logo
আপডেট : ১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১০:৪৮
আজ বিশ্ব দৃষ্টি দিবস
অন্ধত্ব থেকে রক্ষা পেতে চোখের যত্ন নিতে হবে
আফরিন শাহনাজ

অন্ধত্ব থেকে রক্ষা পেতে চোখের যত্ন নিতে হবে

আজ বিশ্ব দৃষ্টি দিবস । বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে দিবসটি। মানবদেহের সংবেদনশীল অঙ্গগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হয় আমাদের চোখ। অথচ চোখের যত্নের ব্যাপারে আমরা সবচেয়ে বেশি উদাসীন। আজকের আধুনিক বিশ্বে দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিন টাইম, ধুলোবালি, দূষণ ইত্যাদির কারণে আমাদের চোখের সুস্থতা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। চোখের সমস্যাগুলোর অবহেলার পরিণতি হতে পারে চিরদিনের মতো অন্ধত্বকে বরণ করে নেয়া।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং অন্ধত্ব প্রতিরোধের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা 'ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর প্রিভেনশন অফ ব্লাইন্ডনেস' (IAPB) যৌথভাবে জানাচ্ছে, সারা বিশ্বে আনুমানিক ৪০ থেকে ৪৫ মিলিয়ন মানুষ দৃষ্টিশক্তিহীন এবং ১৩৫ মিলিয়ন মানুষ ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন। সচেতনতা এবং সঠিক যত্নের মাধ্যমে এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ক্ষতি প্রতিরোধ বা নিরাময় করা যেতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় আন্তর্জাতিক অন্ধতা দূরীকরণ সংস্থার পরিচালনায় এই দিবসটি বহুলভাবে প্রচারিত হয়ে ভিশন ২০২০ পর্যন্ত উন্নীত করা হয়েছে। ২০১৪ সালের (৯ অক্টোবর) বিশ্ব দৃষ্টি দিবসের বিষয়বস্তু ছিল- 'আর নয় অবজ্ঞাপূর্ণ অন্ধতা'।

বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৩১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ চোখের রোগে ভুগছে, যাদের মধ্যে চার কোটি ৫০ লাখ মানুষ দৃষ্টিহীনতা এবং বাকি ২৬ কোটি ৯০ লাখ মানুষ দৃষ্টি বা চোখের অন্য কোনো রোগে ভুগছে। চোখের রোগীর দুই-তৃতীয়াংশই নারী।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্ধত্ব প্রতিরোধ জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা (আইএপিবি) জানিয়েছে, অন্ধত্বের ৭৫ শতাংশ এবং গুরুতর দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। বিশ্ব দৃষ্টি দিবস প্রত্যেকের জন্য একটি মঞ্চ তৈরি করে, যেখানে সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিদেরকে ‘সংহত লোককেন্দ্রিক চক্ষু যত্ন’ সেবা গড়ে তুলতে জোর দিতে পারবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৯ সালে দৃষ্টিশক্তির উপর প্রথম প্রতিবেদনটি চালু করেছিল। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ব জুড়ে কমপক্ষে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন মানুষ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বা অন্ধ, তার মধ্যে এক বিলিয়ন মানুষের ক্ষেত্রে যাদের গ্লোকমা বা ছানির মতো সমস্যা হয়েছিল, তারা যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেতেন তাহলে এই অবস্থা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল।

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের তথ্য মতে, প্রতিদিন তিন হাজার রোগী চোখের বিভিন্ন সমস্যায় এখান থেকে চিকিৎসা নেয়। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক কোটি ৪৩ লাখ লোক দৃষ্টির ত্রুটিতে ভুগছে। দিন দিন রোগী বাড়ছে। এখন যেহেতু আমাদের স্ক্রিন টাইম খুব বেশি তাই ড্রাইনেস রিলেটেড রোগী আমরা হাসপাতালে বেশি পাই। এছাড়া এমনকি একই কারণে আমরা বেশিরভাগ শিশুদের চোখের পাওয়ারের সমস্যা পাচ্ছি। শিশুদের চোখের পাওয়ারের সমস্যা বাড়ছে। এটা খুব বেশি হচ্ছে শিশুদের অতিরিক্ত পরিমাণ ডিভাইস নির্ভর করার ফলে। এমনকি দেড় বছর বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও আমরা এই দৃষ্টি ক্ষীনতার সমস্যা লক্ষ্য করছি। তার একটাই কারণ হচ্ছে অনেক বেশি সময় তারা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে সময় কাটাচ্ছে। এছাড়াও চোখের ড্রাইনেসের সমস্যা হচ্ছে। চোখ চুলকাচ্ছে, চোখের শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে, এলার্জির সমস্যা হচ্ছে এবং চোখে কম দেখছে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোটবেলা থেকে স্মার্টফোন, ট্যাবে ভিডিও গেমসের আসক্তি শিশুদের চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যাসহ নানা ধরনের মানসিক সমস্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এসবের জন্য খেলার মাঠ বন্ধ হয়ে যাওয়া, লেখাপড়ার বাড়তি চাপ, সূর্যের আলোয় শিশুর না আসা, দিগন্তে সবুজের দিকে তাকিয়ে না থাকাকেই দায়ী করা হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, সারা বিশ্বে প্রায় ৪ কোটি মানুষ নিবারণযোগ্য অন্ধত্বের শিকার। এ ছাড়া দৃষ্টিহীন মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৪ কোটি।

চক্ষু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রতি মিনিটে ১২ জন মানুষ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার প্রধান কারণ ছানিজনিত। মানুষ সচেতন হলে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও অন্ধত্ব কমানো সম্ভব।

১৯৯৯ থেকে ২০০০ সালে দেশে অন্ধত্ব ও ক্ষীণ দৃষ্টি নিয়ে পরিচালিত অন্য এক জরিপে অন্ধত্বের প্রধান কারণ হিসাবে ছানিপড়া রোগকে দায়ী করা হয়। দেশে বছরে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ অন্ধত্বজনিত ছানির রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

বৈশ্বিক পর্যায়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা এবং অন্ধত্বের প্রধান কারণ হল প্রতিসরণ ত্রুটি (Refractive Error) এবং ছানি। প্রতিসরণ ত্রুটি অর্থাৎ চোখে ঝাপসা দেখা, কাছের বস্তু কিংবা দূরের বস্তু কম দেখা অর্থাৎ সাধারণ ভাষায় যে সমস্যাগুলিকে চোখের পাওয়ারের সমস্যা বলা হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরো বলছে, সময়মত সনাক্তকরণের অভাবে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে গেলে কিংবা হারিয়ে গেলে তার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব জনজীবনে এবং অর্থনীতিতে পড়তে পারে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা সব বয়সের মানুষকে প্রভাবিত করে যার মধ্যে শিশু থেকে পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তি রয়েছেন। বাংলাদেশের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক কোটি ৪৩ লাখ লোক দৃষ্টিজনিত সমস্যায় ভুগছে। বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধতার প্রধান কারণ ছানি।

ডা. সারওয়াত হোসেন জানান ,চোখে দু ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। একটা হচ্ছে শ্বাসনালীতে গিয়ে শ্বসনতন্ত্রে সমস্যা তৈরি করে, তার পাশাপাশি চোখেরও সমস্যা হয়। এই আঁশ থেকে এলার্জি সমস্যা হবে, চোখে চুলকানি হবে, চোখে ঝাপসা দেখবে। এ ধরনের কাজ যারা করেন তাদেরও চোখের প্রটেকশন নিয়ে কাজ করা উচিত।” ডা. সারওয়াত আরো বলেন, “এছাড়া যারা গার্মেন্টসে সুতা কাটার কাজ করে তাদের হাতে এক ধরনের চোখা বস্তু থাকে, নিডল থাকে এটা খুবই রিস্কি। এটা থেকে চোখে ইনজুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই জিনিসগুলা এতটাই শার্প এবং হঠাৎ করে এত জোরেই চোখে যায় যে অনেক ক্ষেত্রে চোখকে বাঁচানো মুশকিল হয়ে যায়। পার্মানেন্টলি একটা চোখ চলে যেতে পারে। গার্মেন্টেসে যারা কাপড় কাটেন তাদের কাপড়ের আঁশগুলো উড়ে, উলের ফ্যাক্টরিতেও তাই হয় এবং টেক্সটাইলগুলোতেও তাই হয়। এটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল হ্যাজার্ড-এর মধ্যেই পড়ে। এটা ফুসফুস এবং চোখ উভয়েরই সমস্যা তৈরি করে। এ ক্ষেত্রে মাস্ক পড়া এবং চোখের প্রটেকশন নেয়াটা খুব জরুরী।

 

ভোরের আকাশ/রন