- এনএসডিএর সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে রিট
- দক্ষ কর্মী গড়ে তোলার কার্যক্রম স্থবির
কর্মমুখী নানা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ার কাজ করতে বড় ভূমিকা রাখে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর। দেশের অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে দেওয়া সনদ নিয়ে বিদেশেও কাজ করছেন অনেকে। এতে দেশে আসত বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু বিগত আওয়ামী সরকারের পতনের আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) এক আজগুবি সিদ্ধান্তে বন্ধ হয়ে গেছে এমন প্রশিক্ষণ নেওয়া প্রায় লক্ষাধিক প্রশিক্ষণার্থীর সনদায়ন প্রক্রিয়া। ফলে এসব প্রশিক্ষণার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এদিকে চিঠিটি বাতিলে আদালতে রিট করেছেন খন্দকার হাসান শাহরিয়ার নামে এক আইনজীবী।
জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড। শিক্ষার্থীদের সনদায়ন বন্ধসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের আওতাধীন এনএসডিএর কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ওই চিঠিটি ইস্যু করা হয়। এর আগে ২০২০ সালের ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পরিষদের প্রথম সভার ৬ নং সিদ্ধান্ত এবং ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ অনুষ্ঠিত মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যনির্বাহী সভার কার্যবিবরণী ২ (ক) অনুযায়ী বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আইনের মাধ্যমে দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজ সম্পাদন থেকে বিরত করা হয়। ফলে দেশের যুব সমাজকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার কার্যক্রম থেমে যায়। তথ্যমতে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় এনটিভিকিউএফ কোর্সসমূহ বর্তমানে ৭২৭টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বেসিক ট্রেড কোর্স পরিচালিত হচ্ছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ সুইং মেশিন অপারেটন (এসএমও), ওয়েল্ডিং, বেসিক কম্পিউটার অপারেটর, গ্রাফিক্স ডিজাইন, মোবাইল সার্ভিসিং, ড্রাইভিং।
জানা গেছে, লক্ষাধিক তরুণ-তরুণী বেসিক ট্রেড কোর্স প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছেন। সবশেষ ১০ বছরে ২০ লাখের বেশি প্রশিক্ষণার্থীকে সনদ দিয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। কিন্তু গত ২৬ জুন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক (দক্ষতামান ও পাঠ্যক্রম) ড. জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম রহিত করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন সিদ্ধান্ত আইনসঙ্গত নয়। কারিগরি শিক্ষাবোর্ড সংসদের আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। যা জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএর) বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত দিয়ে বন্ধ করা যায় না।
রাজধানীর ফার্মগেটে একটি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা কোর্স শেষ করলেও এসেসমেন্টে বসতে পারিনি। কবে নাগাদ পরীক্ষা হবে তাও জানি না। সব মিলিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। দ্রুত এর সমাধান চাই। এদিকে অতি দ্রুত কারিগরি বোর্ডের কার্যক্রম কেন চালু করা হবে নাÑ এই মর্মে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডকে একটি লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এতে বিবাদী করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা অধিদপ্তরের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর নোটিশটি পাঠিয়েছেন প্রফেশনাল কুকিং একাডেমির (পিসিএ) অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম। নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ভোকেশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্কের (এনটিভিকিউএফ) আওতায় আগের মতো এসেসমেন্ট গ্রহণ ও সনদ প্রদান কার্যক্রম শুরু করার জন্য বলা হয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করে ২০১৯ সালে। দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলার নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংস্থাটি গড়ে তোলা হয়েছে। এই সংস্থার চেয়ারপারসন হিসেবে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর গভর্নিং বডিতে ছিলেন মন্ত্রী, সচিবসহ মোট ২৯ জন। গত পাঁচ বছরে এনএসডিএ প্রায় মাত্র ১১ হাজার প্রশিক্ষণার্থীকে সনদ দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ফলাফলে প্রমাণ করে যে, দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এ কোর্স পরিচালনা করার সক্ষমতা নেই। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সমাপ্ত হওয়ার পর সনদ দেবে বোর্ড কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়। এখন এনএসডিএ সংক্ষিপ্ত কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীদের সনদ দিলে দেশে-বিদেশে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এতে পুরো সেক্টরে অরাজকতা দেখা দেবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একাধিক কর্তৃপক্ষ হলে বিপত্তি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কী সমস্যা, যাতে নতুন কর্তৃপক্ষকে এ দায়িত্ব দিতে হবে? একাধিক কর্তৃপক্ষ হলে এমন বিপত্তি দেখা দেবেই। এ ধরনের সমস্যার ফল ভালো হয় না। তিনি বলেন, মূলত সংক্ষিপ্ত কোর্সগুলো চালু করার প্রধান উদ্দেশ্য হলো দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। এভাবে চললে এসব কোর্সের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রাকিব উল্লাহ বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীদের অ্যাসেসমেন্ট করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যা অনুমতির জন্য দুই একদিনের মধ্যেই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (কারিগরি ৩) সাদিকুল ইসলাম বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয় নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পত্র পেলে শিগগিরই এর সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোরের আকাশ/ সু