তৈরি পোশাক শিল্পের মাধ্যমে যে আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে সেকথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই শিল্পের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানিতে যে ধস নেমেছিল। এতে করে গার্মেন্টস শিল্পের সাম্প্রতিক অস্থিরতায় ৪০ কোটি ডলারের উৎপাদন ক্ষতি হয়েছে। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের শুরুতে শ্রমিক বিক্ষোভের সময় প্রধান শিল্প অঞ্চলগুলোর পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এতে কিছু গ্রীষ্মকালীন অর্ডার ইতোমধ্যে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে চলে গেছে। বিদেশি অনেক ক্রেতা অর্ডার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে নিয়ে গেছে। তারল্য সংকট, মার্কিন ডলার সংকট ও গ্রাহকের টাকা পরিশোধের সক্ষমতা কমায় কিছু ব্যাংক ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছে না। এতে পোশাক ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়লেও অচিরেই তা কেটে যাবে বলে জানিয়েছেন পোশাক ব্যবসায়ীরা। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ক্রেতাদের মনে আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। পোশাক শিল্পে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। ফলে তৈরি পোশাকের বাজারে যে ধস নেমে এসেছিল তা অচিরেই কেটে যাবে বলে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গতকাল দৈনিক ভোরের আকাশে প্রকাশিত খবরে সেই ইঙ্গিতই দিয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস। এতে বলা হয়েছে, স্থানীয় পোশাক ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় পশ্চিমা ক্রেতারা এখন কারখানা পরিদর্শন ও উৎপাদনের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছে। আসন্ন মৌসুমের অর্ডারের ওপর নির্ভর করবে পোশাকশিল্পের ভবিষ্যৎ। শনিবার রাজধানীর উত্তরায় নিজ কার্যালয়ে পোশাকশিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম একথা জানিয়েছেন। পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমএ কমপ্লেক্সে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পণ্য লোডিং ও আনলোডিংয়ে অহেতুক সময়ক্ষেপণ বন্ধ করা এবং এ ক্রান্তিকালে পরবর্তী তিন মাসের জন্য কারখানার ইউটিলিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা, পোশাক খাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রণোদনা পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনা করা, ঝুটসহ অন্যান্য রিসাইকেলিং উপযোগী বর্জ্য অপসারণকে বাইরের প্রভাবমুক্ত রাখা ও শিল্পে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কঠোর আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বিজিএমইএর সভাপতি। পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে পোশাক খাত বর্তমানে ‘স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে’ মন্তব্য করে রফিকুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কিছু কার্যাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোতে স্থানান্তরিত হয়েছে। তবে বর্তমানে স্থিতিশীলতা ‘পুনরুদ্ধার হওয়ায়’ আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো আবার ফিরে আসছে বলে দাবি করেন তিনি। তৈরি পোশাক শিল্পের চলমান সংকট নিরসনে উপরোক্ত দাবি দাওয়া মেনে নিয়ে এই শিল্পের উন্নযন ও অগ্রযাত্রায় সরকার কাজ করবে সেই বিশ্বাস আমাদের রয়েছে। গ্যাস সংকট ও লোডশেডিংয়ের কারণে তাদের সুতা উৎপাদন ৫০ শতাংশ কমে গেছে। গার্মেন্টস অর্ডার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সুতার চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ একটি বড় বাধা হতে পারে।
দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে তৈরি পোশাক শিল্পের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এ শিল্প খাত থেকে রপ্তানি আয়ের সিংহভাগই অর্জিত হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন, অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্বের চাপ রোধ এবং অধিক বৈষষিক সমৃদ্ধি লাভের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটাতে তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মতৎপরতার মেরুদণ্ড এ পোশাক শিল্প আজ নানামুখী সমস্যার জর্জরিত। কর্তামান প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আর এর জন্য অবশ্যই সুষ্ঠু পরিকল্পনা, নীতিমালা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অতি জরুরি।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অপর একটি সমস্যা হলো অনুন্নত অবকাঠামো। বাংলাদেশের রাস্তাঘাট, কালভার্ট, হাসপাতাল প্রভৃতির অবস্থা যথেষ্ট নাজুক। তাছাড়া রয়েছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য প্রয়োজনীয় বন্দরজনিত অব্যবস্থাপনা ও বন্দরের অভাব। পণ্য খালাস করতে বিদেশি জাহাজগুলোকে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করার পর বন্দর থেকে তা খালাস করতে এক শ্রেণির কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানির শিকার হতে হয়। এক হিসেবে দেখা যায়, বাংলাদেশের কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারীর ৮০ ভাগই অনৈতিক কাজে জড়িত। এরূপ অব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করছে।
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পে বিদ্যমান সমস্যা থেকে উত্তরণে আশু সুপারিশসমূহ: বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শিল্প হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প। তাই এ শিল্পকে উত্তরোত্তর উন্নতি ও বিকশিত করতে হলে এর সমস্যার সমাধান অতি জরুরি। সরকার সেই লক্ষ্যে উদ্যোগ নিবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি।
ভোরের আকাশ/রন