বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল-১৯ এর খেলোয়ার তৌফিক আহম্মেদের বিরুদ্ধে মা-বাবাকে মারধর সহ নানা হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে। এ হয়রানী থেকে বাঁচতে আদালতে তার ন্মা-বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। ছেলেকে ক্রিকেটার তৈরী করতে গিয়ে ঋণগ্রস্থ হয়ে এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
গোয়ালন্দ উপজেলার পশ্চিম উজানচর রমজান মাতুব্বর পাড়া গ্রামের মৃত আলী হোসেনের ছেলে ও তৌফিক আহম্মেদের বাবা মো. সিরাজুল ইসলাম আরজু বলেন, তিনি পেশায় একজন বাস চালক। দিন রাত পরিশ্রম করে অতি কষ্টে স্ত্রী, ২ ছেলে ও ২ মেয়েকে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। কষ্টের মধ্যেও তিনি ও স্ত্রী মোছা. বিউটি বেগম বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এবং বিভিন্ন আত্নীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে ছোট ছেলে মো. তৌফিক আহমেদকে (২৩) ক্রিকেট প্রশিক্ষণে ভর্তি করেন। জাতীয় পর্যায়ে অনুশীলনের সুযোগ করে দেন। বর্তমানে জাতীয় ক্রিকেট দল-১৯ এর একজন তালিকাভূক্ত খেলোয়ার। কিন্তু দুঃখের বিষয় তৌফিক জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরই বাড়ী সংলগ্ন মো. জহির শেখ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে পরিবারের অমতে ১৫ লক্ষ টাকা কাবিননামা করে নিজের মেয়েকে বিয়ে দেন। এরপর থেকে পুত্রকে ভূল বুঝিয়ে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। এখানেই শেষ নয় পুত্রের শ্বশুর জহির শেখ বিয়ের পর থেকেই আমার পরিবারের অন্যান্যদের উপর নানাভাবে জুলুম ও অত্যাচার করে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, তারা বিভিন্ন সময়ে আমাদেরকে মরপিট করে। এ ঘটনায় নিরুপায় হয়ে রাজবাড়ী ৩ নং আমলী আদালতে একটি মামলা (সি.আর-৭৮/২৩) দায়ের করি। আমার স্ত্রী মোছা. বিউটি বেগম বাদী হয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানার নন জি.আর (মামলা নং-৪/২৩) দায়ের করেন। এ মামলা দায়েরের পর পুত্রের শ্বশুর জহির শেখ, জিয়া শেখ, মোহাম্মদ শেখ ও পুত্র তৌফিক সহ অন্যান্যরা নানাভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। এ কারণে আমি বাদী হয়ে রাজবাড়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা (নং-মিসপি-৮৬৪/২৩) দায়ের করি। কিন্তু দাঙ্গাবাজ জহির শেখ সহ অন্যান্যদের ভয়ে স্থানীয় লোকজন সাক্ষী দিতে না আসায় মামলায় সাজা প্রদান সম্ভব হয়নি।
তৌফিক আহম্মেদের মা মোছা. বিউটি আক্তার বলেন, পুত্রের শশুর জহির শেখ, পুত্র তৌফিক সহ অন্যরা আমাদের উপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। তার বড় ছেলে তানভীর এবং বিবাহিত মেয়ে আন্নি ও অনিকাকেও মারপিট করে। তাদের শ্বশুরালয়ে বিভিন্ন প্রকার কুৎসা রটনা করে পুরো পরিবারকে বিষিয়ে তুলছে। আমরা এই ছেলেকে জাতীয় পর্যায়ে একজন ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে যেয়ে গোয়ালন্দ আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ২ লক্ষ টাকা, অগ্রণী ব্যাংক থেকে ২ লক্ষ টাকা এবং আশা, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন, শক্তি ফাউন্ডেশন সহ বিভিন্ন এনজিও থেকে ২৪-২৫ লক্ষ ঋণ নিতে হয়েছে। আমরা এতটাই হতভাগ্য যে, নিজের সন্তানকে প্রতিষ্ঠিত করতে যেয়ে আমরা এখন ব্যাংক ও এনজিওর মামলার আসামী। অথচ পুত্রকে জিম্মি করে জহির শেখ আমাদের উপর এখনও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা যে কোন সময় আমাদেরকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলবে বলে হুমকি প্রদর্শন করছে। আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। এ বিষয়টি নিয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি, রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
তৌফিক আহম্মেদের শশুর জহির শেখ বলেন, ওই পরিবারের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। তাদেরকে হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এটা ভিত্তিহীন। তবে জামাইয়ের মুঠোফোন নম্বর চাইলে বলেন, আমার কাছে নেই।
তৌফিক আহম্মেদের স্ত্রী জেরিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটা ভিত্তিহীন। তবে স্বামীর মুঠোফোন নম্বর চাইলে বলেন, আমার কাছে নেই।
ভোরের আকাশ/মি