logo
আপডেট : ১৬ অক্টোবর, ২০২৪ ০৯:৩৭
ব্যক্তিক্রমী পরীক্ষায়ও নিম্নমুখী পাসের হার
এইচএসসিতে পাসের হার ৭৭.৭৮ শতাংশ
বিশেষ প্রতিবেদক

ব্যক্তিক্রমী পরীক্ষায়ও নিম্নমুখী পাসের হার

উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। ফল প্রকাশের পরে উল্লাসে মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা। আনন্দঘন মুহূর্তের স্মৃতি ধরে রাখতে সেলফি তুলছে শিক্ষার্থীরা। ছবিটি গতকাল রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে তোলা।

ভিন্ন আঙ্গিকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে। এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর এইচএসসি ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ২০২৩ সালে গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সে হিসাবে পাসের হার কমেছে শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ। আলিম পরীক্ষায় পাসের হার ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর ভোকেশনাল/বিএম/ডিপ্লোমা ইন কমার্সে পাসের হার ৮৮ দশমিক ০৯ শতাংশ।

গতকাল মঙ্গলবার আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার ফলাফলের সারসংক্ষেপ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। বেলা ১১টায় নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে এ ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জানান, এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষা বোর্ডের দুই হাজার ৬৯৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। সেখানে পাস করেছে ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন শিক্ষার্থী।

ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, ৯টি সাধারণ ও মাদরাসা এবং কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত বছর ১১টি বোর্ডে গড় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। ২০২৩ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী।

ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ২১ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ, কুমিল্লায় পাসের হার ৭১ দশমিক ১৫ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৬২ দশমিক ৮২ ও যশোরে ৬৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বলে জানা গেছে।

গত ৩০ জুন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। এতে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন। প্রথম প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী ৮ দিন পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ১৮ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর তিন দফায় পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার।

সূচি অনুযায়ী, মোট ৬১ বিষয়ের পরীক্ষা গ্রহণ বাকি ছিল। বিভিন্ন বিভাগের (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) বিভিন্ন বিষয় থাকায় এতগুলো পরীক্ষা স্থগিত এবং পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তা বাতিল করা হয়।

এইচএসসিতে জিপিএ-৫ ও পাসের হারে এগিয়ে মেয়েরা
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবারও পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে মেয়েরা। এ বছর ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ছাত্রীদের পাসের হার ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ছাত্রদের পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ।

জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক দিয়েও এগিয়ে রয়েছেন মেয়েরা। মোট ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী ৮০ হাজার ৯৩৩ জন। আর ছাত্র ৬৪ হাজার ৯৭৮ জন।

পাসের হারে শীর্ষে সিলেট, জিপিএ-৫ এ ঢাকা বোর্ড
উচ্চ মাধ্যমিকে পাসের হারে এবার ৯ সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সিলেট; আর জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে প্রথমে রয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।

সিলেট শিক্ষা বোর্ডে এবার পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৮৩ হাজার ১৬৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ পাস করেছে। উত্তীর্ণ ৭১ হাজার ১২ জনের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬ হাজার ৬৯৮ জন।

অন্যদিকে ঢাকা বোর্ডে উত্তীর্ণ ২ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৮ হাজার ৫৪৮ জন। ঢাকা বোর্ডে এবার পাসের হার ৭৯ দশমিক ২১ শতাংশ।

সম্মিলিত ১১ বোর্ডের হিসাবে পাসের হারের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে; জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৬১৩ জন।

১১টি শিক্ষা বোর্ডে এবার সবচেয়ে পিছিয়ে ময়মনসিংহ বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ; জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৮২৬ জন।

কারিগরি বোর্ডে এবারের পরীক্ষায় অংশ নেয়া ১ লাখ ১৪ হাজার ৩৮২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৮ দশমিক ০৯ শতাংশ পাস করেছে; জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৯২২ জন।

রাজশাহী বোর্ডে ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ পাসের হার নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৪৪৮ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৪ হাজার ৯০২ জন।

চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ পাসের হার নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ৭৪ হাজার ১২৫ জন। ১ লাখ ৫ হাজার ৪১৬ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১০ হাজার ২৬৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।

বরিশাল বোর্ডে এবার পাসের হার ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। উত্তীর্ণ ৫৪ হাজার ৮৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ১৬৭ জন।

দিনাজপুর বোর্ডে ৮৬ হাজার ৯৫৪ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে। তাদের মধ্যে ১৪ হাজার ২৯৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। পাসের হার ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

কুমিল্লা বোর্ডে এবার পাসের হার ৭১ দশমিক ১৫ শতাংশ। এই বোর্ডের উত্তীর্ণ ৭৯ হাজার ৯০৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৯২২ জন।

আর যশোর বোর্ডে পাস করেছে ৬৮ দশমিক ২৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। এই বোর্ডের উত্তীর্ণ ৭৮ হাজার ৭৬৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৯৪৯জন।

৮০ দশমিক ৬৫ শতাংশ পাসের হারে গত বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে সবার শীর্ষে ছিল বরিশাল। সম্মিলিত ১১ বোর্ডের হিসাবে পাসের হারে শীর্ষে ছিল কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে ৯১ দশমিক ২৫ ভাগ শিক্ষার্থী পাস করে গত বছর। আর জিপিএ-৫ এ সবার সেরা ঢাকা বোর্ডে পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পায় ৩১ হাজার ৭৫২ জন শিক্ষার্থী।

পাসের হার বেশি সিলেটে, কম ময়মনসিংহে
২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। এবার পাসের হারে এগিয়ে আছে সিলেট বোর্ড এবং সবচেয়ে কম পাস করেছে ময়মনসিংহ বোর্ডে। সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৯ এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ।

অপর দিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ২১, রাজশাহী ৮১ দশমিক ২৪, কুমিল্লা ৭১ দশমিক ১৫, যশোর ৬৪ দশমিক ২৯, চট্টগ্রাম ৭০ দশমিক ৩২, বরিশাল ৮১ দশমিক ৮৫, দিনাজপুর ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সিলেট শিক্ষা বোর্ড পাসের হারে সর্বোচ্চ বেশি ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর সব চেয়ে কম ময়মনসিংহ ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ।

এবার ৬৫ কলেজে কেউ পাস করেনি
এবার দেশের ৬৫টি কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া কেউ পাস করতে পারেননি। গত বছর শূন্য পাস করা কলেজের সংখ্যা ছিল ৪২টি। সেই হিসাবে এবার শূন্য পাস কলেজের সংখ্যা বেড়েছে ২৩টি।

আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি সব শিক্ষা বোর্ডের ফলাফলের যে সারসংক্ষেপ তৈরি করেছে, সেখান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সম্মিলিত ১১ বোর্ডে পাসের হারে শীর্ষে মাদরাসা বোর্ড
সম্মিলিত ১১টি শিক্ষা বোর্ডের হিসাবে পাসের হারের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে এবার ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে; জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৬১৩ জন।

এ বছর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষায় পাস করেছে ৯৩.৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী। গত বছর যা ছিল ৯০.৭৫ শতাংশ। সে হিসাবে এ বছর আলিম পরীক্ষায় পাসের হার বেড়েছে ২.৬৫ শতাংশ।

আলিম পরীক্ষায় মোট ৮৫ হাজার ৫৫৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। উত্তীর্ণ হয়েছে ৭৯ হাজার ৯০৯ জন। ৪৬ হাজার ৪৩৩ জন ছাত্রের মধ্যে পাস করেছে ৪২ হাজার ৭৯৩ জন। পাসের হার ৯২.১৬।

অন্যদিকে ৩৯ হাজার ১২৫ জন ছাত্রীর মধ্যে পাস করেছে ৩৭ হাজার ১১৬ জন। পাসের হার ৯৪.৮৭। অর্থাৎ আলিমে পাসের হারে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে।

জিপিএ-৫ বেড়েছে ৩৬ শতাংশ
এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। ২০২৩ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী। সে হিসেবে এবার জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে ৫৩ হাজার ৫৪৬ জন, যা শতকরা হিসাবে ৬৩ দশমিক ৩০ শতাংশ প্রায়।

 

ভোরের আকাশ/রন