logo
আপডেট : ২১ অক্টোবর, ২০২৪ ১৪:০৫
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ
শেয়ার দেওয়ার নাম করে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ
ঢাবি প্রতিবেদক

শেয়ার দেওয়ার নাম করে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ

জমি দেওয়ার নাম করে এক ব্যবসায়ীর ৪০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ-এর অভিযোগ উঠেছে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মুহাম্মদ আনিছুজ্জামানের বিরুদ্ধে। ব্যবসায়ী বলছেন আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সদস্য হওয়ায় সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এডভোকেট আনিছুজ্জামান।

অভিযোগকারী ব্যবসায়ীর নাম নাজমুল হুদা। তিনি এস এল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান। তিনি ২০২০ সালে রাজধানীর গুলশান নির্বাচনী এলাকার ভাসানটেক থানার নামাপাড়া এলাকায় ১৭ কাঠা জমির একটি প্লট কেনার জন্য বায়না সূত্রে মালিক এডভোকেট আনিছুজ্জামান ও তৎকালীন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ওবাইদুল হকের কাছে কয়েক দফায় ৪০ লক্ষ টাকা জমা দেন। জমির বায়না নামায় বায়না দলিলের দাতা হিসেবে এডভোকেট আনিছুজ্জামান ও ওবায়দুলের স্বাক্ষর রয়েছে।

জমির বায়না দলিলের কপি দৈনিক ভোরের আকাশের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, বায়নাসূত্রে জমির মালিক ওবায়দুল হক ও আনিছুসজ্জামান। তাদের দুজনেরই স্বাক্ষর রয়েছে। সেখানে প্রথম দফায় বায়না দলিল গ্রহিতা ব্যবসায়ী নাজমুল হুদার কাছ থেকে প্রথম দফায় ১০ লক্ষ টাকার বায়না নেওয়া হয় ২ মাস মেয়াদে। পরবর্তীতে বিভিন্ন মেয়াদে সর্বমোট ৪০ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে ওবায়দুল হক। সেখানে আনিছুজ্জামানের সম্মতি ছিলো।

ব্যবসায়ীর অভিযোগ বায়নার ২ মাসের মধ্যে জমির সম্পুর্ণ টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও করোনা মহামারিতে সেটি সম্ভব হয়নি। কিন্তু বায়না সূত্রে যে জমির মালিক ছিলো আনিছ ও ওবায়দুল সেই বায়নার মেয়াদ ৬ মাস হলেও তারা ১০ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর আশ্বাস দিয়ে তার থেকে টাকা নেয়। এরপর করোনা মহামারীর কারণে সম্পুর্ণ টাকা পরিশোধে দেরি হলে জমিটি বিক্রি হয়ে যায়। এতে করে জমির বায়নার টাকাটি আনিছ ও ওবায়দুলের কাছেই রয়ে যায়। অনেক বলার পরেও তাঁরা টাকা ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

পরবর্তীতে ১ বছর পার হয়ে গেলেও টাকা ফেরত না দিলে ব্যবসায়ী ডিবি অফিসে অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে ২০২১ সালের জুন মাসের ১৮ তারিখে এডভোকেট আনিছুজ্জামান এই কারবারির সাথে জড়িত থাকলেও ৩য় পক্ষ হয়ে নাজমুল হুদা ও ওবায়দুল হকের সাথে একটি আপোসনামা করে দেন এবং নিজেকে সেখান থেকে সরিয়ে নেন। আপোস নামায় একই জায়গায় ১৭ কাঠার মধ্যে ১০ কাঠার একটি বহুতল ভবনে ৪ ইউনিটের বাড়িতে ৩ টি শেয়ার দেওয়ার কথা বলা হয়।

আপোসনামার একটি কপি ভোরের আকাশের হাতে রয়েছে। সেখানে উক্ত বছরের ১০ আগস্টের মধ্যে বাড়িটির ৩ টি শেয়ার দেওয়ার কথা বলা হয়। সেখানে নাজমুল হুদাকে আরও দেড় লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু সেই শেয়ারও দিতে পারেননি আনিছুজ্জামান ও ওবায়দুল।

আপোসনামার কারণে পুর্বের জমির কারবারির আলোচনা বন্ধ হলেও শুরু হয় শেয়ার নিয়ে টালবাহানা। আনিছুজ্জামান আপোসনামা করে দিয়ে ওবায়দুল হক ও নাজমুল হুদার মধ্যে ব্যাপারটাকে সীমাবদ্ধ রাখলেও শেয়ার নিয়ে নাজমুল হুদার সাথে সকল ধরণের আলোচনা চালিয়ে যান আনিছুজ্জামান।

নাজমুল হুদা ও আনিছুজ্জামানের হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের একাধিক স্ক্রিনশট ভোরের আকাশের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, এডভোকেট আনিছুজ্জামান বার বার শেয়ার দেওয়ার কথা বলছেন এবং তারিখ পরিবর্তন করছেন। এই সপ্তাহে নয় পরের সপ্তাহে, ওবায়দুল হকের সাথে মিটিং করতে হবেসহ নানা ধরণের কথা বার্তা চালিয়ে গেলেও শেয়ার দিতে ব্যর্থ হন।

ব্যবসায়ী নাজমুল হুদা বলেন, 'আওয়ামী ক্ষমতাবলে তিনি প্রভাব খাটিয়ে আজও আমার টাকা পরিশোধ করেননি। আমি সিএমএম কোর্টে মামলাও করেছি। তাতেও এখনও পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি। এখন তিনিই আমাকে নানা হুমকি-ধামকি আর মামলার ভয় দেখাচ্ছেন।

তিনি বলেন, '৪০ লক্ষ টাকা দীর্ঘ ৪ বছর যাবৎ সেখানে আটকে আছে। আমি না পেয়েছি জমি, না পেয়েছি শেয়ার। আমি এর ক্ষতিপূরণও চাইনি। আমার ৪০ লক্ষ টাকা দিয়ে দিলে আমি মামলাও তুলে নিবো বলেছি। তবুও তারা টাকা দিচ্ছে না।'

অভিযোগের বিষয়টি সম্পুর্ণ অস্বীকার করেছেন এডভোকেট আনিছুজ্জামান। তিনি বলেন, নাজমুলের বিরুদ্ধে আমি আমার স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগে কোর্টে মামলা করেছি। এই বিষয়টা কোর্ট বুঝবে। আমার সাথে তার টাকা পয়সার কোনো লেনদেন হয়নি।

আনিছুজ্জামানের অভিযোগ, নাজমুল তার স্বাক্ষর নকল করে একটি বায়না নামা তৈরি করেছে কিন্তু তিনি কোনো নথি বা কাগজ প্রদান করতে পারেননি।

স্বাক্ষর নকলের বিষয়ে নাজমুল হুদা বলেন, 'কোর্টে তারা বলছে আমি ৯০ লক্ষ টাকার একটা নকল বায়না নামা করেছি। কিন্তু আমার মামলাই তো ৪০ লক্ষ টাকার। ঐ বায়নানামা বানিয়ে তো তাহলে আমার লাভ নেই। এটা আনিছের চালাকি। আইনের মার প্যাচে আমাকে ফেলার চেষ্টা করছে।'

এ বিষয়ে ওবায়দুল ইসলামের সাথেও কথা হয় দৈনিক ভোরের আকাশের। তিনি বায়নার ৪০ লক্ষ টাকা ও আনিছুজ্জামানের সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করলেও টাকা বিভিন্ন মেয়াদে পরিশোধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, কয়েক দফায় তার টাকা পরিশোকরে দেওয়া হয়েছে।

তবে পরিশোধের পরেও শেয়ার নিয়ে আলোচনা কেন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে আপোসনামা করে আনিসুজ্জামান যে এই কারবারি থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়ে নাজমুল ও তাকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন এই বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন।

 

ভোরের আকাশ/রন