বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে আমাদের বেকার সমস্যা যেমন কমে আসছে তেমনি বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সে অর্থনীতির চাকা দিনদিন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বলা চলে প্রবাসীদের আয়ের টাকায় বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলভিত্তি বৈদেশিক শ্রমবাজার থেকে প্রাপ্ত রেমিট্যান্স আয়। তাই এ খাতকে বলা যায়, বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।
গত সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স গত মাসের তুলনায় ১৮০ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে, যা গত তিন মাসে সর্বোচ্চ প্রবাহ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ১.০৭ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে, যা বছরে ৮০.২২ শতাংশ বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত মাসে মোট ২.৪০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত বছরের একই মাসে ১.৩৩ বিলিয়ন ডলার ছিল।
এছাড়া, সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স গত মাসের তুলনায় ১৮০ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে, যা গত তিন মাসে সর্বোচ্চ প্রবাহ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিদেশে শ্রমবাজার যত সম্প্রসারিত হবে ততই এর পরিমাণ বাড়বে। চাঙ্গা হবে বাংলাদেশের অর্থনীতি। কমে আসবে বাংলাদেশের বেকার সমস্যা। আর সেক্ষেত্রে সফলতা বয়ে আনতে হলে বিদেশে শ্রমিক রপ্তানির ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। গতকাল দৈনিক ভোরের আকাশে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার খুলছে। গত শুক্রবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ৫৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসার পর দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও শ্রমবাজারসহ নানা ইস্যুতে আলোচনার মাধ্যমে দুদেশের সম্পর্ক আরো জোরদার হয়েছে বলে আমরা মনে করি। ভিসা পাওয়ার পরও যেতে না পারা ১৮ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিককে মালয়েশিয়ায় নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এটি আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে সুখবর বটে। একই সঙ্গে মালয়েশিয়ায় শ্রম বাজার খুলে দেয়ারও আশ^াস মিলেছে। গত দেড় দশকে বিভিন্ন সময়ে মালয়েশিয়া শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছে। সর্বশেষ গত ১ জুন সর্বশেষ মালয়েশিয়া শ্রমবাজার বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে করে ওই সময় ১৭ হাজার ৭৭৭ জন বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়া গিয়ে চাকরি করার সুযোগ বঞ্চিত হন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে সেই বঞ্চিত কর্মীরা মালয়েশিয়ার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। এজন্য মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আমাদের এই সুযোগকে আগামীতে আরো সম্প্র্রসারণ ও বেগবান করবেন বলেও আশারাখি।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যানুযায়ী ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশি অভিবাসীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ১৭৬টি দেশে কাজের জন্য মানুষ যায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ১১ দশমিক ৯৬ লাখ শ্রমিক কাজের উদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২২-২৩ সালে ১১ দশমিক ৩৭ লাখ শ্রমিক কাজের উদ্দেশে বিদেশ যান। ২০২৪ অর্থবছরে প্রায় ৪৪ শতাংশ অভিবাসী কর্মীর গন্তব্য ছিল সৌদি আরব এবং ২২ শতাংশের গন্তব্য ছিল মালয়েশিয়ায়। ২০২৪ অর্থবছরের শেষ দিন ৩০ জুনের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৪ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। তারপরও বিদেশে আমরা আমাদের শ্রমবাজার ধরে রাখতে প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হচ্ছি। ফলস্বরূপ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এই অভিবাসী কর্মীরা নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। এতে বিদেশে বাংলাদেশের ‘রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। রেমিট্যান্সপ্রাপ্তিতে বাংলাদেশ অষ্টম অবস্থানে থাকলেও অভিবাসী পাঠানোর ক্ষেত্রে বিশ্বে ষষ্ঠ। অভিবাসী পাঠানোর ক্ষেত্রে শীর্ষ ৫ দেশ হচ্ছে ভারত, মেক্সিকো, রাশিয়া, চীন ও সিরিয়া। নানা কারণে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের ভাবমূর্তি উন্নত হচ্ছে না। তাই বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বিস্তৃত করতে প্রয়োজন কিছু কাঠামোগত সংস্কার।
আমরা জানি, বিদেশের শ্রমবাজারে টেকনিক্যালি দক্ষ লোকদের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। সে সব শ্রমবাজারে দরকার প্রকৌশলগত দক্ষ জনশক্তি। দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে প্রবাসীদের যেমন, আয় বাড়বে তেমনি বাড়বে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখতে হলে জরুরিভিত্তিতে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর দৃশ্যমান সব বাধা দূর করতে হবে। প্রশিক্ষিত জনবল বাড়াতে হবে। বেকার জনগোষ্ঠীকে নানামুখী প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সে লক্ষ্যে সরকার পরিকল্পিত উদ্যোগ নিবে বলে আমরা আশাবাদী।
ভোরের আকাশ/রন