বাজারকে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সরকারের উদ্দেশে ক্যাবের নেতারা সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজার ও রাজপথের সংস্কার করার দাবি করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তোপখানা রোডে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এই আহ্বান জানান হয়। ‘অসাধু ও মুনাফা শিকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধন’-এর আয়োজন করে ক্যাব। এতে সভাপতিত্ব করেন ক্যাবের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া। মানববন্ধনে ক্যাবের নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, গণঅভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলেও বাজার সিন্ডিকেটকারী ও চাঁদাবাজদের পতন হয়নি। তারা বহাল আছে। এই চক্রের কারণে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এই অসাধু চক্র ভেঙে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য রেশন ব্যবস্থা ও ন্যায্যমূল্যের দোকান চালুর দাবি করেছেন।
বাংলাদেশ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, সরকার বিভিন্ন সংস্কারের জন্য কমিশন করেছে। কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অগ্নিমূল্য। বাজারে গিয়ে মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়ছে। চড়া দামের জন্য বাজারে যাওয়া যাচ্ছে না। চাল, চিনি, পেঁয়াজ, তেল, আলু, সবজিসহ সবকিছু সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চেলে গেছে। অন্যদিকে যানজটের কারণে রাজধানীতে চলাচল করা যাচ্ছে না। একটা দুর্বিষহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারের চেয়ে এখন বাজার ও রাজপথের সংস্কার বেশি জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকারকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই দুই সমস্যার সমাধানে বাস্তব উদ্যোগ নিতে হবে।
ক্যাবের কেন্দ্রীয় সদস্য প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, দ্রব্যমূল্য ও রাজধানীর যানজট এখন অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। ডিমের ওপর শুল্ক ছাড় দিয়ে আমদানি করার পরেও ডিমের দাম কমছে না কেন? এর নেপথ্যে রয়েছে বাজার সিন্ডিকেটের চক্রান্ত। দায়সারা গোছের আশ্বাস আর ভালো ভালো কথাবার্তা বলে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া হচ্ছে জনগণ এটা দেখতে চায়।
মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে ক্যাবের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া বলেন, বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া ও তাদের সাজার আওতায় আনতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। তবে দ্রুত বাজার পরিস্থিতি সহনীয় করতে অন্তত দুই মাস নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য শুল্কমুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি। মানববন্ধনে ৯ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। উল্লেখযোগ্য দাবির মধ্য রয়েছেÑ পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে বিশেষ টাস্কফোর্সের ও ভোক্তা অধিকারের কার্যক্রম সারা দেশে চালু রাখতে হবে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী, মজুতদার, কালোবাজারিদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে আইনের আওতায় আনতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাইকারি ও খুচরা দাম নির্ধারণ করে তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। পেঁয়াজ, রসুন, আদা, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য শুল্ক ছাড়া আনতে এলসি খোলার ব্যবস্থা করা এবং আমদানির পরে বাজারে নির্দিষ্ট দামে বিক্রির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ক্যাবের কেন্দ্রীয় সদস্য আবুল কালাম আজাদ ও শওকত আলী খান। সঞ্চালনা করেন হুমায়ূন কবির।
ভোরের আকাশ/রন