- ডাক পেল না জাতীয় পার্টি (জাপা)
- সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন চায় গণফোরাম
- আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধতা চায় এলডিপি
- সংস্কারের ও নির্বাচনি রোডম্যাপ চায় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট
- রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত -মাহফুজ আলম
সংস্কার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তৃতীয় দফা সংলাপেও ডাক পেল না জাতীয় পার্টি (এরশাদ)। শনিবার এই দফায় গণফোরাম, এলডিপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দল, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) আলোচনায় অংশ নেয়। এর আগে বিএনপিসহ পাঁচটি দল ও তিনটি জোটের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সংলাপ হয়েছে ৫ অক্টোবর। মাঝে পূজার ছুটির কারণে সব দলের সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়নি। শনিবার বাকি দল ও জোটগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেন প্রধান উপদেষ্টা। ওই সংলাপে সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা।
সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন চায় গণফোরাম
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরামের নেতারা শনিবার দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছেন। সংলাপ শেষে বেরিয়ে যমুনার সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে গণফোরামের সমন্বয় কমিটির সদস্যসচিব মিজানুর রহমান বলেন, বৈঠকে তারা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কারসহ বেশ কিছু ব্যাপারে পরমার্শ দিয়েছেন। সরকার সেটা ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছে বলে জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে সংবিধান, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা নিয়ে গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেন কথা বলেছেন বলে জানান দলটির সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু। তিনি বলেন, সংলাপে বাজারে পরিস্থিতি নিয়ে জোর দিয়েছি। সিন্ডিকেটকে অবশ্যই ভাঙতে হবে।
মোস্তফা মহসীন বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচার ও তাদের বিদেশি এজেন্টরা বাংলাদেশটাকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে, তাদের থেকে উদ্ধারের জন্য আমাদের সবাইকে জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।’
গণফোরাম অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চায় জানিয়ে মোস্তফা মহসীন বলেন, ‘সবাইকে একমত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এ সরকার জনগণের সরকার। এ সরকারকে রক্ষার স্বার্থে; অর্থাৎ আমাদের নিজেদের রক্ষার স্বার্থে আগামী দিনে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে।’
গণফোরামের এই নেতা বলেন, ‘আমরা সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা করব। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) যেকোনো বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা চাইবেন। আমরা যেটা উপলব্ধি করব, সেটাই পরামর্শ দেব। জনগণের জন্য দরজা খোলা আছে বলে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন।’
নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে মোস্তফা মহসীন বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন কমিশন করতে হবে। এটার জন্য সার্চ কমিটি বা কিছু করার প্রয়োজন আছে, ভালো লোক নিয়োগ দেয়ার দরকার আছে। যাতে অতীতের মতো কোনো সমস্যা না হয়।
রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে মোস্তফা মহসীন বলেন, ‘আমরা কোনো তারিখ উল্লেখ করিনি। বলেছি, সংস্কার শেষ দ্রুত নির্বাচন দেয়ার জন্য।’ সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দুই-এক দিনের মধ্যে আলোচনা করে লিখিত আকারে দেব।
আটটি দিবস বাতিল করা হয়েছে, এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে মোস্তফা মহসীন বলেন, জাতীয় দিবস ছাড়া কোনো দিবসই রাখা উচিত নয়।
এই সংলাপে গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন গণফোরামের সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু, কো-চেয়ারম্যান এস এম আলতাফ হোসেন, সুব্রত চৌধুরী, সদস্যসচিব মিজানুর রহমান, সদস্য এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, মহিউদ্দিন আবদুল কাদের, মোশতাক আহমেদ ও সুরাইয়া বেগম।
আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ চায় এলডিপি
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি)। শনিবার বিকেলে আলোচনা শেষে বেরিয়ে যমুনার সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে দলটির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, দেশের ১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কারণে এই দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই।
আলোচনার বিষয়ে অলি আহমদ বলেন, ‘আলোচনা করেছি এবং লিখিত প্রস্তাব দিয়েছি। প্রথমবার যখন এসেছি, তখন ১০৩টা প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আরও ২৩টা প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের দল কাউকে সুবিধা দেয়ার জন্য বা কাউকে জেল থেকে মুক্তির জন্য কোনো প্রস্তাব দেয়নি। যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, তা বাংলাদেশের জনগণের যা প্রয়োজন, সেই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন, সুন্দর প্রশাসন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, এই পয়েন্টগুলো আমরা দিয়েছি।’
অলি আহমদ বলেন, ‘আমরা পুরো জাতি জুলাই-আগস্টে একটা যুদ্ধের মধ্যে গেলাম। এই যুদ্ধটা করা হলো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা কেন হলো, কারণ তারা অন্যায়ভাবে পুলিশকে ব্যবহার করেছে। প্রশাসনকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছে। জনগণের সঙ্গে মুখোমুখি করেছে। দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে, দেশ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে।’
এলডিপি নেতা আরও বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে আমাদের বহু ছেলেমেয়ে হতাহত হয়েছে। দেড় হাজারের ওপরে আমাদের ছেলেমেয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। অনেকে বলে আরও বেশি হবে যার কোনো হিসাব নাই। অনেক লাশ পুড়িয়ে ফেলছে। ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ বিভিন্নভাবে আহত হয়েছে।’
১৯৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে অলি আহমদ বলেন, ‘জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করছিল, পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। সেদিন আমরা তাদের নিষিদ্ধ করেছিলাম। আজকে কী কারণে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। কারণ, আওয়ামী লীগ ১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।’
সংস্কার কমিশন নিয়ে অলি আহমদ বলেন, ‘সংস্কার কমিশন গঠন করলে হবে না, কমিশনকে রূপরেখা তৈরির দায়িত্ব দিতে হবে। এই রূপরেখা তৈরি করার পরে পুরো বাংলাদেশের যারা যারা বিশেষজ্ঞ আছেন, তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে নতুন করে খসড়া তৈরি করবে। খসড়া শেষে তারা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করবে। ওয়ার্কশপ শেষে তারা চূড়ান্ত করবে আগামীর বাংলাদেশে কী কী সংস্কার করবে। তারপর রাজনীতিবিদদের কাছে এই সংস্কার কপি দেয়া হবে। এর ওপর রাজনীতিবিদদের লিখিতভাবে মতামত দিতে হবে।’
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে কথা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে অলি আহমদ বলেন, ‘ঘরটা আগে বানাই, পরে চিন্তা করব কোন রুমে থাকব। এখন মাত্র ইট ঢালাই শুরু হয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে অলি আহমদের নেতৃত্বে এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল আলম তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
সংস্কারের ও নির্বাচনি রোডম্যাপ চায় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতারা। শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করে নির্বাচনি রোডম্যাপ (পথনকশা) প্রকাশ করতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। একই সঙ্গে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করারও অনুরোধ জানিয়েছেন জোটের নেতারা।
শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে জোটের পক্ষ থেকে ২৩টি লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। ওই প্রস্তাব নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ফরিদুজ্জামান।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অনেক নিহত ও আহত ব্যক্তির নাম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। তাদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে বিদেশে পাঠাতে হবে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। সিন্ডিকেট ভেঙে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের জন্য একজন সৎ, দক্ষ, কর্মঠ উপদেষ্টা নিয়োগ করতে হবে। প্রতি মাসে মন্ত্রণালয়ের কাজের অগ্রগতি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, আওয়ামী সরকারের দুর্নীতিবাজ দোসররা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তাদের দ্রুত অপসারণ করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হতে হবে। কোনো আনুপাতিক হার গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচিত সংসদে সংবিধান সংস্কার করতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানের বড় কোনো সংস্কার করবে না।
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের প্রস্তাবে আরও বলা হয়, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে এবং তাদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে, সেগুলো ফেরত আনতে হবে এবং পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
প্রস্তাবে আরও উল্লেখ করা হয়, পিলখানা হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারকাজ শেষ করতে হবে এবং নির্দোষ তৎকালীন বিডিআর সদস্যদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। বিজিবির নাম পরিবর্তন করে ‘বিডিআর’ নাম রাখতে হবে।
বাজার পরিস্থিতির উল্লেখ করে প্রস্তাবে বলা হয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও ওষুধের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বাতিল করতে হবে। বিচার বিভাগের জন্য স্বাধীন স্বতন্ত্র সচিবালয় গঠন করতে হবে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আয়োজিত সংলাপে অন্যদের মধ্যে অংশ নেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, গণদলের চেয়ারম্যান এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান এম এন শাওন সাদিকী, এনডিপির চেয়ারম্যান কারী আবু তাহের প্রমুখ।
ডাক পেল না জাপা
সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতৃত্বের পক্ষ থেকে দলটির ব্যাপারে আপত্তির কারণে তাদের সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। জাতীয় পার্টির নেতারা এবারের সংলাপে আমন্ত্রণ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকার কথা বলে আসছিলেন। শেষ পর্যন্ত সংলাপে ডাক পেল না দলটি।
জাতীয় পার্টি (এরশাদ) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু শনিবার বলেন, ‘সরকার হয়তো জাতীয় পার্টির মতামত নেয়া প্রয়োজন মনে করছে না, সে কারণে আমাদের সংলাপে ডাকেনি। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই বলে জানান জাপা মহাসচিব।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার শাসনের পতনের পর গত ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংলাপ হয়। সেই সংলাপে জাতীয় পার্টিকে ডাকা হয়। তবে এ দফায় এখনো দলটিকে আলোচনায় ডাকা হয়নি।
সরকারি সূত্রগুলো বলছে, ক্ষমতাচ্যূত আওয়ামী লীগের সহযোগী বা দোসর ছিল জাপা। সে কারণে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতৃত্বের পক্ষ থেকে দলটির ব্যাপারে আপত্তি আসে। সেটি বিবেচনায় নিয়েছে সরকার।
শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনে মিত্র বা সহযোগী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল জাতীয় পার্টি। দলটির নেতারা কখনো মন্ত্রিত্ব নিয়ে সরকারের অংশীদার হয়েছেন। কখনো সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে ‘গৃহপালিত’ উপাধিও পেয়েছিল জাপা।
সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও অংশ নিয়ে দ্বাদশ সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসেছিল দলটি। গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসনের পতনের পর জাতীয় পার্টির অতীত নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। এখন প্রধান উপদেষ্টার সংলাপে ডাক পাওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির সেই অতীত বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের শাসনে সহযোগিতা করার অভিযোগ অস্বীকার করে বক্তব্য দিচ্ছেন জাপা নেতারা। দলটির নেতারা বলছেন, তারা আওয়ামী লীগের দোসর ছিলেন না। তাদের দলের একটি অংশকে আওয়ামী লীগের পুরো শাসন আমলেই সুযোগ-সুবিধা দিয়ে হাতে রাখা হয়েছিল। যখনই জাপা সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করত, তখনই ওই অংশকে ব্যবহার করে দল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা হতো।
জাপার মহাসচিব বলেন, দলকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে তাদের যে ভূমিকা নিতে হয়েছিল, সে ব্যাপারে তারা ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
সংলাপে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে রাজনৈতিক দলগুলো -মাহফুজ আলম
অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগ ও তার শরিকদের নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশন গঠনে দ্রুত সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি ঠিক করবে কারা নির্বাচন কমিশনার হবেন। কমিশনাররা এসেই নির্বাচনের পরবর্তী কাজ শুরু করবেন। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সবকিছু গঠিত হবে।
শনিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
অংশীজনদের সঙ্গে চলমান সংলাপের অংশ হিসেবে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এ বিষয়ে মাহফুজ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দলগুলোর নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে কথা হয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের গণহত্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গণহত্যার উসকানিদাতা বিষয়সহ দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে কথা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইলেকশন কমিশন গঠনে দ্রুত সার্চ কমিটি হবে। পাশাপাশি হালনাগাদ ভোটার তালিকা হবে।
ভোরের আকাশ/রন