আবরার ফাহাদের মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর পলাশীর মোড়ে স্মরণ সভা ও আগ্রাসন বিরোধী আট স্তম্ভ পুননির্মাণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আয়োজনে এই স্মরণ সভা ও পুননির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়।
আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের জাহিদ আহসানের সঞ্চালনায় সভায় এসময় উপস্থিত ছিলেন আবরার ফাহাদের পিতা মো. বরকত উল্লাহ, আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ,জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, আহ্বায়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল কাদের, সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ , সমন্বয়ক সারজিস আলম,সমন্বয়ক মো. হাসিবুল ইসলাম, আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের মোল্লা রহমতুল্লাহ,আসাদ বিন রনি,রাসেল আহমেদ,আহনাফসহ প্রমুখ।
সভায় আবরার ফাহাদের পিতা মো. বরকত উল্লাহ বলেন, পাঁচ বছর আগে আমার ছেলেকে অত্যাচার করে হত্যা করা হয়। আমি এখনো আমার ছেলের বিচার পাইনি। আমি চাই আমার ছেলের হত্যার প্রকৃত বিচার পাই। আর পলাশীর মোড়ে যে আগ্রাসন বিরোধী আট স্তম্ভ নির্মাণ হবে তা যেন সুষ্ঠুভাবে নির্মাণ করতে পারে এবং এটি রক্ষণাবেক্ষণ হয়,কেউ যেন ভেঙে দিয়ে যেতে না পারে।
আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজ বলেন, প্রথম যখন ৭ অক্টোবর ২০২০ সালে এই আট স্তম্ভ নির্মাণ করা হয় তা পরেরদিনই ভেঙে ফেলা হয়। আমি তখন ভাবতাম এই স্তম্ভ আবার নির্মাণ করা হবে কি-না। পরিবারের কারো ক্ষতি যেন না হয় সেজন্য তখন আমরা কিছু বলিনি।
স্মৃতিচারণ করে ফাইয়াজ বলেন, আবরার ভাইয়ার যখন পানি চুক্তি ইত্যাদি নিয়ে পোস্ট দিতেন তখন আমি ছাত্রলীগের ভয়ে তাকে মানা করতাম কিন্তু সে বল্পতো কাউকে না কাউকে তো কথা বলতেই হবে। ভাইয়ার বিশ্বাস ছিল তাঁর রুমমেটরা তাঁকে সাহায্য করবে কিন্তু দেখা গেল তার এক রুমমেটই তার মৃত্যুর কারণ হয়েছে। যে সংগঠন মানুষকে খুনি বানায় তাদের সুষ্ঠু বিচার যেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করেন সে দাবি জানাচ্ছি।
আখতার হোসেন বলেন, আবরার ফাহাদ শুধু একক ব্যক্তি নয়, কোটি বাংলাদেশির স্বাধীনতার প্রতীক। আবরার ফাহাদ শাহাদাতের পাঁচটি বছর আজ পূর্ণ হলো। যখন আবরারকে হত্যা করা হয় তার পরই আমরা আন্দোলন করি, সরকার বাধ্য হয়ে খুনিদের গ্রেফতার করে কিন্তু এখনো বিচার হয়নি। অবিলম্বে আবরার ফাহাদের সকল খুনিকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই পাশাপাশি ফারদিন হত্যার সাথে জড়িতদেরও আইনের আওতায় যেন নিয়ে আসা হয়।
তিনি বলেন,আমরা এই পলাশীর মোড়ে যে আটটি স্তম্ভ নির্মাণ করেছিলাম সেখানে আমরা গণতন্ত্র , সার্বভৌমত্ব, মানবিক মর্যাদা, গণ প্রতিরক্ষা, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা, সম্প্রীতি ও সংহতি, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, জাতীয় সম্পদ রক্ষার কথা বলেছিলাম। কিন্তু সে স্তম্ভ ছাত্রলীগের নেতারা ভেঙে দেয়। আমরা চাই এমন একটা সরকার আসবে যারা তরুণ সমাজের পালস বুঝবে, বৈদেশিক আগ্রাসন প্রতিরোধ করবে। এসময় ৭ অক্টোবরকে আগ্রাসন বিরোধী দিবস হিসেবে পালনের দাবি জানান তিনি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা বলেন, শহীদ আবরারের জীবনের বিনিময়ে অভ্যুত্থানের পরবর্তীতে একটা নতুন সময় এসেছে। আর যেন কোন স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশে স্থান না পায়।
স্মরণসভা শেষে আগ্রাসন বিরোধী আটস্তম্ভ পুননির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
প্রসঙ্গত, শহীদ আবরারের স্মৃতি ধরে রাখার জন্যে পলাশীর মোড়ে ২০২০ সালে আটস্তম্ভ নির্মাণ করেছিলেন করা হয় । কিন্তু ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা করে সেই স্তম্ভ ভেঙে দেয়, সেসময় পুলিশ ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করে। স্মরণসভা শেষে সেই আটস্তম্ভের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় পলাশীর মোড়ের সেই জায়গাতে।
ভোরের আকাশ/মি