logo
আপডেট : ১৮ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:৩৫
শেখ হাসিনাকে কী ফেরানো সম্ভব?
সিরাজুল ইসলাম

শেখ হাসিনাকে কী
ফেরানো সম্ভব?

বাংলাদেশের বন্ধু ও প্রতিবেশী দেশ ভারত। সেখানেই অবস্থান করছেন ক্ষমতা ছেড়ে যেতে বাধ্য হওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তাকে বাংলাদেশ ফেরত চাইবে; ফিরিয়ে আনবে- এমন কথা শোনা যাচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরে। এরই মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সদ্য সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী; তার মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন সদস্য, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। ১৮ নভেম্বর তাদের ট্রাইব্যুনালে তাদের হাজির করতে বলা হয়। এই খবর পাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, তার মন্ত্রণালয় শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে। এখন কথা হলো- ঢাকা চাইলেই কী দিল্লি শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে? ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেছেন, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতেই আছেন এবং ভারতেই থাকবেন। গতকাল মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন। কিন্তু তিনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে কোনোও মন্তব্য করেন। সাদা চোখে দেখলে মনে হবেÑ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্দিবিনিময় চুক্তি আছে। সেই চুক্তির বলে শেখ হাসিনাকে ফেরানো সম্ভব। বাস্তবে তা নয়। কারণ শেখ হাসিনা এখন দিল্লিতে আশ্রয়ে রয়েছেন। আর আশ্রয়ে থাকা ব্যক্তিকে দিল্লি কখনো ফেরত দেয় না। যেমনটি ঘটেছে চীনের নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা দালাই লামার ক্ষেত্রে। চীনের অনেক আহ্বানের পরও দিল্লি তাকে ফেরত দেয়নি।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধের মামলা’য় অভিযুক্ত বা ফেরার আসামি ও বন্দিদের একে অপরের কাছে হস্তান্তরের জন্য একটি চুক্তি আছে। ২০১৩ সালে চুক্তিটি করা হয়। কিন্তু শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নিজ দেশে একের পর এক মামলা হলেও এই চুক্তির আওতায় তাকে ফেরানো যাবে না বলেই মনে করছেন দিল্লির পর্যবেক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে সত্যিই যদি এ ধরনের কোনও অনুরোধ আসে, সে ক্ষেত্রে ভারত সরকারের অবস্থান কী হবে সে বিষয়টি নিয়েও দিল্লি আপাতত মুখ খুলতে চাইছে না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল যেমন বলছেন, যদি প্রত্যর্পণের কথা বলেন, তাহলে সেটা তো পুরোপুরি কাল্পনিক (হাইপোথেটিক্যাল) একটা প্রশ্ন। এরকম পরিস্থিতিতে কাল্পনিক কোনও প্রশ্নের জবাব দেওয়াটা আমাদের রেওয়াজ নয়! আপাতত নির্দিষ্ট জবাব এড়িয়ে গেলেও ঢাকার কাছ থেকে এই ধরনের অনুরোধ যে আগামী দিনে আসতে পারে, সেই সম্ভাবনা কিন্তু দিল্লি নাকচ করছে না। পাশাপাশি বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ মহল থেকেও আভাস পাওয়া যাচ্ছে, এই সম্ভাবনাটা হয়তো খুব বেশি দিন আর ‘কাল্পনিক’ থাকবে না।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে সব মামলা রুজু হচ্ছে তার ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে ভারতকে এই প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানো হবে কি না। সে ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যেকার চুক্তি অনুযায়ী তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে বাস্তবতা হল, ওই চুক্তির আওতায় যদি প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানানোও হয় তাহলেও সেই অনুরোধ রক্ষা করার কাজটা যে সহজ হবে না সেটা ঢাকারও বিলক্ষণ জানা। কারণ, ওই চুক্তিতে এমন কতগুলো বিধান বা শর্ত আছে, যার যে কোনওটাকে ব্যবহার করে ভারত এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে।

নানা আইনি জটিলতা বা মারপ্যাঁচ দেখিয়েও সেই অনুরোধ ফেলে রাখতে পারে দিনের পর দিন। সবচেয়ে বড় কথা- শেখ হাসিনা বিগত প্রায় ৫০ বছর ধরে ভারতের সবচেয়ে আস্থাভাজন ও বিশ্বস্ত বন্ধুদের একজন। ফলে তাকে বিচারের জন্য বা দণ্ডিত হলে শাস্তিভোগের জন্য বাংলাদেশের হাতে ভারত তুলে দেবে- বাস্তবে এই সম্ভাবনা কার্যত নেই বললেই চলে।

 

ভোরের আকাশ/মি