logo
আপডেট : ১৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১৯:২৯
চট্টগ্রামের বাজারে ক্রেতার নাভিশ্বাস
জেলা প্রতিনিধি ,(চট্টগ্রাম)

চট্টগ্রামের বাজারে ক্রেতার নাভিশ্বাস

চট্টগ্রামে আগুন দামে বিক্রি হচ্ছে শীতকালীনসহ প্রায় সবরকম সবজি। ৭০-১০০ টাকার নিচে মিলছে না কোনো সবজি। শুধু সবজি নয়, চড়া মাছ ও মাংসের বাজারও। চলতি সপ্তাহে ডিমের দাম সামান্য কমলেও দুইশ ছাড়িয়ে গেছে ফার্মের মুরগির দাম। বাজারে আগুন দামে নাভিশ্বাস অবস্থা ক্রেতার। বিপাকে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

সরেজমিন চকবাজার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, শিম ২৪০ টাকা, বেগুন ছোট ১৪০ টাকা, টমেটো ২০০, ঢেঁড়স ৮০ থেকে, পটল ৭০ টাকা, বাধাকপি ৭০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৬০-৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, শসা ৭০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ টাকা, পেপে ৫০, মুলা ১০০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, বরবটি ৮০-১০০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, টমেটো ২০০ টাকা, কাঁচামরিচ ৫০০ এবং লাউ ৫০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া, পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকা, বড় আলু ৫৫-৬০ টাকা, দেশি আলু ৭০ টাকা, দেশি আদা ১৮০ টাকা, চায়না আদা ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা এবং রসুন ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে শুধু সবজি নয়, বেড়েছে সবরকম শাকের দামও। প্রতি আঁটি লাল শাক ৫০ টাকা, পালং শাক ৩০ টাকা, লাউ শাক ৪০ টাকা, কুমড়া শাক ৩০ টাকা, কচু শাক ৩০ টাকা ও কলমি শাক ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ আগে এসব শাক মিলত ১০-৩০ টাকার মধ্যে।

পাইকার ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে বৃষ্টি ও বন্যার কারণে ফসল, মাছ ও মুরগির খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বাজারে পণ্যের সরবরাহ কমে গেছে। ফলে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম থাকায় দামও কিছুটা বেড়েছে। তবে সরবরাহ বাড়লে দামও কমবে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, সবজি দাম বাড়তি হওযায় বিক্রিও তুলনামূলক কমেছে। আগে কেউ এককেজি নিলে এখন নিচ্ছে ২৫০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম।

এদিকে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।

চকবাজারের কাঁচাবাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা মো. রাসেল বলেন, আমরা রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তসহ চন্দনাইশ ও দোহাজারী থেকে পাইকারি দরে সবজি কিনে এখানে খুচরায় বিক্রি করি৷ পাইকারি দামের উপর আমাদের বিক্রি নির্ভর করে। তারা বেশি রাখলে আমাদের করার কী আছে। দাম বেশি হওয়ায় বিক্রি এখন অনেক কম। এখন ২৫০ গ্রাম-৫০০ গ্রামের বেশি কেউ নিতে চায় না। পাইকারি বাজারে নিয়মিত তদারকি থাকলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

বাজারে সবজি ও মাছ কিনতে আসা মো. হায়দার আসা নামে এক ক্রেতা বলেন, সবজি, মাছ-মাংসসহ সবকিছুর দাম বাড়তি। কী খাব, কিভাবে চলবে বুঝতে পারছি না আসলে। সবজি, মাছ-মাংস কনিতেই এখন হিমশিম অবস্থা। তবে মাছ-মাংসের চেয়ে এখন শাক-সবজির দাম তুলনামূলক অনেক বেশি। নিয়মিত কঠোরভাবে বাজার তদারকি প্রয়োজন।

একই বাজারে সবজি কিনতে আসা গার্মেন্টস কর্মী রোকেয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা স্বল্প বেতন চাকরি করি। বাজারে আসলে একেক দিন একেক দাম শুনি। এখন প্রায় সব সবজির দাম ১০০ টাকার কাছাকাছি। সাধ্যের মধ্যে হলে কিনি, না হয় খালি হাতে ফিরে যায়।

অন্যদিকে একই বাজারে গরিবের মাছ হিসেবে পরিচিত পাঙ্গাস এবং তেলাপিয়াও বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ২৪০ টাকায়। এছাড়া রুই আকারভেদে ৩০০-৩৫০, পাবদা মাছ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, নারকেলি মাছ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, লইট্ট্যা মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, ফার্মের কই মাছ ২৮০ টাকা, কাতাল মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে সপ্তাহ ঘুরতেই কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেড়েছে ফার্মের মুরগির দাম। বর্তমানে চকবাজার কাঁচাবাজারে ফার্মের মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২১০ টাকায়। এছাড়া সোনালি মুরগি ৩৫০ টাকা এবং দেশী মুরগি কেজি ৫৫০টাকা। আর পোলট্রি মুরগির ডিম ১৫৬ থেকে ১৬০ টাকা দরে ডজনপ্রতি বিক্রি হচ্ছে এই বাজারে।

এছাড়া গরুর মাংস হাড্ডি ছাড়া ৯৫০ টাকা এবং হাড্ডিসহ ৭৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এদিকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়ে চট্টগ্রামের কর্মকর্তাদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রাম বিভাগ ও জেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে কর্মকর্তাদের ভূমিকার প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘টাস্কফোর্স বা ভোক্তা অধিকার-আপনারা কয়টা অভিযান পরিচালনা করেছেন, কী পরিমাণ কাজ করেছেন সে বিষয়ে আমি কিছুই পাইনি। আমাকে বাণিজ্য সচিব তিনদিনের টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।

এসময় তিনি সিন্ডিকেট ভাঙতে কঠোর হওয়ার পাশাপাশি বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগের নির্দেশ দেন কর্মকর্তাদের।

 

ভোরের আকাশ/মি