logo
আপডেট : ২১ অক্টোবর, ২০২৪ ১৬:২১
ট্রাম্পের সমর্থনে ইলন মাস্কের ১০ লাখ ডলারের লটারি এবং মার্কিন গণতন্ত্র
অনলাইন ডেস্ক

ট্রাম্পের সমর্থনে ইলন মাস্কের ১০ লাখ ডলারের লটারি এবং মার্কিন গণতন্ত্র

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনে বিশাল অর্থ বরাদ্দ করেছেন টেক বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক। তাঁর ট্রাম্প-সমর্থক রাজনৈতিক কমিটি ‘আমেরিকা প্যাক’-এর আওতায় দোদুল্যমান রাজ্য পেনসিলভানিয়ায় প্রতিদিন একজন নিবন্ধিত ভোটারকে ১০ লাখ ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এই কর্মসূচি আগামী ৫ নভেম্বর নির্বাচন পর্যন্ত চলবে। শনিবার পেনসিলভানিয়ার এক টাউন হলে প্রথম বিজয়ীর হাতে লটারি-স্টাইলের চেক তুলে দিয়ে মাস্ক কার্যক্রমের সূচনা করেন।

‘আমেরিকা প্যাক’ এর সংবিধানপন্থি একটি পিটিশনে সই করা নিবন্ধিত ভোটারদের মধ্য থেকে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে বিজয়ী নির্বাচিত করা হচ্ছে। পিটিশনে লেখা রয়েছে, “সংবিধানের প্রথম এবং দ্বিতীয় সংশোধনীতে বাকস্বাধীনতা ও অস্ত্র বহনের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। আমি আমার সমর্থন নিশ্চিত করছি।” পেনসিলভানিয়ার যে কোনো নিবন্ধিত ভোটার, রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট, এই পিটিশনে সই করতে পারেন।

দ্য গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাস্কের এই উদ্যোগ ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা থাকা ভোটারদের শেষ মুহূর্তের প্রচারে সামিল করতে উৎসাহিত করছে। মাস্ক এ পর্যন্ত এই প্রচারে ৭৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন।

তবে, মাস্কের এই উদ্যোগের আইনি বৈধতা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। নির্বাচনী আইন বিশেষজ্ঞ রিক হাসেন অভিযোগ করেছেন, ভোটারদের টাকার প্রলোভন দেওয়া ফেডারেল আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি বলেন, “কেউ ভোটের নিবন্ধনের জন্য অর্থ দিলে বা প্রস্তাব দিলে তার শাস্তি হতে পারে।”

এদিকে, পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জোশ শাপিরো এবং কমলা হ্যারিসের সমর্থকরা এই উদ্যোগকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শাপিরো বলেন, নির্বাচনের আগে এই ধরনের অর্থ বিতরণের বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তত্ত্বাবধান করা উচিত।

মাস্কের এই উদ্যোগের মাধ্যমে ট্রাম্পের সমর্থনে যারা সাধারণত ভোট দেন না, তাদের ভোটার নিবন্ধনে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ভোটারদের আমেরিকা প্যাকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে, যাতে ভোটের বিষয়ে কমিটি তাদের সঙ্গে কাজ করতে পারে।

ইলন মাস্কের এই পদক্ষেপ নির্বাচনী প্রচারে বড় ভূমিকা রাখলেও বিতর্ক এবং আইনি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। তা সত্ত্বেও, পেনসিলভানিয়ার ভোটারদের আকৃষ্ট করতে এবং নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলতে এটি একটি কৌশলী পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ইলন মাস্কের এই ধরনের উদ্যোগ আমেরিকান গণতন্ত্রের সাথে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। নির্বাচনী আইন বিশেষজ্ঞ রিক হাসেনের মতে, ভোটারদের টাকার প্রলোভন দেওয়া ফেডারেল আইনের লঙ্ঘন এবং এটি মার্কিন গণতন্ত্রের মৌলিক নীতির বিপরীত। তিনি বলেন, "এই ধরনের পদক্ষেপ ভোটারদের প্রভাবিত করার একটি সরাসরি প্রচেষ্টা, যা ভোটের স্বাধীনতা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য হুমকিস্বরূপ।"

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইন অনুসারে, কাউকে ভোটের জন্য অর্থ প্রদান বা এর প্রতিশ্রুতি দেওয়া অবৈধ। এই ধরনের পদক্ষেপ নির্বাচনের পবিত্রতা নষ্ট করতে পারে এবং ভোটারদের মধ্যে আর্থিক প্রলোভন তৈরি করতে পারে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং ন্যায্যতার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।

অন্যদিকে, কিছু সমর্থক যুক্তি দেন যে মাস্কের এই উদ্যোগ ভোটারদের বাকস্বাধীনতা এবং তাদের সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি সচেতন করে তোলার একটি কৌশল মাত্র। তাদের মতে, এটি একটি প্রচারণা কৌশল, যা রাজনৈতিক সমর্থনকে শক্তিশালী করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এটি ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ জাগাতে কার্যকর হতে পারে।

তবে, গণতন্ত্রের বিশুদ্ধতা বজায় রাখতে এমন পদক্ষেপ বিতর্কিত। পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জোশ শাপিরো এবং কমলা হ্যারিসের সমর্থকরা এই ধরনের উদ্যোগকে 'গভীর উদ্বেগজনক' বলে অভিহিত করেছেন। শাপিরো বলেন, "এটি আমেরিকান গণতন্ত্রের মূল আদর্শের পরিপন্থী এবং ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। নির্বাচনের আগে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর এই ধরনের কর্মকাণ্ড তত্ত্বাবধান করা উচিত।"

সংক্ষেপে, মাস্কের এই উদ্যোগ আমেরিকান গণতন্ত্রের সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ তা নিয়ে বিতর্ক আছে, এবং বিশেষজ্ঞদের মতে এটি গণতন্ত্রের পবিত্রতা ও স্বাধীনতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

 

ভোরের আকাশ/রন