logo
আপডেট : ১৭ অক্টোবর, ২০২৪ ১১:১০
ডেঙ্গুর লাগাম টানুন
নিজস্ব প্রতিবেদক

ডেঙ্গুর লাগাম টানুন

রাজধানী ঢাকায় সময়ের গতির সঙ্গে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা যে বাড়ছে সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যেমন- বাড়ছে রোগীদের ভিড় তেমনি বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। এতে করে ঢাকাজুড়ে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। এই ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় না। ফলে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা অন্যান্য বারের চেয়ে এবার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল দৈনিক ভোরের অকাশে এই মর্মে প্রকাশিত খবরে সে কথাই বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিল যেন থামছে না। চলতি বছর ৪২ হাজার ৪৭০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আর ডেঙ্গুতে আকান্ত হয়ে মারা গেছেন ২১৪ জন। তন্মধ্যে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার শক সিনড্রোমও ফ্লুইড ম্যানেজম্যান্ট জটিলতায় বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। যারা দ্বিতীয় বা তার চেয়ে বেশিবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তারাই শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। এই অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। মশা প্রতিরোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার কারণেই যে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার বেড়ে যাচ্ছে সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বৃষ্টিপাত বেড়ে যাবার কারণেও মশার বংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এবার মশা নিধনে জোরালো উদ্যোগ না নেয়ার কারণেই এই ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে আমরাও মনে করি।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার দুই সিটির ১৮টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে বেশি। সেখানে বলা হয়— দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টিতে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর হার বেশি। এর অর্থ হচ্ছে, এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এলাকাগুলো ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মুখপাত্র মকবুল হোসাইন বলেন, সপ্তাহব্যাপী মশক নিধনে পরিচালিত বিশেষ কার্যক্রমে এক লাখ ২১ হাজার ৮৮৬টি বাড়ি পরিদর্শন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫১টি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। এসব লার্ভা ধ্বংস করা হয়েছে। মশা নিধনে আমাদের কোনো কার্যক্রমই থেমে নেই। মশক নিধনে যাবতীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমও আমরা পরিচালনা করছি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত বছরের জুলাইয়ে শুরু হয় ডেঙ্গুর মৌসুম। এ বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৪১ হাজার ৮১০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। মারা যান এক হাজার ৭০৫ জন। এ বছর ডেঙ্গু সংক্রমণের বিস্তার শুরু থেকেই স্থানীয় পর্যায়ে বেশি থাকলেও ক্রমে সে চিত্র বদলেছে। সারাদেশে মোট ভর্তি রোগীর ৪৪ শতাংশই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। আর ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ রোগী চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে।

আমরা জানি, ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিধনের বিকল্প নেই। তাই ডেঙ্গুর এই ভয়াবহতা রুখতে এখনি নিতে হবে মশা নিধনে জোরালো উদ্যোগ। এই মুহূর্তে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঠেকাতে বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে এডিস মশাকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। ডেঙ্গু রোগীর বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে প্রতিটি বাড়ির চতুর্দিকে ফগিং করে উড়ন্ত মশাকে মেরে ফেলতে হবে। যাতে কোনোভাবেই ডেঙ্গু বহনকারী মশাটি অন্য কাউকে আক্রান্ত করতে না পারে। ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেয়া হাসপাতালগুলোর চতুর্দিকে নিয়মিত ফগিং করতে হবে। যাতে সেখানে কোনো এডিস মশা বেঁচে না থাকে। হাসপাতাল ও বাড়িতে থাকা যেকোনো ডেঙ্গু রোগীকে সব সময় মশারির ভেতরে রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেসব এলাকায় এখনো ডেঙ্গু ব্যাপক আকার ধারণ করেনি, সেসব এলাকায় লার্ভা ধ্বংসের কীটনাশক ব্যবহারে জোর দিতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকার পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে আমরা আশাবাদী।

 

ভোরের আকাশ/রন