logo
আপডেট : ৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১১:০১
দৃশ্যমান হচ্ছে অনৈক্য
অন্তর্বর্তী সরকারের ২ মাস
নিখিল মানখিন

দৃশ্যমান হচ্ছে অনৈক্য

  • সরকার-প্রশাসন ও সমন্বয়কের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মতবিরোধী তৈরি হয়েছে
  • বিভিন্ন সময়ে বক্তব্য দিয়ে বিপাকে কয়েকজন উপদেষ্টা, একজনের দপ্তর বদল
  • সভা-সেমিনারে উপদেষ্টা ও আমলাদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় সমন্বয়করা
  • উপদেষ্টারা বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দিচ্ছেন পৃথক বক্তব্য
  • রদবদল ও ওএসডি আতঙ্কে প্রশাসন, কাজে স্থবিরতা

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের দুই মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের দুই মাস আজ পূর্ণ হলো। এই সময়ে কখনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের, কখনও উপদেষ্টা-সমন্বয়ক আবার কখনও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়কদের নানা ধরনের মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। গত দুই মাসে সভা-সেমিনারে তাদের দেওয়া বক্তব্যে ক্রমেই দূরত্বের আভাস মিলেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা একই সূত্রে গাঁথা। কিন্তু সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ করে বেশ কয়েকজন উপদেষ্টার কার্যকলাপের কড়া ভাষায় সমালোচনা করে চলছেন সমন্বয়করা। অপরদিকে একের পর এক রদবদল ও নিয়োগ কার্যক্রমে চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে প্রশাসনে। আবার সমন্বয়কদের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপে বিরক্ত অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রশাসন। এই ত্রিমুখী দূরত্ব চলতে থাকলে সংকট ঘনীভূত হবে বলে মনে করেন তারা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। তিন দিন পর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টাসহ এ সরকারের সদস্যসংখ্যা ২১। উপদেষ্টামণ্ডলীতে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ। মানবাধিকার, অর্থনীতি, প্রশাসন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলাসহ নানা ক্ষেত্রে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত, পদক্ষেপসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ১১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সরকার গঠনের এক সপ্তাহের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার ও সমন্বয়কদের মধ্যে মতবিরোধ দৃশ্যমান হয়ে উঠে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে স্বরাষ্ট্র থেকে সরিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা করা হয়। ঘটনার সূত্রপাত আওয়ামী লীগ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে এম. সাখাওয়াত হোসেনের বক্তব্য নিয়ে। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এম সাখাওয়াত হোসেন ‘আওয়ামী লীগ দল গোছাতে পারে, পুনর্গঠন করতে পারে’ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে এসে রাজনীতি করার বিষয়ে কথা বলেন। তার এ বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা সারা দেশে বিক্ষোভ করেন। তখন তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাখাওয়াতকে ক্ষমা চাইতে বললে তিনি নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এর তাকে স্বরাষ্ট্র থেকে সরিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে যাওয়ায় তথ্য তুলে ধরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। গত ১১ সেপ্টেম্বর বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত ছাত্র জনতার মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য উপদেষ্টার চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যাওয়া ছাত্র-জনতাকে আহত করেছে। ওনার টাকা আছে তাই উনি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যেতে পারছেন কিন্তু আমার দেশের জনগণের সে সামর্থ্য নেই।’ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা যদি সিঙ্গাপুরে যান, চিকিৎসা শেষে ফিরে এসে তিনি আর নৈতিকভাবে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা থাকতে পারেন না বলে মন্তব্য করেন সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

আন্দোলনে আহত ও নিহতদের তালিকা তৈরিতে বিলম্ব এবং আহতদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা প্রদান নিয়েও সরকারের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন সমন্বয়করা।

গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একমাস পূর্তিতে গত ৮ সেপ্টেম্বর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি কার্যালয় শাপলায় বেলা ১১টা থেকে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়, যা চলে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। এতে ১৫০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। এ সময় এ সরকারের কাছে নিজেদের প্রত্যাশা এবং মতামতের পাশাপাশি সরকারের নানা দুর্বলতা তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা।

সম্প্রতি সরকারি আমলাদের নিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ’র করা একটি মন্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মহলে বেশ আলোচনা হতে দেখা যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের মাসপূর্তির দিনে গত সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় যোগ দেন হাসপাত আব্দুল্লাহ। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে তার ‘অনুগত লোকেরা’ নানা সমস্যা সৃষ্টি করে নতুন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে। ‘প্রত্যেকদিন সিচ্যুয়েশন ডেভেলপ করে, প্রত্যেকদিন... এখন নেক্সট উইকে যে ক্যু-টা হতে যাচ্ছে, সেটা হচ্ছে সেক্রেটারিয়েট ক্যু,’ বলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।

‘প্রভু চলে গেছে, কিন্তু দাস যায় নাই’ -সচিবালয়ে ক্যু’র শঙ্কা প্রকাশ করে দেওয়া নিজের যে বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, সেটির বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

তিনি বলেন, এখানে ক্যু বলতে আমরা বোঝাতে চাচ্ছি যে, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের একটি অংশ অন্তর্বর্তী সরকারকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করছে না। যার ফলে প্রশাসনিক কাজে এক ধরনের স্থিতাবস্থা তৈরি হতে যাচ্ছে।
মূলত নতুন সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতেই ওইসব আমলারা ঠিকমত দায়িত্ব পালন করছেন না বলে মনে করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, বিপ্লবী পরবর্তী সময় হিসেবে এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তন দৃশ্যমান হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়ার পরেও সেই পরিবর্তন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। আর এটি ঘটছে প্রশাসনের ওই সব কর্মকর্তাদের কারণে, যারা অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে বিচারবিভাগ ও আনসার বাহিনীর ক্যু’র চেষ্টা সবাই দেখেছে। প্রতি মূহূর্তেই সরকারকে এরকম নতুন নতুন ষড়যন্ত্র ফেস করতে হচ্ছে, যার ফলে দেশ গড়ার কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।

গত ৮ সেপ্টেম্বর বিকালে নগরীর লালদীঘি ময়দানে ছাত্র-নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দেওয়া বক্তব্যে প্রশাসনকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করুন। আপনারা যদি ভেবে থাকেন, আপনারা রাগ করে বসে থাকবেন, অফিস-আদালতের কাজ করবেন না; তাহলে আপনারা ভুল ভাবছেন। এই আন্দোলনে কামার, কুলি, মুচি ছিল। ঠিক একইভাবে এই আন্দোলনে শিক্ষিত শ্রেণিও ছিল। সুতরাং আপনাদের রিপ্লেসমেন্টও হয়ে যাবে।’

পুলিশকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ছাত্র এবং পুলিশ হচ্ছে ভাই-ভাই। আমাদের কোনো বিভেদ নাই। আপনারা আপনাদের কাজে ফিরে আসুন। আপনাদের মধ্যে যারা খুনিদের দোসর ছিল তাদেরকে আমরা জানি। সব পুলিশ কিন্তু বেনজীর না। সব পুলিশ ডিবি হারুন না। আপনারা জনমুখী না হয়ে ক্ষমতামুখী হলে আপনাদের অবস্থাও বেনজীর এবং হারুনের মতো হবে।’

তার এই বক্তব্যের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে একদিকে যেমন ‘সচিবালয়ে ক্যু’ নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে, তেমনি কেউ কেউ প্রতিক্রিয়াও দেখাচ্ছেন। ‘স্বৈরাচারের দোসরদের’ প্রতিহত করার জন্য প্রয়োজনে ফের রাজপথে নামবেন বলেও জানাচ্ছেন অনেকে। সমন্বয়কের এমন বক্তব্যে প্রশাসনে বেড়েছে আতঙ্ক। অন্তর্বর্তী দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত প্রশাসনিক কাজে খুব একটা গতি ফেরেনি বলে জানাচ্ছেন সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।

এদিকে রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্য থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটি নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তারা বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের সফর শুরু করেছে। এ সফরকে ঘিরে তাদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ সদর দপ্তরের এক চিঠিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড প্রোফাইল থেকে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ কোনো নিরাপত্তা চাননি বলে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো রাষ্ট্রীয় সফরে আসিনি। আমরা রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিক হিসেবে ছাত্র Ñজনতার কাছে এসেছি। একজন সাধারণ নাগরিক যেমন নিরাপত্তা পায়, আমরাও তেমন নিরাপত্তা চাই। এর বেশি নয়। এই নোটিশের বিষয়ে আমরা অবগত নই; কিংবা সরকারের কাছে আমরা এমন কিছু চাইনি।’

এদিকে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানি নিয়েও চলছে দায় এড়ানোর খেলা। ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়ে থাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তার আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে সুপারিশ আসতে হয়। এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার তিন দিনের মাথায় গত ১১ আগস্ট মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘আমরা ক্ষমা চাচ্ছি। ভারতে কোনো ইলিশ পাঠাতে পারব না। এটা দামি মাছ। আমরা দেখেছি যে আমাদের দেশের মানুষই ইলিশ খেতে পারে না। কারণ, সব ভারতে পাঠানো হয়।’

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘উপহার হিসেবে নয়, ভারতে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানি করলে ডলার আসে। আমাদের এই মুহূর্তে ডলারের কেমন প্রয়োজন সেটা আপনারা জানেন। সেটা খুব ছোট করে দেখার মতো টাকা নয়। পাশাপাশি যারা ইলিশ চাইছেন, তারাও কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় অনেক সমর্থন দিয়েছেন। সেটি আমরা সবাই দেখেছি।’

অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২২ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ সরকারের সর্বোচ্চ মহলের সিদ্ধান্তে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করা হচ্ছে। রপ্তানির বিপক্ষে যারা বলে তারা ইমোশনাল। এর বাণিজ্যিক সুবিধা আছে। ফরেন কারেন্সি আসে।’

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই প্রশাসনসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও বড় রদবদলের দাবি তোলেন আন্দোলনের সমন্বয়করা। গত দুই মাসে প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে ব্যাপক রদবদল হতে দেখা গেছে। স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নতুন করে বদলি, পদায়ন ও নিয়োগ করা হয়েছে কয়েকশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে। অনেককে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও (ওএসডি), বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরেও পাঠানো হয়েছে। এছাড়া পুলিশ মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন চেয়ারম্যানসহ আগের সরকারের চুক্তিভিত্তিক বেশিরভাগ নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। সরকারি, আধা-সরকারি, এমনকী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পদত্যাগের হিড়িক দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের আগের সব কমিশনারসহ কেউ কেউ স্বেচ্ছায় পদ ছাড়ছেন, আবার বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ, অপমান-অপদস্তসহ নানা চাপের মুখে কর্তা ব্যক্তিরা পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নতুন ডিসি ৫৯ জনের মধ্যে মাত্র তিনজন বিগত সরকারের আমলে পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলেন বলে জানা গেছে। বাকি ৫৬ জনই বিগত সরকারের আমলে নিয়মিত পদোন্নতি পেয়েছেন এবং তারা র্ছিলেন বিগত সরকারের ফিটলিস্টে তালিকাভুক্ত। ফলে এটা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এবং সমন্বয়কদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। এই ডিসি নিয়োগে জনপ্রশাসন সচিব ও এক উপ-সচিবের হোয়াটস অ্যাপে ঘুস বাণিজ্যের কথোপকথোপন দেশব্যাপী তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় সমন্বয়করাও আমলাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন। সব মিলে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/রন