logo
আপডেট : ১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১০:৫৯
ইভিএম মেশিন হোক সংরক্ষিত
নিজস্ব প্রতিবেদক

ইভিএম মেশিন হোক সংরক্ষিত

বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ একটি নতুন পদ্ধতি। এর সফল ব্যবহার শুরু হয় ২০০৭ সালে ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের কার্যকরী সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে। এরপর বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অল্প পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা হয় । গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই পদ্ধতির মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা ও নির্বাচনে স্বচ্ছতা বাস্তবয়নেই চালু করা হয়েছে এই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন। এর সংক্ষিপ্ত নাম হচ্ছে ইভিএম। ইভিএম হলো নির্বাচনে ভোটারদের ভোটগ্রহণের এমন একটি প্রযুক্তি, যা মূলত ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রমেকানিক্যাল আর ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে তৈরি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে একটি ভোট দিতে আনুমানিক ১৪ সেকেন্ড সময় লাগে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে এই ইভিএম মেশিন এখন নির্বাচন কমিশনের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে গতকাল দৈনিক ভোরের আকাশে একটি খবর ছাপা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভোটগ্রহণের জন্য কেনা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সংরক্ষণে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) ওয়্যারহাউস ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু প্রকল্পের ডিপিপিতে ইভিএম সংরক্ষণের বিষয়টি নেই। ফলে এখন ওয়্যারহাউজের ভাড়া পরিশোধ নিয়ে জটিলতায় পড়েছে সংস্থাটি। শুধু তাই নয়, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে অনেক ইভিএম। ইভিএম সংরক্ষণের জন্য ওয়্যারহাউস ভাড়া বাবদ ৫৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (৫০ মাসের ভাড়া) দাবি করেছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি। এছাড়া ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণেও দরকার ৬০ কোটি টাকা। এ অবস্থায় ইভিএম সংরক্ষণে নিজস্ব ওয়্যারহাউজ নির্মাণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে ইসি। এমনকি বিএমটিএফের বকেয়া ভাড়ার বিষয়টিও এখনো অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে। অন্যদিকে বিভিন্ন নির্বাচনে একই ইভিএম বারবার ব্যবহার করায় এগুলোর অধিকাংশের এখন রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত আবশ্যক হয়ে পড়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সরিয়ে দেয়া হয়েছে ইভিএম প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালককেও। প্রকল্পটি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অন্তর্ভুক্তও নয়। এমনকি সদ্য সমাপ্ত প্রকল্পটি ইসিকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। এসব কারণে ইভিএম প্রকল্প নিয়ে বিপাকে পড়েছে ইসি। নির্বাচনি ব্যবস্থায় এই বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয় করে ইভিএম ব্যবস্থা চালুর পর তা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাবে এবং নির্বাচন কমিশনের গলার কাটা হয়ে দাঁড়াবে তা মেনে নেয়া য়ায় না। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করা জরুরি বলে আমরা মনে করি।

আমরা জানি, কাগজের ব্যালট ব্যবহার কমিয়ে আনতে নির্বাচন কমিশন দেড় লাখ ইভিএম ক্রয় করে প্রকল্প গ্রহণ করে। জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২৩ সালের মধ্যে ৪ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। প্রকল্পটিতে ইভিএম কেনায় ৩৫১৫.৬১ কোটি টাকা, প্রচারে ৫ কোটি টাকা, পরিবহনে ৭ কোটি টাকা, মোটর যানে ৩.৩ কোটি টাকা, কম্পিউটার সফটওয়্যারে ৫০ কোটি টাকা, আসবাবপত্রে ৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের ডিপিপির ক্রয় প্যাকেজের আওতায় ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ টাকা দরে মোট দেড় লাখ ইভিএম সেট কেনা হয়। ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। এই ধারাবাহিক সফলতায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক তৃতীয়াংশ আসনে ইভিএম চালু করা হয়।

আমরা মনে করি, নির্বাচনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নিতে হবে জোরালো পদক্ষেপ। ইভিএম সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এই ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণে নিতে হবে পরিকল্পিত উদ্যোগ। যাতে করে আগামী নির্বাচনে নতুন করে ইভিএম ক্রয় করতে রাষ্ট্রকে বিপুল অর্থ অপচয় করতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সরকার সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি।

 

ভোরের আকাশ/রন