logo
আপডেট : ২৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১০:৪৬
রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে দায়িত্বশীলদের সাংঘর্ষিক বক্তব্য
নিখিল মানখিন

রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে দায়িত্বশীলদের সাংঘর্ষিক বক্তব্য

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ বা অপসারণে সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি নিয়ে সরকার, সমন্বয়ক ও ছাত্র-জনতার মধ্যেই ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ পাচ্ছে। রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ বিষয়ে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। কিন্তু সরকারের কয়েক উপদেষ্টার বক্তব্যে পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রপতির প্রতি অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। রাষ্ট্রপতির থাকা না থাকা সাংবিধানিক নয়, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। রাষ্ট্রপতি শপথ লঙ্ঘন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। আর তার বক্তব্য সমর্থন করেছে সরকার। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে সমন্বয়ক ও ছাত্র-জনতার কর্মসূচি পালনেও সাংঘর্ষিক অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একই দাবিতে একই দিন বিকেলে শহীদ মিনারে গণজমায়েত কর্মসূচি করে রাতে বঙ্গভবনের সামনে থেকে আন্দোলনাকারীদের সরে যেতে বললেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। বঙ্গভবনের সামনে আন্দোলনকারীরা কারা তা জানি না বলেও মন্তব্য করেছেন সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান বজায় রাখা নিয়ে গত মঙ্গলবার রাতে দুটি পক্ষ তৈরি হয়। রাত ১১টার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে দুই দিন সময় চেয়ে তাদেরকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তাদের বলার পরও প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে অবস্থান করেন ছাত্র-জনতার একটি অংশ।

এরপর রাত পৌনে ১২টার দিকে একটি পক্ষ সেই এলাকা ত্যাগ করলেও আরেকটি পক্ষ রাতের মধ্যেই পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে থাকে।

সে সময় রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের একাংশের নেতা তারেক রহমান ও তার অনুসারীরা।

এর আগে রাত ১০টার পর আরেক সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদও আন্দোলনকারীদেরকে সরে যেতে অনুরোধ করেছিলেন। বঙ্গভবনের সামনে কারা আন্দোলন করছে জানি না এবং তারা আমাদেরকে সেনাবাহিনীর মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আব্দুল হান্নান। কিন্তু পরক্ষণে তাকেও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে মাঠে নামে। গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে এই দাবিতে একটি পক্ষ বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার পদত্যাগ দাবি করে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে আরেকটি পক্ষ ৪৮ ঘণ্টার সময় দেয়।

সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ চলে যাওয়ার পর গণঅধিকার পরিষদের একাংশের নেতা তারেক রহমান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ এসেছিলেন এখান থেকে সবাইকে সরিয়ে নিতে। আমরা বলেছি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে চুপ্পু না গেলে আমরাও যাব না। তারা আমাদের বলেছে ভেতরে গিয়ে মিটিং করতে হবে। তবে আমরা মিটিংয়ে যাইনি। চুপ্পুর বাসভবনের সামনে আমরা মার খেয়েছি, আমরা এখানে বিএনপি আছি, জামায়াত আছি, ব্যবসায়ীরা আছে, সাধারণ ছাত্ররা আছে। চুপ্পু না গেলে আমরা যাব না।’

সরকার ও সমন্বয়কদের সাংঘর্ষিক বক্তব্য
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস আলম বঙ্গভবনের সামনে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সঙ্গে কথা বলেন। সময় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বুধ ও বৃহস্পতিবারের মধ্যেই নতুন রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, পরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে কে আসবে।

সারজিস আলম বলেন, আমরা আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিনকে সময় দিয়েছি। এর মধ্যে এই ঘটনার সুরাহা হবে।

গতকাল বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার বাইরে হওয়া এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের অপসারণ ইস্যুতে এখনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরফ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

গতকাল সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন থাকবেন কী থাকবেন না, এই প্রশ্নটি এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আইনি বা সাংবিধানিক কোনো প্রশ্ন নয়। এটি একেবারেই একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।

পদত্যাগে ভিন্ন ভিন্ন আলটিমেটাম
গত মঙ্গলবার বিকেলে রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবিতে বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন ছাত্র-জনতা। রাতে ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভকারীদের কেউ বঙ্গভবনের গেটের কাছে যেতে পারেননি। তবে ব্যারিকেডের উল্টো পাশেই অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় তারা রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভকারীরা একাধিক ব্যানারে সেখানে অবস্থান করেন। বিক্ষোভকারীদের বিভিন্ন অংশ নিজেদের মতো করে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য আলটিমেটাম (সময় বেঁধে দেওয়া) দেন। কেউ আধা ঘণ্টা, কেউ এক ঘণ্টা, কেউ ছয় ঘণ্টা, কেউবা ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেওয়ায় সেখানকার পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। গত রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এ অবস্থা চলে।

এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় শহীদ মিনারে গণজমায়েত কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগে ৪৮ ঘণ্টা আলটিমেটাম ঘোষণা করেন সংগঠনটির নেতারা।

রাষ্ট্রপতি ইস্যুর সূত্রপাত
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে মন্তব্য করে বেশ চাপে পড়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। একটি গণমাধ্যমের একজন সাংবাদিককে সাক্ষাৎকারে তার দেওয়া বক্তব্য নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় চলছে। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও ক্ষুব্ধ। অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টা গণমাধ্যমের সামনে রাষ্ট্রপতি মন্তব্য নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। রাষ্ট্রপতি ‘মিথ্যাচার’ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করে গত সোমবার থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কর্মসূচি শুরু করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন। গত মঙ্গলবার বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি এবং জাতীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে গণজমায়েত। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবির মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগের ইস্যুটি আলোচনার বাইরে চলে গেছে।

 

ভোরের আকাশ/রন