logo
আপডেট : ১৫ অক্টোবর, ২০২৪ ১০:১৮
কিডনি চিকিৎসায় নেয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরি
নিজস্ব প্রতিবেদক

কিডনি চিকিৎসায় নেয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরি

দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা যে ভেঙে পড়েছে সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়ে রোগীদের দুর্ভোগ ও হয়রানির কথা বলে শেষ করা যাবে না। প্রতিবাদ করারও কোনো সুযোগ আছে বলে অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় না। এতে করে দেশে বাড়ছে চিকিৎসার ব্যয়। বাড়ছে মৃত্যুর হারও। এমতাবস্থায় দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে মানুষের। সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে বিদেশ বিভূইয়ে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে চিকিৎসা নিতে মানুষের দীর্ঘসারি যেন দিনদিন বাড়েছে। আমাদের দেশে অন্যান্য রোগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কিডনি রোগীর সংখ্যাও। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে দীর্ঘদিনেও আমাদের দেশে কিডনি রোগের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। সরকারিভাবে জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হলেও নানা জটিলতা ও দুর্নীতির কারণে তাও থমকে আছে বলে গতকাল দৈনিক ভোরের আকাশে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশের প্রায় দুই কোটি কিডনি রোগীর উন্নত চিকিৎসাসেবার জন্য চার বছরের বেশি সময় আগে সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ৪৪টি জেলা সদর হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস এবং নেফ্রোলজি ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির সভায় মেডিকেল কলেজসমূহে বিদ্যমান কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার ৫০ শয্যায় উন্নতিকরণ এবং জেলা সদরে ১০ শয্যার ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। ২৫২ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দফায় দফায় পরিচালক বদল করেও জন গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যায়নি। বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকারের শেষ দিকে তৃতীয়বারের মতো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর প্রকল্পটি নিয়ে চলছে অনৈতিক বাণিজ্যের পাঁয়তারা। এছাড়াও প্রত্যেক জেলা সদর হাসপাতালের হেমোডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপনের লক্ষ্যে ৪৭২টি মেশিন কেনার জন্য প্রকল্প পরিচালক ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্র বিশ্লেষণ করে কিডনি রোগী বিশেষজ্ঞরা বলছেন দরপত্রের স্পেসিফিকেশনের মধ্যে বেশ কিছু গরমিল পাওয়া গেছে। ফলে দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের এই মহতি উদ্যোগ যেন ভেস্তে যেতে বসেছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। সরকারের নেয়া কিডনি চিকিৎসার এ ধরনের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে ভেস্তে যাবে এটা হতে পারে না। সব ধরনের জটিলতা ও দুর্নীতি বন্ধ কওে কিডনি রোগীদের চিকিৎসার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরি বলে আমরা মনে করি।


আমরা জানি, কিডনি মানুষের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ব্যক্তির শরীরে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার ফলে যে বিষাক্ত পদার্থ জমা হয়ে তাকে, সেগুলোকে প্রস্রাবের আকারে শরীর থেকে বের করে দেয়াই কিডনির প্রধান কাজ। এ ছাড়া কিডনি লোহিত কণিকা তৈরিতেও ভূমিকা রাখে। শরীরে যতো হাড় আছে, সেগুলোকে মজবুত করাও কিডনির একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, রক্তের মধ্যে বর্তমান বিভিন্ন লবণের ভারসাম্য রক্ষা করা, শরীরের বিভিন্ন এসিড এবং ক্ষারের ভারসাম্য আনয়ন- এ সবই অসামান্য দক্ষতার সঙ্গে পালন করে চলেছে দুই কিডনি। বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে ভুগছে। আর আক্রান্তদের মধ্যে ৪০ হাজারের কিডনি পুরোপুরি অকেজো হচ্ছে প্রতিবছর। এ ধরনের রোগীর জন্য মাত্র দুই রকম চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে, যা ডায়ালাইসিস অর্থাৎ যন্ত্রের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে কিডনির কাজ করানো বা কিডনি প্রতিস্থাপন। কিন্তু এই দুই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিই ব্যয়বহুল। কাজেই দেশের এই বিপুলসংখ্যক কিডনি রোগীকে বাঁচাতে এ রোগের চিকিৎসার জন্যে নেয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা জরুরি। সরকার এই লক্ষ্যে জোরালো উদ্যোগ নিয়ে কিডনি রোগীদের মুখে হাসি ফোটাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। একই সঙ্গে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে যারা দুর্নীতি করে বাধার সৃষ্টি করছে। তাদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা। বর্তমান সেই লক্ষ্যে আশু পদক্ষেপ নিবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি।

 

ভোরের আকাশ/রন