logo
আপডেট : ৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:৩৬
যানজট নিরসনে জোরালো উদ্যোগ নিন
নিজস্ব প্রতিবেদক

যানজট নিরসনে জোরালো উদ্যোগ নিন

রাজধানী ঢাকায় যানজট সমস্যা নতুন কিছু বলে আমরা মনে করি না। এই সমস্যাটি দীর্ঘদিন যাবৎ চলে আসছে। এই যানজট থেকে নিষ্কৃৃতি পেতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে , মেট্রোরেল চালু করা হয়েছে। তারপরও যানজটের ভোগান্তি থেকে এই নগরবাসী মুক্তি পেয়েছেন বলে অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় না। বরং এই যানজট সমস্যাটি দিনদিন আরো প্রকট হচ্ছে। গতকাল দৈনিক ভোরের আকাশে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, যানজট থেকে সহস্যা মুক্তি মেলছে না ঢাকাবাসীর। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও মর্মান্তিক বলে আমরা মনে করি। রাজধানী ঢাকার যানজট সমস্যার দ্রুত ও কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুজন ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বৈঠক তিনি এ নির্দেশনা দেন। প্রধান উপদেষ্টার সেই নির্দেশ দেয়ার পরও নেয়া হয়নি যানজট নিরসনে জোরালো কোনো উদ্যোগ।

ঢাকার রাস্তায় বাস থামানোর স্থান ও সময় নির্দিষ্ট করা, ট্রাফিক সিগনালব্যবস্থা সংস্কার করা ইত্যাদি পদক্ষেপ যানজট নিরসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সন্দেহ নেই। তবে সবচেয়ে জরুরি হলো বাসের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো। মানুষ পরিবহন করে একটি বাস রাস্তার যতটুকু জায়গা দখল করে ততটুকু জায়গা দখল করে দুটি ব্যক্তিগত গাড়িতে হয়তো ৪৫ জন মানুষ যাতায়াত করে। এ কারণেই জনবহুল ঢাকায় যানজট কমাতে হলে পরিবহন ব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজাতে হবে যেন যাত্রীরা ব্যক্তিগত ও ছোট যানবাহনের চেয়ে বাসে যাতায়াত করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন।

বিগত সরকার ঢাকাকে যানজটমুক্ত করতে উড়াল সেতু, উড়াল সড়ক, মেট্রোরেল (এমআরটি), বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটসহ (বিআরটি) নানা প্রকল্পে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করেছে। কিন্তু তাতে ঢাকার যানজট সমস্যার সমাধান হয়নি, উল্টো যানবাহনের গড় গতিবেগ ২০০৭ সালের ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে কমে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ হলো বাসের মতো গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্ব না দিয়ে এমন সব অবকাঠামো নির্মাণে জোর দেয়া হয়েছে, যেগুলো ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করেছে।

ঢাকায় চলা বেশির ভাগ বাস-মিনিবাস রংচটা ও লক্কড়ঝক্কড়; পেছনের লাইট-ইন্ডিকেটর আর সামনের লুকিং গ্লাস থাকে না। দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে গাদাগাদি করে যেতে হয়। গরমের দিনে ঘামে এবং বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়।
অন্তর্বর্তী সরকার এ ব্যাপারে কঠোর ও মনোযোগী হলে দিল্লির মতো ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজানো সম্ভব। যেকোনো দলীয় সরকারের অধীনে পরিবহন মালিকেরা যেভাবে সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন, রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশসহ তাদের যে সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে, সেটি ভেঙে দেওয়া কোনোভাবেই সহজ হবে না।

রাজধানী ঢাকায় যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, অতিরিক্ত প্রাইভেটকারের উপস্থিতি। রাস্তার যানবাহনের প্রায় ৮০ শতাংশ প্রাইভেটকার। কোনো কোনো সময় দেখা যায়, কার ড্রাইভারও একজন যাত্রী। রোড লাইসেন্স দেওয়ার সময় কর্তৃপক্ষ এই সব বিবেচনায় আনে বলে মনে হয় না। ট্রাফিক অব্যবস্থাপনাও যানজটের কারণ। ট্রাফিক পুলিশ সিগন্যালের তোয়াক্কা না করে একই পয়েন্টে আধাঘণ্টা পর্যন্ত একদিকের যান বাহন আটকে রাখে। অনেক সময় অটো সিগন্যাল বাতিতে যানবাহন নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে না। সবুজ বাতির বদলে ট্রাফিক পুলিশের হাত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছে।

আমরা মনে করি, যানজটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রেরিয়ে আসা সময়ের দাবি। সরকারকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে যাতে জনগণ এই দুর্ভোগ থেকে রেহাই পায়। এই সমস্যার সমাধান কল্পে কয়েকটি প্রস্তাব যা বাস্তবায়ন হলে যানজটের সমস্যা থেকে ঢাকাবাসী মুক্তি পেতে পারে। পরিশেষে বলব, অবৈধ গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত দখল করে রাস্তা সঙ্কীর্ণ করা থেকে জনগণকে বিরত রাখতে হবে। নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। জনগণের স্বার্থে যানজট নিরসনে অচিরেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, বর্তমান সরকার সেই লক্ষ্য পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি।

 

ভোরের আকাশ/রন