logo
আপডেট : ৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০২
অসময়ের বন্যায় বড় বিপর্যয়
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক

অসময়ের বন্যায় বড় বিপর্যয়

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শেরপুর ও ময়মনসিংহের বেশ কিছু এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে সড়ক, ফসলি জমি, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবারের মানুষ। ত্রাণ হাতে নিয়ে বন্যার পানিতে সাঁতরে স্বজনের কাছে যাচ্ছে এক শিশু। ছবিটি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থেকে তোলা। - ভোরের আকাশ

দেশের শেরপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটলেও ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনায় অপরিবর্তিত রয়েছে। এখনও পানিবন্দি হাজার হাজার পরিবার। রাস্তা-ঘাট, মৎস্য পুকুর আমন-রোপা ধান ও সবজির ক্ষেত এখনও পানির নীচে। আর থৈ থৈ পানির মধ্যে মাথা উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঘরবাড়ি-গাছপালা। নিরাপদ পানি ও খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।

গতকাল সোমবার বিকালে জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। তবে কিছু এলাকায় উন্নতি হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ খাবার ও সুপেয় পানির সংকটে রয়েছেন।

তিনি বলেন, উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে নারী-শিশুসহ দুই হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তিন উপজেলায় ৬৩ টন চাল ও নগদ সাত লাখ টাকার সহায়তা দেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। এছাড়া রান্না করা খাবারও দেওয়া হচ্ছে বন্যা দুর্গতদের।

স্থানীয় রফিকুল ইসলাম জানান, ধোবাউড়া বন্যা দুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। তবে কিছু এলাকায় খাবারের ব্যবস্থা করছেন প্রশাসন। এছাড়াও নেতাই নদীর আশপাশের এলাকায় অন্তত অর্ধশত ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। পানিবন্দি অনেকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। উজানের পানি নেমে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। চারদিনের টানা দুর্ভোগে দিশেহারা মানুষ।

উপজেলা সদর থেকে কলসিন্দুর পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও ধোবাউড়া পাকা রাস্তা, ঘোষগাঁও বালিগাঁও পাকা রাস্তা, মুন্সীরহাট বাজার থেকে শালকোনা পাকা রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধোবাউড়া সদর এলাকার বণিক্যপাড়া, ধারইপাড়া, বলরামপুর, পুরানপাড়া এলাকার বাড়ি ঘরের উঠানে হাঁটু পানি।

ধোবাউড়া সদর উপজেলার তারাকান্দি গ্রামের কুলসুম আক্তার বলেন, চারদিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় আছি। বাড়ির উঠান ও চারপাশে হাঁটুপানির কারণে রান্নাও করা যাচ্ছে না। হাঁস-মুরগিগুলো মরে গেছে। কেউ একটু সহযোগিতাও করেনি।

ফুলপুর উপজেলার ছনধরা, রামভদ্রপুর, সিংহেশ্বরও, ফুলপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ ও অন্যান্য ইউনিয়নের ২৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে ১০ গ্রাম। এসব এলাকার আমন ফসল ও সবজি খেত তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মাছের খামার।

ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন বলেন, সোমবার নতুন করে উপজেলার দুই ইউনিয়নের ২৬ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে উজানের পানি কিছুটা কমছে। আশা করা যাচ্ছে দুই একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

হালুয়াঘাট উপজেলার ইউএনও এরশাদুল আহমেদ বলেন, উজানে প্লাবিত হওয়া গ্রামের পানি নামতে শুরু করেছে। উপজেলার নড়াইল, কৈচাপুর, ধুরাইল এবং আমতৈল ইউনিয়ন দিয়ে পানি ফুলপুর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হলেও সার্বিক পরিস্থিতি ভালো।

এদিকে, শেরপুরে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় উজান থেকে পানি নেমে ভাটির দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার সদর উপজেলা ও নকলা উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এখনো পানিবন্দি এসব এলাকার লাখো মানুষ। বন্যায় এখন পর্যন্ত জেলায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার রাত থেকে শেরপুর সদর উপজেলার গাজীরখামার, ধলা ও বাজিতখিলা ইউনিয়ন এবং নকলা উপজেলার পৌরসভার আংশিক, গণপদ্দি, উরফাসহ অন্তত ১০টি ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে এসব এলাকার বহু মানুষ।

গত রোববার দুপুর থেকে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলা থেকে পানি কমতে শুরু করেছে।

জেলার ভোগাই, চেল্লাখালী, মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ ও প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির সবজির আবাদ পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। পাশাপাশি মহারশি নদীর ৪টি স্থানে ও চেল্লাখালী নদীর ২টি স্থানে ব্যাপক ভাঙন হয়েছে।

ইতোমধ্যে পানি নামতে শুরু করায় নিম্নাঞ্চলের কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ার কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলছেন, পানিবন্দিদের খাবারসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা চলমান রয়েছে।

 

ভোরের আকাশ