logo
আপডেট : ১ অক্টোবর, ২০২৪ ১৪:১০
দরপত্রের সময় বাড়ল
সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, আশানুরূপ সাড়া মেলেনি
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক

সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, আশানুরূপ সাড়া মেলেনি

আন্তর্জাতিক বাজারে তেল-গ্যাসের চড়া দামের মাঝে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে ডাকা দরপত্রে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত দরপত্র জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো হয়েছ। এবার সাড়া পাওয়া যেতে পারে বলে আশা করছে পেট্রোবাংলা। গত ৮ মে এক সেমিনারে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল- সাতটি কোম্পানি দরপত্র কিনেছে। যদিও পেট্রেবাংলা ৫০টির বেশি কোম্পানির কাছে নিজস্ব উদ্যোগে ইমেল করে দরপত্রে অংশ নেওয়া আহ্বান জানিয়েছিল বলে দাবি করে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক এসব কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য ওই সব দেশের রাষ্ট্রদূতদের আহ্বান করা হয়। এরপরও আশা জাগানো সাড়া পায়নি বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরের মিয়ানমার এবং ভারত অংশে তেল গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন জোরদার করেছে দেশ দুটি। বাংলাদেশ সেই হিসাবে পিছিয়ে রয়েছে। উপরন্তু, বাংলাদেশ ছেড়েছে মার্কিন কোম্পানি কনোকো ফিলিপস এবং কোরিয়ান কোম্পানি পোসকো দাইয়ু। অন্যদিকে ভারতের কোম্পানি ওএনজিসি অগভীর সমুদ্রে একটি কূপ খনন করে গ্যাস পায়নি। আরও একটি কূপ খনন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তারা। কিন্তু কোম্পানিটি কূপ খনন করার দরপত্র আহ্বান করার পর অস্বাভাবিক দাম হেকেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এই বাস্তবতায় ওএনজিসি কূপ খনন করার বিষয়ে খুব একটা আগ্রহী না। ইতোমধ্যে তারা পেট্রোবাংলাকে বিষয়টি অবহিত করেছে। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপড়েনে ওএনজিসি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে থাকবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, মার্কিন কোম্পানি এক্সনমবিল ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের আগে বঙ্গোপসাগরে ব্লক ইজারা চেয়ে দেনদরবার করে। কিন্তু ওই সময় ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে আওয়ামী লীগ সরকার ব্লক ইজারা দিতে চায়নি। তারপরও এক্সনমবিলের প্রতিনিধি দল ব্লক ইজারার বিষয়ে ঢাকা সফর করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের উন্নতি না হওয়ায় কাজ পায়নি এক্সনমবিল। তবে বঙ্গোপসাগরে এক্সনমবিল ছাড়াও মার্কিন আরেক প্রতিষ্ঠান শেভরনের আগ্রহ রয়েছে। শেভরন বাংলাদেশের স্থলভাগের সব চেয়ে বড় গ্যাস উত্তোলন কোম্পানি। বিগত সরকার শেভরনকে সিলেটে তেল- গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য নতুন এলাকা বরাদ্দ দিয়ে গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সাগরে এবার বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছে চীন। দেশটির রাষ্ট্রীয় কোম্পানি সিনুক বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ দেখিয়ে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এছাড়া মালয়েশিয়া, জাপান, নরওয়ে, ইতালির বিভিন্ন কোম্পানি বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কোম্পানিগুলো কীভাবে সাড়া দেয়- এখন সেটাও দেখার বিষয় বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। একটি পক্ষ রাজনৈতিক অস্থিরতা হিসেবে দেখলেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি অনেকেরই আস্থা রয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের বড় সমর্থন পাচ্ছে তার সরকার। সেই হিসেবে কেউ কেউ আশা করছেন সময় বাড়ানোর কারণে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দরপত্রে সাড়া মিলতে পারে।

এর আগে ২০০৮ ও ২০১২ সালে মডেল পিএসসি করে দরপত্র আহ্বান করা হয়। তখনও তেমন কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে পিএসসি ২০১২ সালের আলোকে ২০১৮ সালে কোরিয়ান কোম্পানি পোসকো দাইয়ূকে কাজ দেয় সরকার। তারাও কাজ না করেই চলে যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে ‘অফশোর বিডিং ২০২৪’ আহ্বান করা হয়। কিন্ত মাত্র সাতটি কোম্পানি দরপত্র কেনায় বিষয়টিকে ‘ভালো সাড়া’ না পাওয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং দরপত্র কেনার সময় বাড়ানো হয়। অন্তর্র্বতী সরকারের অনুমোদন নিয়ে আগামী ৯ সেপ্টম্বর পর্যন্ত বিডিং রাউন্ডের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এধরনের বড় বিনিয়োগ পাওয়া কঠিন। এখানে যে ধরনের কোম্পানি কাজ করে, তারা সারা বিশ্বেই খুব প্রভাবশালী হয়। সাধারণত বেসরকারি কোম্পানি হলে ওইসব দেশের সরকারের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্টতা থাকে। ফলে আমরা চাইলেই তারা বিনিয়োগ করবে, এমনটি ভেবে বসে থাকা উচিত নয়। এছাড়া এ ধরনের বিনিয়োগ একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্যেরও অংশ। সঙ্গত কারণে এটি শুধু পেট্রোবাংলার বিষয় নয়। এর সঙ্গে সরকার এবং রাষ্ট্র সম্পৃক্ত।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, বেশ কিছু কোম্পানি আগ্রহী। তাদের আগ্রহ এবং অনুরোধের কারণেই দরপত্রের সময় বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া বেশিকিছু কোম্পানি জয়েন ভেঞ্চারে কাজ করতে আগ্রহী। সেক্ষেত্রে বেশি সময় প্রয়োজন। সব মিলিয়ে সময় বাড়ানো হয়েছে। এতে করে দরপত্র কেনার ক্ষেত্রে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ভোরের আকাশ/ সু