logo
আপডেট : ১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১০:৪৮
কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন প্রকল্প
আড়াইশ’ কোটি টাকা লোপাটের আয়োজন
নিখিল মানখিন ও শিপংকর শীল

আড়াইশ’ কোটি টাকা লোপাটের আয়োজন

কিডনি রোগে আক্রান্ত দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসায় দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজ ও জেলা সদর হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে বারবার প্রকল্পের পরিচালক পদে বদল এসেছে। চার বছরের বেশি সময় আগে নেয়া এ প্রকল্পটির মেয়াদও বেড়েছে তিন দফায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতিত শেখ হাসিনা সরকারের শেষ দিকে তৃতীয়বারের মতো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু প্রকল্পের এই ডায়ালাইসিস সেন্টারের যন্ত্রপাতি কেনাকাটা নিয়ে শুরুতেই গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একটি ঠিকাদারি সিন্ডিকেটকে কাজ পাইয়ে দিতে ‘হাই কনফিগারেশন’র যন্ত্রপাতি বাদ দিয়ে ‘লো কনফিগারেশ’র যন্ত্রপাতির চাহিদাপত্র তৈরি করে দরপত্র আহ্বান করার প্রমাণ মিলেছে। এর মাধ্যমে ওই চক্রটি আড়াইশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া পাঁয়তারা করছে। ‘মেডিকেল কলেজসমূহে বিদ্যমান কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার ৫০ শয্যায় উন্নতিকরণ এবং জেলা সদরে ১০ শয্যার ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন’ শীর্ষক এ প্রকল্পটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. রতন দাশগুপ্ত। অভিযোগ পাওয়া গেছে, প্রকল্প পরিচালক নিজেই ওই সিন্ডিকেটের হোতা। মোটা অঙ্কের কমিশনের বিনিময়ে পছন্দের যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে কেবল ওই প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করতে পারবে- এমন চাহিদাপত্র তৈরি করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এতে করে ওই প্রতিষ্ঠান ছাড়া উন্নতমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী বড় বড় অনেক প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিতে পারবে না। কোনে কোনো প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিতে পারলেও আগে থেকে তৈরি করে রাখা চাহিদাপত্রের কারণে বাদ পড়বেন। বিষয়টি নিয়ে চলছে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও তাদের সংগঠনের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। প্রকল্প পরিচালকের এমন কাণ্ডে বিস্মিত কিডনি চিকিৎসকদের সংগঠন রেনাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। গত সপ্তাহে সংগঠনটির এক সভায় ডায়ালাইসিস সেন্টারের যন্ত্রপাতি কেনা নিয়ে প্রকল্প পরিচালকের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে প্রকল্প পরিচালক ডা. রতন দাশগুপ্তও উপস্থিত ছিলেন।

ওই সভায় উপস্থিত অন্তত তিনজন চিকিৎসক নেতা ভোরের আকাশকে বলেন, রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভায় প্রকল্প পরিচালক রতন দাশগুপ্তকে এমন চাহিদাপত্র তৈরির নেপথ্যে কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো জবাব দেননি। শুধু বলেছেন সরকার না চাইলে তিনি এ পদে থাকবেন না। তখন পরিচালকের সমালোচনা করে কয়েকজন চিকিৎসক বলেছেন, দরিদ্র রোগীদের জন্য সরকারি উদ্যোগ নিয়ে বাণিজ্য করা অমানবিক। উন্নতমানের মানের যন্ত্রপাতির পরিবর্তে নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হলে তা দরিদ্র রোগীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে। সুতরাং এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে কোনোভাবেই কাম্য নয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রত্যেক জেলা সদর হাসপাতালের হেমোডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনের লক্ষ্যে ৪৭২টি মেশিন কেনার জন্য প্রকল্প পরিচালক ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র বিশ্লেষণ করে কিডনি রোগী বিশেষজ্ঞরা বলছেন দরপত্রের স্পেসিফিকেশনের মধ্যে বেশ কিছু গরমিল পাওয়া গেছে। দরপত্রে ডায়ালাইসেট ফ্লো ২০০ থেকে ৮০০ চাওয়া হয়েছে। আর বর্তমানে আপডেট মেশিনে ডায়ালাইসেট ফ্লো হচ্ছে ১০০ থেকে ১০০০ (ml/min)। চাহিদাপত্রে ডায়ালাইসিস মেশিনের তিনটি প্রোফাইলিং চাওয়া হয়েছে। কিন্তু আপডেট মেশিন কম্বাইন্ডসহ ছয়টি প্রোফাইল রয়েছে। চাহিদাপত্রে ডায়ালাইসিস মেশিনের ব্যাটারি ব্যাকআপ চাওয়া হয়েছে ৩০ মিনিট পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে আপডেট নতুন প্রজন্মের মেশিনের চেয়ে বেশি ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়া যায়। গ্রামে বিদ্যুৎ সংকট মারাত্মক। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না জেলা শহরে। সুতরাং ব্যাটারি ব্যাকআপ বেশি পাওয়া যায় এমন মেশিন ক্রয়ে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। চাহিদাপত্রে ডায়ালাইসিস মেশিনের তিনটি আকারের হেপারিন সিরিঞ্জ চাওয়া হয়েছে। কিন্তু বাজারে আরও বেশি আকারের সিরিঞ্জ পাওয়া যায়।

দরপত্রে কৌশলে হিমোডায়া ফিল্টারেশন মেশিনের আরও একটি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন এর আগে কখনো দরপত্রে হিমোডায়া ফিল্টারেশন মেশিন চাওয়া হতো না। সাধারণ ডায়ালাইসিস করতে এটা লাগে না এবং এটা জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে সহজে ব্যবহারযোগ্য নয়। একই সঙ্গে এ ধরনের যন্ত্র অধিক ব্যয়বহুল। আর এ ক্ষেত্রে পানির কোয়ালিটির জন্য যে বাজেটের ‘ আর ও সিস্টেম’ চাওয়া হয়েছে তার থেকে আরও কমপক্ষে ১০ গুণ বেশি বাজেটের ‘আর ও সিস্টেম’ লাগবে, যা আইএসও সদনপ্রাপ্ত হতে হবে। কারণ এটা রোগীর রিপ্লেসমেন্ট ফ্লুইড হিসেবে সরাসরি রোগীর ব্লাডের সঙ্গে সংযুক্ত হয় এবং এই রিপ্লেসমেন্ট ফ্লুইডের জন্য মেশিন আরও একটি অতিরিক্ত পাম্পের প্রয়োজন হয়, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এজন্য যে ব্লাড লাইন এবং ডায়ালাইসিস ফ্লুইড লাগে তা ইউনিভার্সেল নয়। এই জিনিসগুলো ক্লোজ সিস্টেম হওয়ায় বাংলাদেশের যে লোকাল ফ্লুইডগুলো আছে সেগুলো এই ডায়ালাইসিসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এখানে দেশি ফ্লুইডের পরিবর্তে সম্পূর্ণ আমদানি করা ফ্লুইডের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রকল্পের সার্বিক মেইনটেইনেন্স ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। এতে করে রোগীকে ডায়ালাইসিসের জন্য অধিকতর ব্যয় বহন করতে হবে। দরিদ্র মানুষের পক্ষে এ ব্যয় বহন করা কষ্টসাধ্য হবে।

ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন প্রকল্পের বিষয়ে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের অন্তত ১০ জন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে ভোরের আকাশ’র পক্ষ থেকে কথা বলা হয়েছে। তারা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে জেলা পর্যায়ে হাসপাতালে। ডায়ালাইসিস মেশিন পরিচালনার জন্য রি-এজেন্ট, ফিল্মসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি প্রয়োজন। এ ধরনের হাসপাতালের জন্য পর্যাপ্ত সরকারি বাজেট বরাদ্দ থাকে না। দরিদ্র মানুষ যাতে কমমূল্যে ডায়ালাইসিস সেবা নিতে পারেন, সেদিকে লক্ষ্য রেখে যন্ত্রপাতি ক্রয় করা প্রয়োজন। কিন্তু প্রকল্পের আওতায় যেসব যন্ত্রপাতি ক্রয় করার প্রক্রিয়া চলছে তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হবে। এ ধরনের ব্যয় নির্বাহ করা দরিদ্র মানুষের পক্ষে সম্ভব হবে না। সুতরাং দরিদ্র মানুষের দোরগোরায় স্বল্প মূল্যে ডায়ালাইসিস সেবা পৌঁছানোর সরকারি উদ্যোগটি মুখ থুবরে পড়তে পারে। এটি বন্ধে সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান এবং ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগের অধ্যাপক ডা. কে. বি. এম. হাদিউজ্জামান ভোরের আকাশকে বলেন, কিডনির সমস্যা নিয় জটিল রোগীর যখন প্রেসার কম বা বেশি থাকা অবস্থায় ডায়ালাইসিসের জন্য আসে তখন তাদের কম ডায়ালাইসিস ফ্লো (100m/min) দিয়ে রোগীর চিকিৎসা শুরু করলে ভালো হয়। হার্ট ফেইলিউর বা হার্টের রোগীদেরও কম ডায়ালাইসিস ফ্লো দিয়ে চিকিৎসা শুরু করলে ভালো হয়। অন্যদিকে ১২ বছরের কম বয়সী কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিসের দরকার হয় তাহলে তাদেরও কম ডায়ালাইসিস ফ্লো (100m/min) দিয়ে চিকিৎসা ভালো হয়।

প্রোফাইলিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রোফাইল একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। মূলত অনেক সময় রোগীদেরকে ডায়ালাইসিস দিতে চিকিৎসকের উপদেশ মেনে ডায়ালাইসিস দিতে হয়। যেমন রোগীর প্রেসার কমে গেলে বা বেড়ে গেলে অথবা আন্য কোনো সমস্যা শ্বাসকষ্ট, সুগার লেভেল কমে গেলে সেক্ষেত্রে ইউএফ বন্ধ রাখতে হয় অথবা সোডিয়াম কমাতে অথবা বাড়াতে হয়। প্রোফাইলের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট পরিমাণ সোডিয়াম অথবা আর্টাফিলট্রেশন বন্ধ রেখে অথবা চালু রেখে চিকিৎসাটি সম্পন্ন করা যায়। সেজন্য সোয়িাম এবং আর্টাফিলট্রেশন প্রোফাইল একই সঙ্গে করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ডায়ালাইসিস মেশিনের ব্যাপকআপের বিষয়ে ডা. কে. বি. এম. হাদিউজ্জামান বলেন, আমাদের দেশে বিদ্যুতের সমস্যা বিদ্যমান থাকায় ব্যাটারি ব্যাকআপ যত বেশি হয়, তত ভালো। তখন রোগী দীর্ঘক্ষণ চিকিৎসা সেবা পাবেন।

তিনি আরও বলেন, ডায়ালাইসিস মেশিনের হেপারিন সাইজ যত বেশি থাকবে মেশিন এবং চিকিৎসার জন্য ততই ভালো হবে। আর মনিটর সাইজ ১৫ ইঞ্চি হলে চলে বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কেনাকাটার জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলেও আপডেট (নিউ জেনারেশন) ডায়ালাইসিস মেশিনের কিছু যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে সেগুলোর স্পেসিফিকেশনের সবিস্তার বর্ণনা এমনভাবে দেয়া হয়েছে যাতে নির্দিষ্ট ওই প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কেউ দরপত্রে অংশ নিলেও কাজ না পায়। মোটা অঙ্কের কমিশনের বিনিময়ে পছন্দের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে অভিনব কৌশল অবলম্বন করেছেন প্রকল্পের পরিচালক।

দেশে কিডনি রোগীর চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন বরেণ্য চিকিৎসক ও জাতীয় কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ। এক গবেষণায় তিনি দেখিয়েছেন, ‘দেশে কিডনি রোগীর মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ ডায়ালাইসিস করার সুযোগ পান। অন্যরা অর্থাভাবে ডায়ালাইসিস নিতে পারেন না।’

অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ ভোরের আকাশ’কে বলেন, দরিদ্র মানুষের দোরগোরায় কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা পৌঁছে দিতে সরকারের গৃহীত উদ্যোগ যে ভালোভাবে সম্পন্ন হয় সেটি আশা করি। যন্ত্রপাতি ক্রয়ে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হলে তার খারাপ ফল দরিদ্র মানুষকে ভোগ করতে হবে। সুতরাং সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহ্বান থাকবে, যাচাই-বাছাই করে উন্নতমানে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের মাধ্যমে যেন ডায়ালাইসিস সেন্টারগুলো চালু করা হয়।

কিডনি রোগীদের নিয়ে আরও করুণ অবস্থার কথা জানিয়েছেন কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সামাদ। তিনি বলেন, ‘দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে আক্রান্ত। বছরে প্রায় ৪০ হাজার রোগী কিডনি বিকল হয়ে মারা যাচ্ছে। শতকরা পাঁচ ভাগ রোগীরও দীর্ঘমেয়াদি ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। আক্রান্তদের ৭৫ শতাংশ বুঝতেই পারেন না তিনি কিডনি রোগে আক্রান্ত।’ বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ।

কিডনি চিকিৎসার একমাত্র সরকারি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেজ অব ইউরোলজি (নিকডু) হাসপাতালে রোগীর দীর্ঘ লাইন থাকে। টিকিট কাউন্টার থেকে শুরু করে আউটডোরে চিকিৎসকের কক্ষ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা কক্ষ ও ডায়ালাইসিস সেন্টার সর্বত্রই রোগীর ভিড়। দেড়শ শয্যার এ হাসপাতালটিতে ভর্তি প্রার্থীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি থাকে। আউটডোরে গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী চিকিৎসা নেন দৈনিক। লজিস্টিক সাপোর্টের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। আর সারাদেশে মাত্র ১২৬টি ডায়ালাইসিস সেন্টারে ২০ হাজার রোগী এই সেবা পান।

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সামাদ বলেন, কিডনি রোগীদের দুরবস্থা দেখার পরও তাদের নিয়ে বাণিজ্যিক চিন্তা করা দুঃখজনক। এমন কু-কর্মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

দেশের প্রায় দুই কোটি কিডনি রোগীর উন্নত চিকিৎসাসেবার জন্য চার বছরের বেশি সময় আগে সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ৪৪টি জেলা সদর হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস এবং নেফ্রোলজি ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘মেডিকেল কলেজসমূহে বিদ্যমান কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার ৫০ শয্যায় উন্নতিকরণ এবং জেলা সদরে ১০ শয্যার ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। ২৫২ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয় ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। দফায় দফায় পরিচালক বদল করেও জন গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যায়নি। বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকারের শেষ দিকে তৃতীয়বারের মতো মতো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর প্রকল্পটি নিয়ে চলছে অনৈতিক বাণিজ্যের পাঁয়তারা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চেয়ে অধ্যাপক ডা. রতন দাশগুপ্তের সঙ্গে কথা বলতে প্রকল্প অফিসে দুই দিন গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর তার মুঠোফোনে কয়েক দফা ফোন ও এসএমএস পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।

ভোরের আকাশ/ সু