logo
আপডেট : ৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১৭:২৫
১০ম শ্রেণিতে থাকতেই রিমান্ডে গেছিলেন ঢাবি শিবির নেতা
ঢাবি প্রতিনিধি

১০ম শ্রেণিতে থাকতেই রিমান্ডে গেছিলেন ঢাবি শিবির নেতা

সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ১৪ সদস্যের কমিটি। প্রকাশিত হওয়ার আগে থেকেই শিবির নিয়ে জনমনে ছিলো নানা আলোচনা। এবার শিবির করায় কী কী নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে জানালেন শিবির নেতারা। ঢাবি ছাত্র শিবিরের বায়তুল মাল সম্পাদক আলাউদ্দিন আবিদ সংগঠন করার ১০ম শ্রেণিতে থাকাকালীনই রিমান্ডে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসিতে গণমাধ্যমকে একথা বলেন তিনি। এসময় কথা বলেন সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদসহ আরও অনেকে।

আলাউদ্দিন বলেন, "এ সংগঠনের সাথে আমার যাত্রা শুরু হয় আমার নিজ এলাকা মীরেশ্বরাই, ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে থেকে। আমাদের কেন্দ্র ঘোষিত মিছিল ছিল। সেখানে মিছিল শেষে স্থানীয় ছাত্রলীগ আমাদের ধরে নিয়ে যায়, নির্যাতন করে থানায় পাঠিয়ে দেয়। থানায় আমাদেরকে ২টি মামলা দেয়। ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট একটি মামলায় ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। তখন আমি দশম শ্রেণীর ছাত্র, বয়স ছিলো মাত্র ১৮ বছর তবুও আমাকে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

তখন আমি মাত্র দাখিল পরীক্ষার টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছিলাম। টেস্ট পরীক্ষা দেয়ার পর এরেস্ট হয়ে যাই। এর পরে দুই মাস পরে ছাড়া পাই। থানা থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও এলাকায় স্থানীয় ছাত্রলীগের হামলা ও প্রশাসনের মামলার ভয়ে নিজ এলাকা ত্যাগ করতে হয় বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় শিবির শাখার স্কিল ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল আমিন। তিনি বলেন, আমি কোন গুরুতর নির্যাতনের শিকার হইনি। তবে বিগত রেইজিমে আমার কতগুলো স্বপ্ন মাটিচাপা দিতে হয়েছে । আপনারা জানেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হয় এর রেসিডেন্সিয়াল সুবিধার জন্য। এখানে যারা পড়াশোনা করবে তারা হলে থাকার সুবিধা পায়। আমার ক্ষেত্রে এমনটা হওয়া উচিত ছিল। আমার বিজয় ৭১ হল এটাচ ছিল। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি এর এক বছর আগে বুয়েটের আবরার ফাহাদের ঘটনাটা ঘটে। তাই আমি হলে উটার ব্যাপারে যখন আমার পরিবারের সাথে কথা বলি তারা হলে উঠতে মানা করে। তারা বলে আবারর ফাহাদ শিবিরের সাথে যুক্ত ছিল না তবুও তার সাথে এমন হয়েছে আর আব্দুল্লা তো শিবিরের সাথে যুক্ত। তাকে হলে দেওয়া যাবে না। পারিবারিকভাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিল। তাদের সাথে পরামর্শ করলেও তারা হলে উঠতে মানা করে।

তিনি বলেন, বিজয় ৭১ হলের একটা সুনম আছে। আমিও এই হল পেয়েছিলাম। হলে উঠতে চেয়েছিলাম কিন্তু ছাত্রলীগের শোডাউন, মোহড়া, গেস্টরুমের অশ্রাব্য গালিগালাজ, রাত বিরাতে হল থেকে বের করে দেওয়া ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে আমার পড়াশোনা চালানো কঠিন হয়ে যেত। যার জন্য হলে ওঠা হয়নি। ছোটবেলা থেকেই আমার কুকারিকুলাম এক্টিভিটির প্রতি বিরাট আকর্ষণ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে আমি একবার ঢাবিতে এসেছিলাম। ঢাবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ আমার খুব পছন্দ হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঠে খেলবো,সুইমিং পুলে সুইমিং করবো, বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিবেট করবো আরো কত কি স্বপ্ন ছিল আমার। কিন্তু যখন আমি হলে থাকার সুযোগ না পাই তখন আমার এই স্বপ্নগুলো মাটিচাপা পড়ে যায়। আমি বাসায় থাকতাম ফজরের পর বাসা থেকে বের হতাম ক্লাস শেষে আবার বাসয় ফিরতাম। আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজ যারা আছে তাদের যেন এরকম স্বপ্ন আর মাটিচাপা দিতে না হয় বিগত ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদের শসনামলের মতো।

ঢাবি শিবির সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ বলেন, ছাত্র শিবির হচ্ছে সবচেয়ে মজলুম ও নির্যাতিত একটি সংগঠন। আমাদের কেউ কেউ দশম শ্রেণি থেকে রিমান্ডে গিয়েছে, কেউ কেউ আর্থিক সমস্যা থাকার পরেও হলে উঠতে পারেনি। এখনও যারা বার বার ছাত্রলীগের বিশেষত্বে শিবিরকে নতুন করে জুলুম করছেন তাদের অন্তত বিবেক দিয়ে ভাবা উচিৎ।

ভোরের আকাশ/ সু