logo
আপডেট : ১ অক্টোবর, ২০২৪ ১৭:৩২
চিকিৎসায় ও ওষুধ সরবরাহে ত্রুটির সমাধান জরুরি
মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম

চিকিৎসায় ও ওষুধ সরবরাহে ত্রুটির সমাধান জরুরি

লেখাটি আমি দুটি গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই। এই গল্প দুটি একদম সত্য, বাস্তব ও আমার জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা। প্রথম ঘটনাটি কয়েক দিন আগের। আমার কন্যাদের মা বেশ পেরেশানে পড়েছেন। তার এই পেরেশানের কারণ ত্রিমুখী। প্রথমত, একটি দুর্ঘটনায় আঘাত পেয়ে তার পায়ের গোড়ালি ফেটে গেছে। ডাক্তার প্লাস্টার ব্যান্ডেজ করে দিয়ে ২১ দিনের পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, নিজের শারীরিক অবস্থা যখন কাহিল, দুই মাস বয়সী কন্যার শরীরে পক্সের মত দানাদার কিছু একটা বের হয়েছে। ঠিক একই অবস্থা বড় মেয়ের শরীরেও। আর এদিকে পেশাগত জীবন যুদ্ধে আমি তাদের গ্রামের বাড়িতে রেখে আছি ঢাকায়। তো হঠাৎ তার ফোন আসে। অসময়ে এই ফোন। কণ্ঠে তার অসহায়ত্ব ও আশঙ্কা। তিনি জানান, “দুই মেয়ের শরীরেই পক্স বের হয়েছে। ওরা বেশ কষ্ট পাচ্ছে। কি করব বুঝতে পারছি না। কিছু একটা করো।” স্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনে কিছুটা বিচলিত বোধ করলেও তাকে বুঝতে দিলাম না। কথা শেষ করে কয়েকজন ডাক্তার বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। তারা সবাই পরামর্শ দিলেন স্থানীয় উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে যেতে। সরাসরি ডাক্তারকে দেখাতে। পিতৃমন আমার। খুবই অস্থির হয়ে পরিচিত এক ডাক্তারকে ফোন দিলাম। উপজেলা শহরে চেম্বার করেন তিনি। তিনি বলেন, “পাঠিয়ে দেন মেয়েকে। চিন্তা করবেন না। দেখে দেব। ভালো হয়ে যাবে।” ডাক্তারের কথা শেষ করেই জানালাম স্ত্রীকে সেই ডাক্তারকে ছোট মেয়েকে দেখানোর জন্য। কোনো দিশা না পেয়ে দুই মাসের শিশুকে বুকে নিয়ে ছুটে যান আমার শাশুড়ি। ডাক্তার খুব যত্ন করে দেখেও দেন। দেন বেশকিছু ওষুধও। কিন্তু ঘণ্টা দুয়েক পর বাচ্চার মায়ের কাছ থেকে ফোন আসে আবার। এবার ওপাশ থেকে তার কণ্ঠে মিশে আছে রাগ, ক্ষোভ আর অনিশ্চিয়তা। যথারীতি কিছুটা অসহায়ত্বও। কেননা তিনি কোনোভাবেই বুঝতে পারছেন না যে, এত পরিমাণ ওষুধ দুই মাস বয়সী বাচ্চাকে কীভাবে খাওয়াবেন। প্রেসক্রিপশনে লেখা আছে আট মিলিগ্রাম করে দিনে তিন বার। কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে ফোন রাখি আমি। সঙ্গে সঙ্গে ফোন দেই আরেক ডাক্তার বন্ধুকে । তিনি জানান এত পরিমাণ ওষুধ দেওয়ার কথা নয়। আবার ফোন দিই ওষুধের দোকানিকে, যার থেকে ওষুধ কেনা হয়েছে। তিনি প্রেসক্রিপশনটি নিয়ে যেতে বলেন। আরেকজনকে দিয়ে পাঠানো হয় সেই প্রেসক্রিপশন। প্রেসক্রিপশনটি দেখে তিনি বলেন ওষুধের পরিমাণ হবে দশমিক আট মিলিগ্রাম। সেভাবেই ওষুধ খাওয়ানো হয়। আমাদের বাচ্চা এখন ভালো আছে।

দ্বিতীয় ঘটনাটি ঢাকার একটি নামকরা ওষুধের দোকানের। আমার নিজের জন্য ওষুধ কিনতে গিয়েছি। প্রেসক্রিপশনটি দেখার পর তিনি ওষুধ দেন আমাকে। ওষুধ নিয়ে আমি বাড়ির পথে হাঁটাও ধরি। কিন্তু হঠাৎ মাথায় খটকা জাগে দোকানি আমাকে সঠিক ওষুধটি দিয়েছেন তো? আমি আবার ফিরে যাই সেই দোকানে। ওষুধটি দেখিয়ে আমি জানতে চাই যে সেটি কোন রোগের জন্য সেবন করা হয়? কিংবা ডাক্তার কোন রোগের জন্য সেবনের পরামর্শ দেন? আমার বোকা বোকা প্রশ্নে তিনি পুলকিত হয়ে আমার দিকে একটু করুণার দৃষ্টিতে তাকান। তিনি বলেন, “কেনো? এটা তো নারীদের হরমোনজনিত সমস্যার ওষুধ।” তখন আমি জানালাম, আপনি সঠিক ওষুধটিই দিয়েছেন। কিন্তু “আমি তো এটা চাইনি। আমি তো চেয়েছি হৃদরোগজনিত সমস্যার ওষুধ।” তাৎক্ষণিক ভুল বুঝতে পেরে তিনি আমার কাছে ক্ষমা চান এবং সঠিক ওষুধটি দেন।

এই দুই ঘটনাকে বিভিন্নভাবে দেখার, ব্যাখ্যার ও উপলব্ধির সুযোগ আছে। প্রথমত, ঘটনা দুটি রোগীকে ওষুধ প্রদানে নিছক ভুল, দ্বিতীয়ত ডাক্তার ও ওষুধের দোকানির যোগাযোগ দক্ষতার ঘাটতি, তৃতীয়ত রোগী ও স্বাস্থ্যসেবাকর্মীর মাঝে যোগাযোগ বিভ্রাট এবং চতুর্থত, রোগীর স্বাস্থ্য সাক্ষরতা ও ওষুধ সাক্ষরতা থাকা ও না-থাকার প্রশ্ন।

এবার, প্রথম ঘটনাটি একটু তলিয়ে দেখা যাক। দেড় মাস বয়সী একজন শিশুর জন্য কীভাবে একজন ডাক্তার এমন একটা অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন লিখেন, যা এত বেশি পরিমাণের ওষুধ হয়ে যায়? ডাক্তারদের বিরুদ্ধে প্রেসক্রিপশনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ লেখার অভিযোগ অনেক পাওয়া যায়। ওষুধ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোন কোন অনুঘটক প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে? আমার বাচ্চাটির প্রেসক্রিপশনের ক্ষেত্রে যা ঘটেছিল, একটু খোঁজ নিয়ে জানতে পারি যে, ডাক্তার আসলে আট মিলিগ্রাম করে তিন বেলা ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেননি। প্রেসক্রিপশনে তিনি আসলে লিখেছিলেন দশমিক আট মিলিগ্রাম পরিমাণ ওষুধ। তবে দশমিকের আগে একটি শূন্য দেননি। কোনো কারণে দশমিকের চিহ্নটি বুঝাও যায়নি। প্রেসক্রিপশনের এই ভুলটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় মেডিকেশন এরর। এছাড়াও এই ওষুধ প্রদান ও গ্রহনের ক্ষেত্রে যেসব ত্রুটি ঘটে থাকে তা হলো: ওষুধ বিতরণে ত্রুটি, লেবেলিং ত্রুটি, সংরক্ষণ ও হ্যান্ডলিং ত্রুটি, রোগী যদি আগে কোনো ওষুধ খেয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে তা মিলিয়ে ওষুধের ধরন ও পরিমাণ নির্ধারণে ত্রুটি; ডাক্তারের পরামর্শমাফিক ওষুধ প্রদান ও সেবনে ত্রুটি এবং ওষুধ নিরাপত্তায় ঘাটতি। এই ধরনের ভুলগুলো নানাভাবে ঘটে থাকে। প্রথমত, ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে ভুল করেন। যেমন, ওষুধের প্রয়োজনীয় ও সঠিক পরিমাণ বা ডোজ লিখেন না। কোনো একটি ওষুধ কখন কখন, দিনে কতবার ও কীভাবে ওষুধ সেবন হবে তা বুঝিয়ে বলেন না। আমাদের আলোচ্য ঘটনাটি কিন্তু ডাক্তারের সুস্পষ্ট ও কার্যকর যোগাযোগ দক্ষতার ঘাটতি থেকেই হয়েছে। এখানে তার ক্লিনিক্যাল দক্ষতা, মানবিক গুনাবলি ও সেবার মানসকিতার কোনো ঘাটতি ছিল না। কেননা, তিনি সুস্পষ্ট ও বোধগম্যভাবে লিখেননি। আবার তার লেখা ও পরামর্শ রোগী বুঝতে পেরেছেন কি না যাচাই করেননি। অন্যদিকে ওষুধের দোকানিও রোগীকে প্রেক্রিপশন বুঝিয়ে দেননি। স্বাস্থ্য সাক্ষরতার ঘাটতির কারণে রোগীর পরিবারের লোকজন তথা আমার শাশুড়ি, ডাক্তার কিংবা ওষুধের দোকানিকে কোনো প্রশ্নও করেননি। ওষুধ সেবন প্রণালী বুঝিয়ে নেননি। 

এমন ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণতা রোগী সঠিক পরিমাণে ও সঠিকভাবে ওষুধ সেবন করে না। ফলে সেই ওষুধ রোগীর শরীরের কার্যকরভাবে ক্রিয়াশীল হয় না। জন্ম দেয় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার। কিংবা সৃষ্টি হয় স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও অনিরাপত্তার। ওষুধের পরিমাণ ও মাত্রা সঠিক না হওয়ার বিষয়টি সারা বিশ্বেই জনস্বাস্থ্যের প্রশ্নে মারাত্মক দুশ্চিন্তার বিষয়। কেননা এর ফলে রোগীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। বাড়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যয়। শুধু তাই নয়, রোগীর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে, রোগীর শরীরে দেখা দেয় মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া; চিকিৎসা সঠিকভাবে কার্যকর হয় না; রোগীর শারিরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে; কখনও কখনও রোগীর মত্যু ঘটে; রোগীর মনে ভীতির সঞ্চার হয়; স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা, ডাক্তার ও অন্যান্য চিকিৎসা সেবাকর্মীদের ওপর রোগীর আস্থা কমে যায়; যেকোনো ওষুধ গ্রহনে রোগীর মনে শঙ্কা কাজ করে; ডাক্তারের পরামর্শ পুরোপুরি মেনে চলে না এবং রোগীর ভোগান্তি যায় বেড়ে। শুধু তাই নয় এই ভুলের কারণে ডাক্তারের সুনাম ক্ষুণ্ন হয় এবং তাকে আদালতের কাঠগড়ায়ও দাঁড়াতে হতে পারে। যাহোক, প্রথম ঘটনা থেকে কিছু প্রশ্ন আমার মনোজগতকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। আর সেই প্রশ্নগুলো হলো, আমাদের বাচ্চার মা তথা আমার স্ত্রীর যদি সচেতন না হতেন, আমাকে ফোন দিয়ে ওষুধের পরিমাণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ না করতেন তাহলে আমাদের সন্তানের কী হতো? এরকম ভুল কি কেবল আমাদের সন্তানের ক্ষেত্রেই হলো? না অন্যদের ক্ষেত্রেও এমনই হয়? আর এরকম ভুলের কারণে কত শিশু কেবল ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হয়? আমাদের দেশে কত সংখ্যক শিশুর মৃত্যু হয় কেবল ভুল পরিমাণে, ভুল মাত্রার ওষুধ সেবন করার কারণে? এসব মৃত্যুর কী কোনো হিসেব আমাদের দেশে আছে? আর হিসেব থাকলে সেগুলো কী কেবলই সংখ্যা মাত্র?

এবার আসা যাক, দ্বিতীয় গল্পে। এখানে যে ভুলটি হয়েছিল তা মূলত ওষুধের দোকানির ও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর। দোকানি ওষুধের রং, প্যাকেটের রং, আকারে মিল থাকা এবং সঠিকভাবে ও সঠিকগুচ্ছে ওষুধ সংরক্ষণ না করার কারণে তিনি সঠিক ওষুধ দেননি। না বুঝে নারীর হরমোনের ওষুধ সেবন করলে কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হতে পারতাম আমি?

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসেব মতে, অনিরাপদ ওষুধ সেবন ও ভুলের কারণে প্রতি বছর গড়ে ৪২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়। গোটা বিশ্বে শারীরিক উপঘাতের শীর্ষ কারণগুলোর একটি হলো ওষুধ প্রদান, গ্রহণ ও সেবনে ত্রুটি। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এই ক্ষতি ও ঝুঁকির মাত্রা উন্নত দেশগুলোর তুলনায় দ্বিগুণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ভুল ওষুধের শিকার হন প্রায় ৭ মিলিয়ন রোগী। একারণে বছরে প্রায় ৭ হাজার রোগী মারা যায় দেশটিতে। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যে এই মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি বছর গড়ে ১৭০৮। আর ইউরোপীয় ওষুধ সংস্থার হিসেব অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতি বছর ১,৯৭,০০০ মৃত্যু ঘটে চিকিৎসা সংক্রান্ত ত্রুটির কারণে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ভারতের হাসপাতালগুলোতে ওষুধ সেবনের ত্রুটির হার ১৫.৩৪% থেকে ২৫.৭% ।

বাংলাদেশে এসম্পর্কিত কোনো পরিসংখ্যান নেই বললেই চলে। কারণ এনিয়ে তেমন গবেষণা হয়নি। রোগীদের মাঝে সচেতনতার ঘাটতি আছে বেশ। গণমাধ্যমও গভীর প্রতিবেদন করে না। মাঝে মধ্যে কেবল ‘ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু’ এমন শব্দবন্ধ দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দায়িত্ব সারে গণমাধ্যমগুলো। তবে ‘মেডিকেশন এরর ইন এ প্রাইভেট হসপিটাল’ শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন তৃপ্তি রানী পাল ও তার সহযোগীরা। এটি বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালে। এই গবেষণায় তারা ১২৩৪টি নির্ধারিত ওষুধ থেকে ৬৯২টি (প্রতি প্রেসক্রিপশনে ৩.৪৬) ওষুধ সম্পর্কিত সমস্যা চিহ্নিত করেন। তারা দেখতে পান ৬৩টি ওষুধের নাম অস্পষ্ট হস্তলিপির কারণে পরিষ্কার ছিল না; ২১৯টি ওষুধের ডোজের শক্তি অনুপস্থিত ছিল এবং এর মধ্যে ৪২টি ওষুধ বাজারে একাধিক ডোজ শক্তিতে পাওয়া যায়। ভুলভাবে পরমর্শ দেওয়া ৩৬৬টি ওষুধের মধ্যে ১২.৫৭% পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছিল গুরুতর, এবং ৫৩.২৮%-এর উল্লেখযোগ্য মাত্রার।

যোগাযোগের দৃষ্টিকোণ থেকে এসবকিছু আসলে স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে যোগাযোগের ঘাটতিকে নির্দেশ করে। একজন ডাক্তারের কর্তব্য হলো তার রোগীকে রোগের কারণ; ডায়াগনোসিস বা রোগের নাম; প্রোগনোসিস ও মাত্রা; চিকিৎসা তথা ওষুধ বুঝিয়ে দেওয়া। প্রয়োজনে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, ডায়াগনোস্টিক টেস্টের ফল, রোগ প্রতিরোধে করণীয় (পথ্য) ইত্যাদি ব্যাখ্যা করবেন, তিনি নিজেই তা করবেন। অর্থাৎ কোনো সহকারী বা ফার্মাসিস্টকে দায়িত্ব না দিয়ে নিজেই বলবেন। এবং রোগী বুঝেছেন কিনা তা জিজ্ঞেস করবেন। অন্যদিকে ওষুধের দোকানদার ডাক্তারের হাতের লেখার পাঠোদ্ধার করতে না পারার ফলে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন সঠিকভাবে বুঝতে পারেন না। ফলে ডাক্তার যে ওষুধ ও যা মাত্রার ওষুধ পরামর্শ দিয়েছেন তা না দিয়ে অন্য কোনো ওষুধ ও অন্য মাত্রার ওষুধ দিয়ে দেন। রোগীকে সঠিকভাবে কাউন্সেলিং না করলে অর্থাৎ কীভাবে ওষুধ খেতে হবে, সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো কী কী তা বুঝিয়ে না বললে; রোগীকে সঠিক তথ্য না দিলে এসব ভুল ঘটতেই থাকবে। বাড়বে শারীরিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকির মাত্রা। ডাক্তারেরা অত্যধিক কাজের চাপ, অধিক সংখ্যক রোগী দেখার তাড়না, এবং অবোধগম্য হাতের লেখার কারণে এসব সমস্যার সৃষ্টি হয়।

তাহলে এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কী? এই সমস্যাকে বিবেচনা করতে হতে বায়োমেডিসিন, জনস্বাস্থ্যবিদ্যা ও যোগাযোগ বিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে। যোগাযোগ বিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত জরুরি হলো দেশের স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে একটি সমন্বিত যোগাযোগ প্রটোকল প্রণয়ন। এবং এর প্রচার ও প্রসার নিশ্চিত করা। স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবীদের মধ্যে তথা ফার্মাসিস্ট, নার্স এবং চিকিৎসকদের মাঝে একটি সুনির্দিষ্ট, সুষ্পষ্ট ও কার্যকর যোগাযোগ প্রটোকল বিতরণ ও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ওষুধের আদেশের জন্য একটি মানসম্মত ফরম্যাট ব্যবহার করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যে ডাক্তার থেকে ওষুধের দোকানি পর্যন্ত এই প্রটোকলটি ভালোভাবে বুঝতে পারেন। ডাক্তার ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের চিকিৎসা কারিকুলামে বিহ্যাভিওরাল সায়েন্স, মেডিকেল হিউম্যানিটিজ ও ক্লিনিক্যাল যোগাযোগের মত বিষয়গুলো পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।

ভোরের আকাশ/রন