আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রভাবশালী সাবেক দুই আমলা, ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সাবেক এক চেয়ারম্যানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা হলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব ও উপদেষ্টা কামাল নাসের চৌধুরী, সাবেক যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ, এক্সিম ব্যাংক ও বিএবির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার এবং বসুন্ধরা গ্রুপের কো-অর্ডিনেটর আদনান। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়ে বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী কবি কামাল চৌধুরী হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থ মেয়াদের সরকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব দিয়েছিলেন।সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার আগে কামাল চৌধুরী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) প্রশাসন ক্যাডারে ১৯৯৩ সালে যোগদান করেন। তার গ্রামের বাড়ি ভোলায়। বিসিএস ১১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা যুব ও ক্রীড়া সচিব হওয়ার আগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাবেক পিএস, খুলনার জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাংক খাতের আলোচিত নাম ছিলেন এক্সিম ব্যাংক ও ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, যিনি নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান। আশুলিয়ায় অবস্থিত তার গ্রুপের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে সম্প্রতি আন্দোলনেও নামে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের মত ব্যাংক খাতের উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ আত্মগোপনে চলে যান। নজরুল ইসলাম মজুমদারও ওই সময় থেকে আর প্রকাশ্যে আসেননি। আলোচনা ছিল তিনি বিদেশে চলে গেছেন। ক্ষমতার পালাবদলে ব্যাংক খাতে পরিবর্তনের অংশ হিসেবে গত ২৯ আগস্ট এক্সিম ব্যাংকে তাকে বাদ দিয়ে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে বিএবির নেতৃত্বও হারান তিনি। এর মাধ্যমে ১৭ বছর পর নজরুল ইসলামের বলয় থেকে বের হয় শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটির পর্ষদ। নজরুল ইসলাম মজুমদার ২০০৭ সাল থেকে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। তিনি ২০০৯ সাল থেকে ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। বিএবি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকার সময় বেসরকারি ব্যাংক থেকে চাঁদা তুলে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা নিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।
এর আগে ২৫ আগস্ট এক্সিম ব্যাংক ও বিএবির চেয়ারম্যান এবং তার স্ত্রী নাছরিন ইসলামের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ রাখতে নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ। ব্যাংক থেকে নানা সময় চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তন করে উদ্যোক্তাদের সুবিধা বাড়ানো ও নীতি পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার অভিযোগও রয়েছে।
ভোরের আকাশ/রন