logo
আপডেট : ৬ অক্টোবর, ২০২৪ ১০:০৫
বিএনপির চাওয়া নির্বাচন জামায়াত চায় সংস্কারও
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক

বিএনপির চাওয়া নির্বাচন
জামায়াত চায় সংস্কারও

  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সংলাপ
  • আবারও নির্বাচনি রোডম্যাপ চাইলো বিএনপি
  • আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন- জামায়াত

আবারও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইলো বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। গতকাল শনিবার বিকেলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আয়োজিত সংলাপে এই রোডম্যাপ চেয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।

গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত সংলাপে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোট, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং এবি (আমার বাংলাদেশ) পার্টির সঙ্গে সংলাপে বসেন প্রধান উপদেষ্টা। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এনিয়ে তৃতীয়দফা সংলাপ বসলেন ড. ইউনূস। সবশেষ গত ৩১ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

এই বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণাসহ একগুচ্ছ দাবি বিএনপির: গতকাল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যমুনায় সংলাপে বসে বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহ উদ্দিন আহমেদ।

এই বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, একই সঙ্গে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার মূল হোতা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার মূলনায়ক বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যেও এমন অনেকে আছেন, যারা গণঅভ্যুত্থানের যে স্পিরিট সেটাকে ব্যাহত করছেন। তাদেরকে সরাতে বলেছি। প্রধান উপদেষ্টার কাছে চুক্তিভিত্তিক কিছু নিয়োগ বাতিলের প্রস্তাব করেছি।

মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে বলেছি। নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন স্থগিত করে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে দাবি করেছি। নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কবে হবে সে বিষয়ে রোডম্যাপ দিতে বলেছি। বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি যেন নির্বাচন সংস্কার কমিটিতে না যায়, সেটা বলেছি।

তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে বলেছি। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় ভুয়া ভোটের মাধ্যমে হওয়া সকল ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করতে বলেছি। সেই সঙ্গে ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালে নির্বাচনের সময় যারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কমিশনার ছিলেন তাদেরসহ ভুয়া ও পক্ষপাতপুষ্ট নির্বাচন আয়োজনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।

তিনি বলেন, প্রশাসনের যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তাদের দোসর হয়ে লুটপাট, অনাচার, অত্যাচার, গুম-খুন, গণহত্যায় সহায়তা করেছেন, তাদের অবিলম্বে তাদের সরিয়ে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের আনার দাবি করেছি।

মির্জা ফখরুল বলেন, জেলা প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া জানতে চেয়েছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের নিয়োগ বাতিল করতে বলেছি। সেই সঙ্গে যোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা করার দাবি জানিয়েছি। গত ১৫ বছর ধরে যেসব সরকারি কর্মকর্তা পদোন্নতি বঞ্চিত রয়েছেন, তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি নিশ্চিত করার কথা বলেছি।

তিনি বলেন, হাইকোর্ট বিভাগে এখন পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন হয়নি। সেখানে প্রায় ৩০ জন বিচারক বহাল তবিয়তে কাজ করছেন। তাদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি।

তিনি আরও বলেন, ২০০৭ থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী শাসনামলে দায়ের করা সব মিথ্যা, গায়েবি, ভুয়া, সাজানো, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছি। তিনি বলেন, আমরা দেখছি, কিছু আমলা, পুলিশ কর্মকর্তা, সাবেক মন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। তারা কীভাবে পালাচ্ছেন, কার সহযোগিতায় পালাচ্ছেন, সে বিষয়গুলো দেখতে বলেছি। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। তাকে কেন্দ্র করে, তার মাধ্যমে যেসব অপপ্রচার চলছে, সে বিষয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা এবং তাকে ওই অবস্থান থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিতে সরকারকে অনুরোধ করেছি।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ব্যাপারটা গভীরভাবে দেখে সেখানে কারা এই ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।

মির্জা ফখরুল বলেন, গুম-খুনের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের মধ্যে একমাত্র জিয়াউল হাসান ছাড়া আর কাউকেই ধরা হয়নি। অবিলম্বে গুম-খুনের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি। তিনি বলেন, জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলকে বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা সহযোগিতা করছেন না বলে যেসব খবর পাচ্ছি তা নজরে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি সরকারকে।

তিনি বলেন, পূজাকে কেন্দ্র করে সনাতনি ধর্মের কিছু মানুষ, সবাই না- অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে জনগণকে উস্কে দিচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার হচ্ছে, নির্যাতন হচ্ছে। যেটা সর্ব্যবে মিথ্যা। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে- এটা বলা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র। এই বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে বলেছি সরকারকে।

আগে সংস্কার, এরপর নির্বাচন- জামায়াত আমির: জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের জামায়াতের প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, আ ন ম শামসুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গত ৩টা নির্বাচনে জাতি বঞ্চিত হয়েছে। আগামীতে জাতির সামনে একটা গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া মূল কাজ। কিছু মৌলিক বিষয় সরকারকে সংস্কার করতেই হবে। কী কী মৌলিক বিষয়ে তারা সংস্কার করবেন সে বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ জায়গা থেকে সুস্থ পরিবেশ তৈরি করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সক্ষম হবে। এটি বেশি দীর্ঘ হবে না বলে আশা করিছ। তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকে বলে আসছি একটি যৌক্তিক সময় আমরা সরকারকে দিতে চাই।এই সময়টা কত দীর্ঘ হবে আমরা তা আগামী ৯ অক্টোবর আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো।

তিনি বলেন, জামায়াত সরকারকে দুটি রোডম্যাপ দিয়েছে একটি সংস্কারের, অন্যটি নির্বাচনের। ভোটের আগে সংস্কার চায় জামায়াত। আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন। এজন্য অনেক প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত।

জামায়াত আমির বলেন, জনগণ এবং সরকার একসঙ্গে কীভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো উন্নত করতে পারে, সব ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কথাবার্তা হয়েছে। আমরা আশা করছি, বর্তমান সরকার কোনো ধরনের পক্ষ-বিপক্ষের মানসিকতা না নিয়ে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে দেশকে একটা ভালো পর্যায়ে নিয়ে নির্বাচন দিতে সক্ষম হবে।’

তিনি বলেন, ‘দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার জন্য করণীয় কী এমন একটি প্রশ্ন এসেছিল। আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। জনগণের সঙ্গে সরকারের পার্টনারশিপ লাগবে। জনগণের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনগণ যদি একসঙ্গে কাজ করে একটা অভূতপূর্ব দুর্গাপূজা হিন্দু ধর্মের ভাইবোনরা উদযাপন করতে পারবেন।’

 

ভোরের আকাশ/রন