ভালোভাবে নরমাল ডেলিভারি করানো হয়। আল্লাহ সহায় হলে আমিও এখানে নরমাল ডেলিভারি করাতে ইচ্ছুক।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কানিস ফারহানা ভোরের আকাশকে জানান, আমাদের এখানে এখন নিয়মিতভাবে মায়েরা নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব করাতে পারেন। তবে গাইনী ডাক্তার এবং অপারেশন থিয়েটার না থাকার কারণে সামান্য জটিলতা দেখা দিলেই নওগাঁতে রেফার্ড করতে হয়। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

ভোরের আকাশ/ সু