বাংলাদেশ রেলওয়ের জমি ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ক্ষমতাবানদের চোখের সামনে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ একে অপরের সঙ্গে কথা বলবে জানিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে চলেছেন, মিলছে না সুনির্দিষ্ট জবাব।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালে দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশন উঁচুকরণ রি মডেলিং করবে মর্মে ২নং প্ল্যাটফর্মের ভিতরে দোকানগুলো প্ল্যাটফর্মের বাহিরে স্টেশন এর অফিস ওয়াল ঘেঁষে এবং পার্কিং এলাকায় নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে দোকান ঘরগুলো বসানো হয়। এমনিতেই প্ল্যাটফর্মের বহির্বিভাগ ছোট পরিসরের এর মধ্যে দোকান ঘরগুলো বসানোর ফলে আরও সংকুচিত ও ছোট হয়ে গেছে। বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া ও আসা মারাত্মক ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছে।
রেলওয়ে জমি ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, যেখানে ট্র্যাফিক জায়গার দোকানগুলো অবৈধভাবে স্থানান্তর করে স্টেটের জায়গায় বসানো হয়েছে। কোনো অনুমোদন বা ভাড়া চুক্তি ছাড়াই এই স্থানান্তর ঘটানো হয়েছে বলে জানা গেছে। অথচ বিষয়টি রেলওয়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের নজরদারিতে থাকা সত্ত্বেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ের ট্র্যাফিক এলাকার দোকানগুলোকে অবৈধভাবে দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশন বহির্বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে, যার জন্য কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এই প্রক্রিয়ায় কোনো ভাড়া চুক্তিও হয়নি, যা রেলওয়ে আইন ও বিধানগুলোর সরাসরি লঙ্ঘন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় রেলওয়ের কিছু প্রভাবশালী কর্মকর্তা এই দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
দোকান স্থানান্তরের এই অনিয়মের বিষয়ে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের নিরবতা লক্ষ করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজশাহী প্রধান কর্মকর্তা (সি.সি.এম) সুজিদ কুমার বিশ্বাস, লালমনিরহাট ডিভিশনাল ট্র্যাফিক কমার্সিয়াল ও ডিভিশনাল ট্র্যাফিক কর্মকর্তা (ডি.সি.ও), (ডি.টি.ও) আব্দুল্লাহ আল মামুন, বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা (ডি.ই.ও), সহকারী ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা (এ.ই.ও) এম.এ রাজ্জাক এর মত গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই।
স্টেশন মাস্টার শুখান পুকুর ও দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশন অতিরিক্ত দায়িত্বে ভারপ্রাপ্ত এসএসএর নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, রাজশাহী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা (সি.সি.এম) এর নির্দেশে প্ল্যাটফর্মের ভিতরের দোকানগুলোকে বহির্বিভাগে স্থানান্তর বসানো হয়েছে।
সুজিদ কুমার বিশ্বাস (সি.সি.এম) জানান, স্টেশন রি মডেলিংয়ের জন্য দোকানগুলোকে বহির্বিভাগে নেওয়া হয়েছে। ট্র্যাফিক-বাণিজ্যিক বিভাগের দোকান গুলিকে রেলওয়ে স্টেট এলাকায় বসানোর ক্ষেত্রে কোনো আলোচনা বা চুক্তিপত্র হয়েছে কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এই সব বিষয়ে (ডি.সি.ও) ও (ডি.টি.ও) আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে কথা বলেন।
কর্মকর্তাকে মোবাইল করলে একজন মহিলা ফোন রিসিভ করে বলেন, স্যার একটু বাহিরে আছে।
বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা (ডি.ই.ও) দেবেন্দ্র দেবকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
সহকারী ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা (এ.ই.ও) এম এ রাজ্জাককে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, দোকান স্থাপনের ব্যাপারে ভূসম্পত্তি (স্টেট) এর সঙ্গে কোনো প্রকার চুক্তি করা হয়নি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমাদের বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও কেন আমাদের দোকানগুলো অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে, তার কোনো সঠিক উত্তর আমরা পাইনি। এটা স্পষ্টতই ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি। আমরা ন্যায় বিচার চাই। রেলওয়ের সম্পত্তির এই অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রেলওয়ের এই অনিয়ম তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারি সম্পত্তি ব্যবহারের এই ধরনের অপব্যবহার শুধু রেলওয়ের রাজস্ব ক্ষতিই করে না, বরং জনস্বার্থও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ভোরের আকাশ/রন