কালের বিবর্তনে কমে যাচ্ছে ছোট ছোট নদী-নালা, খাল-বিল ও জলাশয়। সেইসাথে হারাতে বসেছে একসময়ের ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার বাউত উৎসব। তবে ঐতিহ্য ধরে রাখতে গত রোববার শেরপুরের শ্রীবরদীতে বাউত উৎসবে দলবেঁধে মাছ ধরতে নামেন স্থানীয় মানুষ। শ্রীবরদী উপজেলার তাঁতীহাটি নয়াপাড়া মৃগী বিলে প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দিনব্যাপী মাছ ধরার জন্য মানুষের ঢল নামে। এতে বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ মাছ ধরতে এসে আনন্দে মেতে উঠেন।
জানা যায়, নানাভাবে প্রচারণা চালিয়ে নির্ধারিত তারিখে নির্দিষ্ট বিল অথবা জলাশয়ে অগণিত মানুষ মাছ ধরা ‘বাউত উৎসব’ নামে পরিচিত। বন্যা ও প্রয়োজনীয় মাছ না থাকায় গত ৫-৭ বছর ধরে শেরপুরে মাছ ধরার বাউত উৎসব ছিল না। কিন্তু এ বছর বন্যা ও প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় জেলার বিভিন্ন বিল ও জলাশয়ে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার বাউত উৎসব শুরু হয়েছে।
হেমন্তকালে বিশেষত কার্তিক মাসে এ উৎসব শুরু হয়। সাধারণত এসময় খাল-বিলের পানি কমে হাঁটু সমান চলে আসে। বাউতের আয়োজন করে সাধারণত বিলপাড়ের মানুষ। মৃগী, বৈশা, ইছলি, চেল্লাখালি সহ বিভিন্ন বিলে একসময় চলতো বাউত উৎসব। গত রোববার শ্রীবরদী উপজেলার মৃগী বিলে মাছ ধরার পলো, ছিপজাল, হাতজালসহ মাছ ধরার নানা উপকরণ নিয়ে বাউত উৎসবে যোগ দেন হাজারও মানুষ। প্রচারণা শুনে পলো, জাল, টেটা নিয়ে হাজির ছোট, বড়, শিশু-বয়স্ক সবাই।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, শিশু বয়স থেকে তারা এই উৎসব দেখে আসছেন। তবে এখন খাল-বিলে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। তারপরও ঘোষণা শুনে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন দলবেঁধে ছুটে এসে হইহুল্লোড়, চিৎকার, আনন্দ-উল্লাসের মাধ্যমে মাছ শিকার করেন। এটা দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য, এর আনন্দই অন্য রকম।
বিভিন্ন বিলগুলো লিজ দেওয়ায় মাছ ধরার উৎসবগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। তাই এসব বিল লিজ না দেওয়ার দাবি স্থানীয় সচেতন মহলের। সেইসাথে আয়োজকদের কাছে ঐতিহ্যবাহী বাউত উৎসব যেন চলমান থাকে, এই দাবিও জানান।
ভোরের আকাশ/রন