সম্প্রতি সামাজিক গণমাধ্যমে পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য গঠিত সমন্বয় কমিটি বাতিল করা নিয়ে তুলকালাম হয়ে গেলো (বাস্তব জীবনে আদৌ এটি কোনও হুল্লোড় তুলেছে কিনা সেটি নিয়ে আমার সন্দেহ আছে)। আমি যেহেতু আগের কমিটির অধীনে কাজ করেছি, ব্যক্তিগত কৌতূহল আর দায়বদ্ধতার কারণে এ ব্যাপারটি বোঝার চেষ্টা করছি। এ কারণেই এই লেখা। আগের সরকারের পতনের পর এখন মাস দুয়েক হয়ে গেছে। এক ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বভিত্তিক রাজনীতি ও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির দুটি ধারা একত্র হয়ে বিগত সরকারকে নামানোর পর এখন তাদের মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এটি ছিল অবধারিত। তেলে আর জলে কখনও মিশ খায় না।
যে সমন্বয় কমিটি বাতিল করা হলো তাতে সদস্য ছিলেন দশজন। এরা হলেন- ড. খ. ম. কবিরুল ইসলাম (অতিরিক্ত সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়), রাখাল রাহা (শিক্ষা গবেষক), অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন (পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম (বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), ড. সামিনা লুৎফা (সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়- অক্সফোর্ড থেকে ডিফিল করা এই মানুষটির নামের শুরুতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বিজ্ঞপ্তিতে ড. লাগাতে পারলো না কেন কে জানে!), মাসুদ আখতার খান (অতিরিক্ত সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়), অধ্যাপক রবিউল কবির চৌধুরী (এনসিটিবি) এবং অধ্যাপক এএফএম সারোয়ার জাহান (এনসিটিবি), মো. ইয়ানুর রহমান (সিনিয়র সহকারী সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ)।
কাদের এই সমন্বয় কমিটি প্রতিস্থাপন করলো? সেটি ছিল আগের সরকারের আমলে করা জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটি। আমরা যদি ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বরের প্রজ্ঞাপনটি দেখি তাহলে বোঝা যাবে সাম্প্রতিক বাতিল করার প্রজ্ঞাপনের তুলনায় আগের প্রজ্ঞাপনটি কতো যত্ন করে লেখা হয়েছিল। প্রথমত, কোর কমিটির সদস্যদের কে কোন কারণে জায়গা পেয়েছেন তার কিছু ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল। কিছু উদাহরণ দেই- কমিটির প্রধান ছিলেন এনটিসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা। শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্থান পেয়েছিলেন অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান। তিনজন ছিলেন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক শাহীন মাহবুবা কবির (ইংরেজি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক লাফিফা জামাল (রোবোটিক্স ও মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)। মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে ছিলেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী, শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক মেহতাব খানম (মনোবিজ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এবং প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হিসেবে ছিলেন আনীর চৌধুরী। এর বাইরে ছিলেন মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরী এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ড. নুরুল ইসলাম। সবশেষে পদাধিকারবলে ছিলেন বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষাক্রম ও নির্দেশনা কৌশল বিভাগ, শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পরিচালক (প্রশিক্ষণ), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, পরিচালক (মাধ্যমিক), মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, সদস্য (শিক্ষাক্রম) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে আরও ছয় জন বিশেষজ্ঞ। এই কোর কমিটির অধীনে একটি ১৬ সদস্যবিশিষ্ট কার্য সম্পাদন কমিটি করা হয়, যেটি পরের বছর বাইশে জানুয়ারির প্রজ্ঞাপনে দেওয়া আছে। দেখা যাচ্ছে আগের কোর কমিটির একজন সদ্য বাতিলকৃত সমন্বয়ক কমিটিতেও ছিলেন।
প্রথমেই যে পার্থক্যটি ধরা পড়ে সেটি হলো সদ্য বাতিলকৃত সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণায় তড়িঘড়ি করার প্রবণতা। এই কমিটিতে কোন মানুষটি কী কারণে অন্তর্ভুক্ত হলেন তার কোনো ব্যাখ্যা নেই। কার দায়িত্ব কী তারও কোনও সাধারণ ধারণা নেই, যেটি ২০১৯ সালে ঘোষিত কোর কমিটির প্রজ্ঞাপনে ছিল। এর মানে কিন্তু এই নয় তারা অযোগ্য। তাদের কাছের মানুষজন নিশ্চয়ই জানেন তাদের যোগ্যতা। কিন্তু সরকারি প্রজ্ঞাপনে সেটি ব্যাখ্যা করা উচিত ছিল।
ঘটনাচক্রে সদ্য বাতিলকৃত সমন্বয় কমিটির দুজন সদস্যের সঙ্গে আমার আন্তর্জালিক পথচলায় দুয়েকবার দেখা হয়েছে। একজন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রথিতযশা পদার্থবিদ। দুঃখজনকভাবে পেশাদার গবেষক হিসেবে তার দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার ছাপ সামাজিক গণমাধ্যমে শিক্ষাক্রম সংক্রান্ত সমালোচনায় পড়েনি। সেখানে তিনি অজস্র বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের দিকে নজর দিয়েছিলেন। আমার সবচেয়ে প্রিয় উদাহরণ হলো তার ২০২৩ সালের নভেম্বরের ১৩ তারিখে দেওয়া পোস্ট; যেখানে তিনি দাবি করেছিলেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান শিক্ষাক্রমে একক ও পরিমাপ, বিদ্যুৎ, বল ও গতি, রশ্মি ও তরঙ্গ, পৃথিবী ও মহাকাশ, শক্তি, চৌম্বকত্ব, অণু-পরমাণু এসব নেই। মজার ব্যাপার হচ্ছে- তিনি পাঠ্যবইগুলো খুললেই জানতে পারতেন পৃথিবী ও মহাকাশ, অণু-পরমাণু সপ্তম শ্রেণিতে এবং শক্তি, চৌম্বকত্ব, বিদ্যুৎ, বল, শক্তি, গতি, একক ও পরিমাপ ষষ্ঠ শ্রেণিতে শেখানো হয়েছে।
অন্যজন শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলনের একজন নেতা। এই ফোরামটি শিক্ষা বিষয়ক চমৎকার কিছু আলোচনা ও উদ্যোগের জন্ম দিয়েছে। যদিও একই সঙ্গে এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচারণার প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে। সত্যি কথা বলতে কী, আমি অবাক হবো না যদি এই দুই জন মনে করেন যে তারা আসলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সস্তা জনপ্রিয়তার মোহে অপপ্রচার চালাননি, বরং নিজের দায়িত্ব থেকে সৎভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ একজন মানুষের ভেতরে কী ভাবনা চলছে সেটি নিয়ে আমার পক্ষে বাইরে থেকে রায় দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলার যে পদ্ধতি তারা অনুসরণ করেছিলেন, এখন সেটিই বুমেরাং হয়ে তাদের কাছে ফেরত এসেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহর হুমকিতে ভয় পেয়ে সরকার এই সমন্বয় কমিটি বাতিল করে দিয়েছে।
আমি যদি একতরফা এই মানুষগুলোকে অপপ্রচারের জন্য দায়ী করি তাহলে ব্যাপারটি ভারী অন্যায় হবে। যেদিন প্রথম তারা তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন সেদিনই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের উচিত ছিল এই অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে সৎভাবে প্রত্যেকটি উদ্বেগের কারণ খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী সঠিক তথ্য তুলে ধরা। অথচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম- যেখানে দেশের মানুষের একটি বড় অংশ অনেক সময় কাটায় এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রায় সবাই যেটিকে জীবনের একটি অচ্ছেদ্য অংশ মনে করে- সেখানে উপস্থিত থেকে দেশের মানুষের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরার ব্যাপারে বোর্ডের কোনও উদ্যোগ ছিল না। আমার উপস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ সভায় একাধিকবার এ প্রসঙ্গ এসেছিল কিন্তু তার কোনও প্রভাব বোর্ডের কার্যক্রমে পড়েনি। আপনি যখন একটি অভিযোগ করবেন কিন্তু অভিযোগকারী আপনার উদ্বেগ প্রশমনের ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেবে না, তখন আপনার মনে সন্দেহ হবে যে নিশ্চয়ই বোর্ড কিছু লুকানোর চেষ্টা করছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অনেক পরে এসে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে কিছু তথ্যচিত্র দিয়েছিল। কিন্তু সেখানে কী কেউ যায়? আপনি যদি ঢাকার ফার্মগেটে আলু বিক্রি করতে চান আর দোকান দেন চট্টগ্রামের চকবাজারে, তাহলে কি হবে? জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কার্যক্রমের সবচেয়ে বড় অংশীদার হলেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা। এই মানুষগুলো কোথা থেকে তাদের তথ্যের বড় অংশ পান? তারা তাদের তথ্যের বড় অংশ পান টিকটক, ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ থেকে। সেখানে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের উপস্থিতি ছিল শূন্য। ঘটনাচক্রে এখন শায়খ আহমাদুল্লাহর অনুসারীদের একটি বড় অংশও তাদের তথ্য সংগ্রহ করেন টিকটক, ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ থেকে। তথ্য সংগ্রহের সেই বলয়টি সদ্য বাতিলকৃত সমন্বয় কমিটির সদস্যদের অনুসারীদের তথ্য সংগ্রহের বলয় থেকে ভিন্ন। বড় বলয় ছোট বলয়কে গ্রাস করে ফেলেছে এই যা।
আমি ব্যক্তিগতভাবে দুয়েকবার চেষ্টা করেছিলাম এই যোগাযোগহীনতা কাটাতে। অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুনের সঙ্গে আমার একটি চমৎকার আড্ডা হয়েছিল, তার ভিডিও রেকর্ড আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহে আছে। রাখাল রাহার সঙ্গে আমি বসার চেষ্টা করে জবাব পেয়েছিলাম তিনি সরকারের ভেতরের চাইতে বাইরে থাকতে বেশি আগ্রহী। আমি তাদের অবস্থানকে শ্রদ্ধা জানিয়েছি এবং তাদের উদ্বেগ আমলে নিয়েছি। আমার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার সঙ্গে একটি সরকারি আনুষ্ঠানিক উদ্যোগের অনেক তফাৎ। দ্বিতীয়টি একদমই ছিল না। আরেকটি ব্যাপার হলো যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এই দুইজন মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সস্তা জনপ্রিয়তার মোহে পড়ে অপপ্রচার করেছেন, এটিই তাদের একমাত্র অবদান নয়। অনেক ক্ষেত্রেই কিন্তু তাদের পর্যবেক্ষণগুলো ছিল সঠিক।
বিশেষ করে জাতীয় শিক্ষাক্রমের যথেষ্ট জনসম্পৃক্ততা না থাকার ব্যাপারটি সত্যি। এটি আমাকে এতটাই পীড়া দিয়েছিল যে একটি জাতীয় দৈনিকের পাতায় গত জানুয়ারিতে একটি বড় লেখাও ফেঁদে বসেছিলাম। তবে যে দিনটিতে এই মানুষগুলো ২০১৯ সালের কোর কমিটির চেয়ে উচ্চতর নৈতিক সমতলে পৌঁছে গিয়েছিলেন সেই দিনটি হলো ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর। বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি উন্মুক্ত আলোচনা সভা আয়োজন করতে চেয়েছিল। কিন্তু তখনকার বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন মাস্তানি করে তাদের মিলনায়তন ব্যবহারের অনুমতি ঠিক আগমুহূর্তে বাতিল করে দেয়। আমি ভিনদেশে থাকায় ঘুম থেকে উঠে ব্যাপারটি জানতে পারি। তাৎক্ষণিকভাবে ভেতরে খবর নিয়ে শুনি এতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের হাত ছিল না। বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন সরকারকে তোষামোদ করতে গিয়ে এই কাজটি করেছে। তখন যদি কোর কমিটি তাৎক্ষণিকভাবে বিবৃতি দিয়ে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতো তাহলে তারা বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে আজকে একই নৈতিক সমতলে থাকতো।
এখন আসি সমন্বয় কমিটির বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে। শায়খ আহমাদুল্লাহর অনুসারীদের বক্তব্য হলো অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন ও অধ্যাপক সামিনা লুৎফা সামাজিক ও জৈবিকভাবে সংখ্যালঘু মানুষদের অধিকার ও ন্যায়বিচারের পক্ষে কথা বলছেন, যেটি কিনা খুব খারাপ। অথচ যারা নিপীড়িত মানুষের পক্ষে কথা বলেন তাদের কিন্তু আমাদের মাথায় তুলে রাখার কথা। শুধু তাই নয়, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের একটি নীতি হলো ‘মতপার্থক্যপূর্ণ বিষয়ে যথাসম্ভব প্রান্তিকতা পরিহার করে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা’। অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন ও অধ্যাপক সামিনা লুৎফার কোনও দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে যদি তাদের আপত্তি থাকে তাহলে তো নিজেদের নীতি অনুসারেই তাদের একটি চরম বিরোধিতার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হয়নি। ন্যূনতম যেটি তারা করতে পারতেন তা হলো এই মানুষগুলোকে চায়ের দাওয়াত দিয়ে আলোচনায় বসা, যেখান থেকে একটি মধ্যপন্থা বেরিয়ে আসবে। খালি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলার শর্টকাট পথ নিলে হবে? আজকে তারা অধ্যাপক মামুনদের বিরুদ্ধে যে পদ্ধতি প্রয়োগ করে জিততে চাইছেন, কালকে হিযবুত তাহরীর তাদের বিরুদ্ধে একই পদ্ধতি প্রয়োগ করে জিতে যাবে না তার কোনও গ্যারান্টি আছে? এই ক্ষমতার খেলার শেষ কোথায়? বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কার শক্তি কতো সেই যুদ্ধের বলি হওয়া উচিত?
আমি আশা করবো সরকার এবার আগের চেয়ে আরেকটু যত্ন নিয়ে সমন্বয়ক কমিটি করবে। বাতিলকৃত সমন্বয়ক কমিটির কার্যপরিধি আমার কাছে অনন্য কিছু মনে হয়নি। আগের কোর কমিটি ও তার শাখা-প্রশাখাগুলোর ওপরও একই দায়িত্ব ছিল। আমি আশা করবো তারা তাদের প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করবেন কেন তাদের মতামত কোর কমিটির মতামতের চেয়ে ভিন্ন। সমন্বয়ক কমিটি তাদের কাজ আন্তরিকভাবে করছে কিনা সেটি বিচারের সবচেয়ে সহজ লিটমাস টেস্ট হচ্ছে যারা তাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তাদের কথা বলা হচ্ছে কিনা সেটি দেখা। এটি অস্বস্তিকর, কিন্তু অনিবার্য। যেটি আমি ব্যক্তিগতভাবে অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুনের সঙ্গে করেছিলাম ও রাখাল রাহার সঙ্গে করতে চেয়েছিলাম এবং যেটি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আগে আনুষ্ঠানিকভাবে করেনি। আপনারা যদি এই অস্বস্তিকর কাজটি না করেন তাহলে আপনাদেরও একই ভুল হবে ও আমরা একটি দুষ্ট চক্রে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ঘুরপাক খেতে থাকবো।
সবশেষে শিক্ষা উপদেষ্টার উদ্দেশে একটি কথা বলবো। সজ্জন হিসেবে আপনার পরিচিতি আছে। এটি আমরা কাজে দেখতে চাই। এই যে অসাবধানতাবশত একটি অনানুষ্ঠানিক আলোচনা ভুলবশত প্রজ্ঞাপন আকারে বের হয়ে গেছে, এই গল্প আমরা কেউ বিশ্বাস করিনি। আমরা সবাই বুঝতে পেরেছি আপনারা শায়খ আহমাদুল্লাহর হুমকিতে ভয় পেয়েছেন। মাত্র দুই মাস হলো আপনি দায়িত্ব নিয়েছেন। দক্ষতা আমরা এখনও আপনার কাছে আশা করি না, কিন্তু সততাটুকু আশা করি।
লেখক: তত্ত্বীয় কোয়ান্টাম কম্পিউটার বিজ্ঞানী, আইবিএম থমাস জে. ওয়াটসন রিসার্চ সেন্টার, যুক্তরাষ্ট্র।
ভোরের আকাশ/রন