শুরু হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আজ থেকে ঢাকে কাঠি বাজিয়ে শুরু হচ্ছে দুর্গোৎসব। সারাদেশের মতো বাউফলেও চলছে দুর্গোৎসব পালন। এ বছর বাউফলে ৬৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। পটুয়াখালী জেলায় সর্বাধিক পূজা হচ্ছে বাউফলে। নির্বিঘ্নে এবং উৎসাহ উদ্দীপণায় যাতে দুর্গোৎসব উদযাপিত হতে পারে সেজন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ প্রতিটি পূজা কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় করে পূজায় সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করা হবে বলে আশ^স্ত করেছেন। পূজার নিরাপত্তায় আনসার-ভিডিপি, পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ড থাকবেন বলে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।
বাউফল উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সনজিত কুমার সাহা জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি প্রতিটি পূজামণ্ডপে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। পালা করে তারা পূজামণ্ডপ পাহারা দিচ্ছেন। পূজার সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবাহের জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অতুল চন্দ্র পাল জানান, বাউফল একটি শিক্ষিত-নন্দিত অসাম্প্রদায়িক চেতনার জনপদ। পূজাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার কথা বলেছেন। এ বছর ৫৬টি মণ্ডপে প্রতিমা দিয়ে পূজা হচ্ছে এবং ৯টি মণ্ডপে ঘটপূজা করা হচ্ছে। বাউফলের প্রতিটি পূজামণ্ডপ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। সরকারের দেয়া নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়াও প্রতিটি মণ্ডপের পূজা কমিটি সার্বিক বিষয়ে নজরদারি রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের ধারণা ছিল পরিবর্তনের আবহে প্রতিটি পূজায় ১ টন করে চাল বরাদ্দ করবেন। কিন্তু সরকারি বরাদ্দ ৫০০ কেজি চালই দেয়া হয়েছে। তবে আগামিতে সরকারি বরাদ্দ উন্নীত হবে বলে আশা করছি।
বাউফল থানার ওসি মো. কামাল হোসেন জানান, পূজা শুরুর পূর্বেই সকল পূজামণ্ডপ পুলিশ টহলের আওতায় আনা হয়েছে। সাদা পোশাকেও নজরদারি করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বশির গাজী জানান, পূজার উৎসবে যে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করবেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক মোবাইল টিম রয়েছে। পূজার সময় সেনাবাহিনীর টহল দল মাঠে রয়েছে। পূজাকে কেন্দ্র করে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আনন্দঘন পরিবেশেই দুর্গোৎসব উদযাপন হচ্ছে।
জামালপুর: জামালপুরে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা ১৮৮টি মন্দিরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে হিন্দু ধর্মালম্বীদের পূজামণ্ডপগুলোতে চলছে আজ মহাষষ্ঠী। তাই সব মণ্ডপে কারিগরদের কর্মব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে। এবার জামালপুরে সাতটি উপজেলায় সর্বমোট ১৮৮টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জানিয়েছেন জামালপুর জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সুরেন্দ্র চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক দীপক শাহা। তারা জানায়, জামালপুর পৌর শহরে ২০টি সহ সদর উপজেলায় মোট ৪৬টি, মাদারগঞ্জ উপজেলায় মোট ২৮টি, বকশীগঞ্জ উপজেলায় মোট ১২টি, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় মোট ২৩টি, ইসলামপুর উপজেলায় মোট ১৫টি, মেলান্দহ উপজেলায় মোট ২০টি এবং সরিষাবাড়ী উপজেলায় মোট ৪৪টি সারা জেলায় সর্বমোট ১৮৮টি দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে গত বৎসরে হয়েছিল ২০৬টি, এবার ১৮টি পূজা কম হয়েছে।
দুর্গাপুজা উপলক্ষে ইতোমধ্যেই স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হিন্দু ধর্মালম্বীদের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যক্তিসহ ছাত্র-জনতা অন্তর্ভুক্ত করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সুরেন্দ্র চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক দীপক শাহা বলেন, এ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আশা করি, শেষ পর্যন্ত ভালো থাকবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে জামালপুরের পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বলেন, পূজা উদযাপন উপলক্ষে প্রতিটি পূজামণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। অরাজকতা বা নাশকতার কোনো সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে জামালপুরের জেলা প্রশাসক হাসিনা বেগম বলেন, হিন্দু ধর্মালম্বীদের পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যক্তিসহ ছাত্র-জনতা অন্তর্ভুক্ত করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছেন কোনোক্রমে নাশকতা করার কোনো আসংখ্যা নেই বলে জানান।
সিংড়া (নাটোর): আজ বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। ইতোমধ্যে দুর্গাপূজার প্রায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এ বছর নাটোরের সিংড়া উপজেলার ১২ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৮১টি মণ্ডপে একযোগে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পূজাকে ঘিরে অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশ তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রতিটি পূজামণ্ডপেই রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, ঐতিহ্যবাহী পোশাক আর গহনায় সাজানো হয়েছে প্রতিমা। উৎসবের আমেজ ছোট-বড় সবার মাঝে। মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো। ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসব। সিংড়া বাজার কেন্দ্রীয় মন্দিরে ১৩টি প্রতিমা তৈরির কাজ করেছেন জয়তন পাল ও মানিক পাল নামের দুজন প্রতিমা শিল্পী। এর মধ্যে গত ২০ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছেন জয়তন পাল।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি চাঁদ মোহন হালদার জানান, ৮১টি পূজামণ্ডপে পূজা চলছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তর থেকে সরকারী অনুদান হিসেবে চাল পেয়েছি। এছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিটি মণ্ডপে ৩টি করে শাড়ি উপহার হিসেবে পেয়েছি। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলার পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে।
উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক আ.ব.ম আমান উল্লাহ ও সেক্রেটারি অধ্যাপক এনতাজ আলী বলেন, দুর্গাপূজায় সার্বিক নিরাপত্তার কথা ভেবে পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের সঙ্গে আমরা মতবিনিময় করেছি। প্রতিটি মণ্ডপে আমাদের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আমরা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সহযোগিতা করব।
উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনু বলেন, দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের সঙ্গে আমরা মতবিনিময় ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি। সুষ্ঠুভাবে পূজা সম্পন্ন করতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায় প্রশাসনের পাশাপাশি আমরা কমিটি গঠন করে মাঠে রয়েছি।
সিংড়া থানার ওসি মো. আসমাউল হক বলেন, দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতিটা মণ্ডপে নজরদারি করবে পুলিশ সদস্যরা। কোনো রকম সাম্প্রদায়িক গুজব যেন না হয় সেজন্য সকলকে সচেতন থাকতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে প্রতিটি মণ্ডপে লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হা-মীম তাবাসসুম প্রভা বলেন, সিংড়া উপজেলায় এ বছর ৮১টি মণ্ডপে দূর্গাপূজা উদযাপন হচ্ছে। পূজায় সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো। নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে পুলিশের পাশাপাশি আনসার, গ্রাম পুলিশ রয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনী ও র্যাব টহলে আছে। আশা করছি শান্তিপূর্ণভাবেই পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, সোমবার দুপুরে সিংড়া কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপ, মায়া দূর্গা মন্দিরসহ পৌরসভার কয়েকটি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাদি ও লেফটেনেন্ট কর্নেল মুক্তাদির রহমান। সিংড়া উপজেলায় নাটোর জেলার সর্বোচ্চ সংখ্যক পূজামণ্ডপ থাকায় সেনাবাহিনীর একটি স্পেশাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
ভোরের আকাশ/রন