logo
আপডেট : ২০ অক্টোবর, ২০২৪ ১১:৪৪
জাহিদ মালেকের যত অপকর্ম
মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা

জাহিদ মালেকের যত অপকর্ম

জাহিদ মালেক। মানিকগঞ্জ-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য (এমপি) হয়েছিলেন। এমপি হওয়ার পথ ধরে এগিয়েছেন মন্ত্রিত্বের পথে, আর গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। অভিযোগ উঠেছে, অজস্র অপকর্মের মাধ্যমে তিনি এই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। মানিকগঞ্জ-৩ আসন তার সংসদীয় এলাকা হলেও গোটা জেলায় ছিল জাহিদ মালেকের ‘শাসন’। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির নিয়ন্ত্রক। তার বিরোধিতা করে বা সমর্থন না করে, স্থানীয় এমন অনেক নেতাকর্মীই পরে পদ-পদবি হারিয়েছেন। জেলার বালু মহাল থেকে শুরু করে সবজির আড়ত পর্যন্ত, সব ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ ছিল জাহিদ মালেকের। এই আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে নিজস্ব বাহিনী গড়েছিলেন তিনি। বাহিনীটিকে নিয়ন্ত্রণ করতেন তার একমাত্র ছেলে রাহাত মালেক। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের স্থানীয় ও ভুক্তভোগীরা জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

সাটুরিয়া ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন এবং মানিকগঞ্জ পৌরসভা নিয়ে গঠিত মানিকগঞ্জ-৩ আসন। নৌকাপ্রতীকে টানা চারবার এই আসন থেকে এমপি পদে বিজয়ী হন জাহিদ মালেক। প্রথমে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। যদিও শেখ হাসিনার সর্বশেষ গঠিত মন্ত্রিসভায় কোনো মন্ত্রিত্ব ছিল না তার। সবশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে মফিজুল ইসলাম খান কামালকে পরাজিত করে টানা চার বারের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাহিদ মালেক। অভিযোগ মিলেছে, এই চারবার সংসদ সদস্য থাকাকালে দলীয় কমিটিতে পদপদবি বিক্রি, বালু মহাল নিয়ন্ত্রণ, কৃষকের সার নিয়ন্ত্রণ, পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ, সরকারি জমির অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা ও অন্যের জমি দখলসহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিলেন জাহিদ মালেক ও তার বাহিনী। গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে জাহিদ মালেক গড়ে তুলেছেন মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ১০ তলা বাণিজ্যিক ভবন, বিশাল বাগানবাড়ি, সভা-সেমিনার করার জন্য ছেলের নামে ‘শুভ্র সেন্টার’, ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লটসহ বনানীতে ১৪তলা বিটিএ টাওয়ার। গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকা পর্যন্ত ১১ গুণ সম্পদ বেড়েছে জাহিদ মালেকের।

আওয়ামী লীগের বঞ্চিত নেতাকর্মীদের অভিযোগ, মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে সহযোগী সংগঠনের সব পদ-পদবিতে নেতা নির্ধারণে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন জাহিদ মালেক। তার সাম্রাজ্যে কেউ বাধা হতে চাইলে তাকেই সরিয়ে দিতেন জাহিদ মালেক। এই প্রতিহিংসায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্য পদও পাননি ত্যাগী ও সৎ অনেক নেতা। ‘দুষ্ট ও অসৎ’ লোকজন নিয়ে কমিটি ঘোষণা করে বাণিজ্য করাই ছিল সাবেক এই মন্ত্রীর কাজ। উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কে কোন পদ পাবেন, টাকার বিনিময়ে তা নির্ণয় করেছেন সাবেক এই মন্ত্রীর ছেলে রাহাত মালেক। গুঞ্জন রয়েছে, ১০ থেকে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে উপজেলা কমিটিতে পদ-পদবি পাইয়ে দিতেন রাহাত। এসব কমিটির টাকার নিয়ন্ত্রণ করতেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এম এ সিফাত কোরাইশী সুমন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জেলায় বালু মহালগুলোর অধিকাংশই নিয়ন্ত্রণ করতো জাহিদ মালেক বাহিনী। এসব বালু মহাল থেকে বড় একটি মাসোহারা প্রতি মাসে পেতেন জাহিদ মালেক। মাসোয়ারার অর্থ দিতে দেরি হলে পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হতো ব্যবসায়ীদের। এক পর্যায়ে এই বালু মহালের মাসিক মাসোহারার অর্থ কম বলে নারাজি প্রকাশ করেন সাবেক এই মন্ত্রী। পরবর্তী সময়ে মহাল পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার ওরফে মাটি বাশার এবং জাহিদের বিশ্বস্ত সহচর আফসার সরকারকে দায়িত্ব দেয়া হয়। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর বালু মহাল নিয়ন্ত্রণে রেখে শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন জাহিদ মালেক ও তার বাহিনী।

মানিকগঞ্জে সরকারিভাবে স্বল্পমূল্যে সার পাওয়ার কথা থাকলেও সেই সার নিয়ন্ত্রণ করতে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়েছিলেন জাহিদ মালেক। সাবেক এই মন্ত্রীর আস্থাভাজন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবু বক্কর তুষার গং জেলার সার নিয়ন্ত্রণ করেছে। চড়া দামে কালোবাজারে এই সার পাচার করেছেন তারা। এদিকে সার না পেয়ে কৃষকরা হাহাকার করেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানলেও সেসময় কিছু বলতে সাহস পায়নি। আবু বক্কর তুষার গংয়ের সিন্ডিকেটের কারণে জেলা-উপজেলার সাধারণ কৃষকদের চড়া দাম দিয়ে সার কিনতে হতো। এতে উৎপাদন খরচ অনেকাংশেই বেড়ে যেত তিনগুণ। আর অতিরিক্ত মূল্যে কালো বাজারের সার বিক্রির বড় একটি অংশ পেতেন জাহিদ মালেক।

মানিকগঞ্জের পরিবহন সেক্টরের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতো জাহিদ মালেক গং। জানা গেছে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রতিটি যানবাহন থেকে জিপির নামে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা তুলত মালেক বাহিনী। সরাসরি এই বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ও জেলা শ্রমিক লীগের নেতা বাবুল সরকার ওরফে কানা বাবুল। এই সেক্টর থেকে বছরে দুইশত কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়েছে এবং সিংহভাগ নিতেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

মানিকগঞ্জ-৩ আসনেই সীমাবদ্ধ ছিল না জাহিদ মালেকের একচ্ছত্র আধিপত্য, বাকি দুটি সংসদীয় আসনেও চলত তার তাবেদারি। কোন প্রতিষ্ঠানে কোন ঠিকাদার কাজ করবে সেটাও তিনি নির্বাচিত করতেন। এই কাজে তাকে সহায়তা করতেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আযম খান আপেলসহ নির্দিষ্ট একটি মহল। প্রতিটি ঠিকাদারি কাজের লাভের একটি অংশ নিজ পকেটে নিতেন জাহিদ মালেক।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আতিকা সরকার জেপির কর্ণধার আকরাম খান বলেন, গত ১৫টি বছর আমরা যারা সাধারণ ঠিকাদারি কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেছি তাদের পুরোপুরি ধব্বংস করে দিয়েছে জাহিদ মালেকের সিন্ডিকেট। কাজ পাওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করলেও তার মধ্যে বিভিন্ন কারসাজি করে, কাজ দিতে নয়-ছয় করেছে। অথচ তাদের পছন্দের ঠিকাদারদের একের পর এক কাজ করেই চলছিল। এমনও হয়েছে আমরা কাজ শেষ করেও বিল পাইনি, ঘুরতে হয়েছে বছরের পর বছর। কিন্তু আওয়ামী লীগ বা মন্ত্রী সিন্ডিকেটের ঠিকাদাররা কাজ শুরুর পরপরই আংশিক বিল পেয়ে যেত। এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অনেক বড়বড় নেতাসহ সরকারি প্রকৌশলীরা জড়িত ছিলেন।

আউটসোর্সিং খাতে জেলা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। অভিযোগ, এসব নিয়োগের জন্য প্রতিজনকে গুনতে হয়েছে আড়াই থেকে তিন লাখ করে টাকা। আউটসোর্সিংয়ে যারা নিয়োগ পেয়েছে তাদের বলা হয়, চাকরি স্থায়ী হলে আরও পাঁচ লাখ করে টাকা দিতে হবে। এসব আউটসোর্সিংয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের আস্থাভাজন সহচর আফসার উদ্দিন সরকার। নিয়োগের পুরো টাকাই নিজের কবজায় নেন জাহিদ মালেক।

সরকারি ওষুধ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগসের কারখানা স্থাপনের জন্য উদ্যোগ হাতে নেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। কারখানাটি প্রাথমিকভাবে স্থাপনের জন্য জায়গা নির্ধারণ হয় জেলা সদর উপজেলার উকিয়ারা। সরকারি অর্থ আত্মসাতের জন্য নিজ ও তার পরিবারের অন্য সদস্য এবং আওয়ামী লীগের অনুসারীদের নামে ৩১ একর জমি কেনেন জাহিদ মালেক। সেই নীচু জমিতে বালু ভরাট করে মৌজার মূল্য বাড়ানোর পাঁয়তারাও করেন তিনি। জমিটি মন্ত্রণালয় থেকে দেখতে গেলে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফ জমির মূল্য বেশি এবং নাল জমি আবাসিক দেখানোর কারণে বাগড়া দেন। ওই সময় সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন এবং জেলা প্রশাসকের অপসারণের জন্য জোর তদবির করেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের একাংশ ও জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি জেলা প্রশাসককে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে হুঁশিয়ারি দেয়। পরবর্তীতে তৎকালীন ডিসি আব্দুল লতিফের বদলির পর পরই জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী রেহেনা আখতার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর রেহেনা আখতারের বদলি হন।

জেলার সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের কামতা মৌজায় পৈতৃকভাবে ১৫ বিঘা নীচু জমি ছিল। সেই নীচু জমি ভরাটের উদ্যোগ নেন জাহিদ মালেক। অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা একাধারে ড্রেজার দিয়ে রাতারাতি বালু ফেলা হয়। নীচু জমিতে বালু ফেলার সময় নাহার গার্ডেনের স্বত্বাধিকারী খাদেমুল ইসলাম পিনূর ৭৮ শতাংশ জমি দখল করে নেন জাহিদ মালেক। জমি দখলের পর পরই পাল্টা মামলাও দেন পিনূর বিরুদ্ধে। জমি ভরাট হয়ে গেলে দখলে নিতে সবজির আড়ত ও গরুর হাট বসান তিনি। গরুর হাট কয়েক দিন চললেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায় এবং সবজির আড়তের দোকান বরাদ্দের নামে বেশ কিছু মানুষের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় মালেক বাহিনীর নেতাকর্মীরা। অপর দিকে সদর উপজেলার জাগীর অঞ্চলে সাবেক মন্ত্রী কার্বন হোল্ডিংস লিমিটেড নামে একটি কারখানা স্থাপন করে। কারখানাটি করার সময় জমির মালিকরা জমি দিতে চাচ্ছিলেন না। ওই সময় আওয়ামী লীগের বিশেষ একটি অংশ কৃষকদের কাছ থেকে জোর করে জমি দখল করে জমি নিজের নামে করে নেয়। অভিযোগ রয়েছে, তিন জনের কাছ থেকে ১৭ শতাংশ জমি জবরদখল করে নেয়া হয় যার বর্তমান বাজারমূল্য কয়েক কোটি টাকা।

নাহার গার্ডেনের স্বত্বাধিকারী খাদেমুল ইসলাম পিনু বলেন, আমার প্রয়াত বাবা ৯০ বিঘা জমির ওপর নাহার গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করেন। আমাদের জমির পাশেই জাহিদ মালেকের পৈতৃক কিছু জায়গা ছিল এবং তাদের সম্পদের পাশে আমাদের ৭৮ শতাংশ জমি ছিল। কাঁচা বাজারের আড়ত করার সময় জাহিদ মালেক জোর করে আমাদের জায়গা দখল করে নেন। জমি দখলের পর থেকে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে জাহিদ মালেকের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা। দলিল করে দিতে অস্বীকার করলে নানাভাবে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা দেয় আমাদেরকে। এসব বিষয় শুনে আমার বৃদ্ধ মা শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। বিভিন্ন চাপে মধ্যে ফেলে নামমাত্র অর্থে বিনিময়ে জমি দলিল করে নেয়। তৎকালীন কামতা-গোলড়া কাঁচামালের আড়তের মালিক রাজ্জাক বলেন, আমাদের পৈতৃক জায়গার ওপর কাঁচামালের আড়ত ছিল। সাবেক মন্ত্রী জাহিদ মালেক বাহিনী আমাদের আড়তের পাইকারদের আসতে বাধা প্রয়োগ করে। একটি সময় আমাদের আড়ত বন্ধ হয়ে যায়।

কয়েকজন নেতাকর্মীর অভিযোগ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিনের সুপারিশক্রমে দলীয় টিকিট বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী জাহিদ মালেক। জাহিদ মালেকের ‘পুতুল নেতা’ হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম। তিনি তার সব অপকর্মের সমর্থন করে গেছেন বলেও কারও কারও অভিযোগ। হাতেগোনা তিন চারটি ছাড়া প্রায় সব ইউপি চেয়ারম্যানের টিকিট নিতে গুনতে হয়েছে অর্ধ থেকে এক কোটি টাকা। এসব টাকা সরাসরি সংগ্রহ করেছেন জাহিদ মালেকের নিজ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফছার সরকার। এসব টাকা পৌঁছে দিতেন জাহিদ মালেকের ছেলে রাহাত মালেকের কাছে। টিকিটের টাকা হাতে পেলে জাহিদ মালেককে সবুজ সংকেত দিতেন রাহাত এবং সেই অনুসারেই নির্বাচনের সব আয়োজন করা হতো।

অন্যদিকে সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের উকিয়ারা এলাকায় জাহিদ মালেক নিজ পরিবার ও আওয়ামী লীগের সদস্যদের নামে ৩১ একর জমি কেনেন। এর মধ্যে ১১০ বিঘা জমির মালিক ছিলেন উকিয়ারা গ্রামের আব্দুস সালাম নামের এক ব্যক্তি। তবে ওই জমির মধ্যে ৯২ শতাংশের টাকা না দিয়েই বালু দিয়ে ভরাট করে মন্ত্রী বাহিনী। টাকা চাইতে গেলে নানা সময় ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয় বলে জানান ভুক্তভোগী আব্দুস সালাম। জাহিদ মালেকের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান কার্বন হোল্ডিংস লিমিটেড কারখানা স্থাপনের সময় জোরপূর্বক জমি দখলের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১৭ শতাংশ জমি কৃষককে টাকা না দিয়েই দখল করেছেন সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তারা বলেন, টাকা চাইতে জমির মালিকদের সঙ্গে আমরা গেলেও বিভিন্ন সময় আমাদের অপমান ও লাঞ্ছিত হতে হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তারপর জাহিদ মালেক ও তার অনুসারীসহ অভিযুক্ত নেতাকর্মীরাও আত্মগোপনে। এ কারণে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি বিধায় বক্তব্যও নেয়া যায়নি।

 

ভোরের আকাশ/রন